জেন-জি আন্দোলন দেখিয়ে দিল, সোশ্যাল মিডিয়া যেমন শক্তি জোগায়, তেমনি তৈরি করে সংকটও

নেপালের এক রাজনীতিবিদের মেয়ের বিয়ের আয়োজন রাগিয়ে দিয়েছিল আদিত্যকে। ২৩ বছর বয়সী আদিত্য নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ফিড স্ক্রল করতে গিয়ে দেখতে পান, সেই হাই প্রোফাইল রাজনীতিবিদের মেয়ের বিয়ের জন্য ভক্তপুর শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যে একটি বিষয় আদিত্যকে সবচেয়ে বেশি রাগিয়ে দিয়েছে সেটি হলো, সেসময় ভিআইপিদের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক বন্ধ রাখা। সেই ভিআইপি অতিথিদের মধ্যে নেপালের প্রধানমন্ত্রীও ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে সেখানে কারা ছিলেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে অবশ্য সেই রাজনীতিবিদ সেদিন রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার করেননি বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু আদিত্যের মন ততদিনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
তার কাছে পুরো ব্যাপারটি 'অগ্রহণযোগ্য' হয়ে দাঁড়ায়।

পরবর্তী কয়েক মাসে সে লক্ষ্য করল আরও অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তাদের সন্তানরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করছেন—যেখানে তাদের বিলাসবহুল ছুটির ট্রিপ, বিশাল বাড়ি, সুপারকার এবং ডিজাইনার হ্যান্ডব্যাগ—এসব উঠে আসে।
সেসব ছবির মধ্যে এক প্রদেশের মন্ত্রী, সওগাথ থাপার ছেলের ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। সে ছবিতে ছেলের চারপাশে লুই ভুটন, গুচি, কার্টিয়ার এবং ক্রিশ্চিয়ান লুবউটিনের উপহারের স্তূপ। আর চারদিকে আলো ঝলমল করছে ও সবার উপরে সান্তাক্লজের হ্যাট রাখা।
অনলাইনে এসব দেখে ও পড়ে আদিত্য ও তার বন্ধুরা গত ৮ সেপ্টেম্বর আরও হাজার হাজার তরুণের সঙ্গে সেদিন কাঠমাণ্ডুর রাস্তায় আন্দোলনে যোগ দেয়।
দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়তে থাকে। এতে কয়েকজন নিহতও হন।
এর পরেরদিন পার্লামেন্ট দখল করে নেয় ও সরকারি ভবনগুলোতে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন।
এসব ঘটনায় প্রায় ৭০ জন নিহত হন।
এটি এমন একটি পরিবর্তনের উন্মাদনার অংশ, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
এমন প্রতিবাদ ইন্দোনেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তেমনি গত রোববার ফিলিপাইনের মেনিলাতেও লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেছে।
এ আন্দোলনগুলো মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হলো―এগুলো পরিচালনা করছেন জেন-জি'রা।
এসব অঞ্চলের সরকাররা বলছে এসব আন্দোলনগুলো অগ্রহণযোগ্য মাত্রার সহিংসতায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু আদিত্যর মতো তরুণরা মনে করেন, এটি নতুন যুগের প্রতিবাদী শক্তির সূচনা।
ইন্দোনেশিয়ার পাশাপাশি গত বছর বাংলাদেশে হওয়া ছাত্র আন্দোলন ও ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় সরকার উৎখাত আন্দোলন অনুপ্রাণিত করেছে আদিত্যকে। তিনি বলেন, সবাই একই বিষয়ের জন্য দাঁড়ায় আর সেটি হলো 'আমাদের জাতির কল্যাণ ও উন্নয়ন'।

তিনি বলেন, 'আমরা শিখেছি যে আমরা—এই প্রজন্মের ছাত্র ও যুবকরা—যা ইচ্ছা তা করতে পারি।'
'নেপো কিডস'দের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া
রাগের অনেকটাই কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে তথাকথিত 'নেপো কিডস'-এর ওপর। তরুণরা মনে করে, এ নেপো কিডসরা তাদের সুপরিচিত ও প্রভাবশালী মা-বাবার খ্যাতি ও প্রভাবের সুবিধা নিচ্ছে এবং এসব মা-বাবাদের অধিকাংশই প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক বা সামাজিক ব্যক্তিত্ব।
অনেক আন্দোলনকারীর মতে 'নেপো কিডস'রা গভীর দুর্নীতির প্রতীক।
যাদের বিরুদ্ধে এধরণের অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের অনেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সাওগাত থাপা বলেন, তার পরিবার দুর্নীতিগ্রস্থ এটি 'একটি অন্যায় ব্যাখ্যা'। তবে অন্যরা চুপচাপ রয়েছেন।
কিন্তু এর পেছনে মূলত সামাজিক বৈষম্য এবং সুযোগের অভাবের প্রতি অসন্তোষ লুকিয়ে আছে।
এসব দেশে দারিদ্র্য এখনও একটি স্থায়ী সমস্যা, যেখানে সামাজিক গতিশীলতাও কম।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে দুর্নীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস করে এবং বৈষম্যকে আরও গভীর করে। জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম দপ্তর অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ায় দুর্নীতি দেশের উন্নয়নে জন্য একটি বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।
বছরের শুরু থেকে সেখানে বিভিন্ন প্রতিবাদ হয়েছে―সরকারী বাজেট কাটা, বেতন আটকে থাকা এবং অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের কারণে। আগস্টে, আইনপ্রণেতাদের আবাসন সুবিধা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।

অনলাইনে হ্যাশট্যাগ প্রচারিত হতে দেখা যায়—#ইন্দোনেশিয়াগেলাপ (অন্ধকার ইন্দোনেশিয়া) এবং # কাবুরআজাদুলু (এখনই পালিয়ে যাও)—যা মানুষকে অন্য কোথাও সুযোগ খুঁজতে উৎসাহিত করছিল।
২২ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জিকরি আফদিনেল সিরেগার উত্তর সুমাত্রার বাসিন্দা। এই মাসের শুরুতে স্থানীয় আইনপ্রণেতাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেন। আইনপ্রণেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা প্রতি মাসে ৬০ মিলিয়ন রুপিয়া (প্রায় ২,৬৭০ পাউন্ড) আবাসন ভাতা পাচ্ছিলেন—যা গড় আয়ের প্রায় ২০ গুণ।
রিয়াউ প্রদেশে বাড়িতে জিকরির বাবা-মা একটি ছোট রাবারের বাগান চালান এবং অন্যদের জমিতে কৃষিকাজ করেন। এ থেকে তাদের প্রতি মাসে প্রায় ৪ মিলিয়ন রুপিয়া (১৭৮ পাউন্ড) আয় হয়।
তিনি নিজের শিক্ষাবর্ষের ফি এবং জীবনের খরচ মেটাতে মোটরসাইকেল ও ট্যাক্সি চালকের কাজ করছেন।
তিনি বলেন, 'এখনও অনেক মানুষ রয়েছে যারা মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, বিশেষ করে খাবার কেনার টাকা পাচ্ছেন না। কিন্তু অন্যদিকে, কর্মকর্তারা আরও ধনী হচ্ছেন, এবং তাদের ভাতাও আরও বাড়ছে।'
নেপাল, যা এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র দেশ, সেখানে যুবকদের মধ্যে একই ধরনের হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। তারা এ সিস্টেমকে অন্যায় হিসেবে দেখেন।
দুই বছর আগে, একটি ঘটনা যা দেশকে শোকাহত করেছিল। সেসময় এক যুবক উদ্যোক্তা পার্লামেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। তিনি সুযোগের অভাবকে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
টিকটক ও এআই-এর ব্যবহার
নেপালে প্রতিবাদ শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে, সরকার বেশিরভাগ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কারণ তারা নিবন্ধন সময়সীমা মেনে চলেনি।

সরকার দাবি করে, এটি মিথ্যা সংবাদ এবং ঘৃণাসূচক বক্তব্য মোকাবেলার জন্য ছিল। কিন্তু অনেক নেপালি তরুণ একে তাদের দমনের চেষ্টা হিসেবে দেখেছিল।
আদিত্য তাদের মধ্যে একজন ছিলেন।
সে ও তার চার বন্ধু কাঠমান্ডুর একটি লাইব্রেরিতে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারে বসে এআই প্ল্যাটফর্মগুলো—চ্যাটজিপিটি, গ্রক, ডিপসিক ও ভিড—ব্যবহার করে 'নেপো কিডস' এবং দুর্নীতি নিয়ে ৫০টি সোশ্যাল মিডিয়া ক্লিপ তৈরি করেছিল।
পরবর্তী কয়েক দিনে তারা ভিডিওগুলো পোস্ট করেছিল। বেশিরভাগই তারা টিকটকে পোস্ট করেছিল। তারা শনাক্ত হওয়া এড়াতে একাধিক অ্যাকাউন্ট এবং ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করেছিল। তারা তাদের গ্রুপের নাম দিয়েছিল 'জেন জি রেবেলস'।
প্রথম ভিডিওটি এবিবিএ ব্যান্ডের গান 'দ্য উইনার টেকস ইট অল'-এর সঙ্গে ছাড়া হয়। ২৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ক্লিপে দেখানো হয় সেই দিনের বিবাহের চিত্র যা দেখে আদিত্যর অনেকে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। সেখানে ওই রাজনীতিবিদের পরিবারের ছবি দেখানো হয়েছিল ও বিবাহ সম্পর্কিত শিরোনাম দেওয়া হয়েছিল।
ভিডিওটির শেষে একটি আহ্বান ছিল: 'আমি যোগ দেব। আমি দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে লড়াই করব। আপনি কি করবেন?'
কেবল একদিনের মধ্যে এটি এক লাখ ৩৫ হাজার বার দেখা হয়েছে, এবং অনলাইন প্রভাবশালীরা একে অন্যান্য পোস্টের সঙ্গে পুনরায় শেয়ার করার মাধ্যমে এর বিস্তার বাড়িয়েছে বলে জানান আদিত্য।
নেপাল এবং বিদেশে অবস্থানকারী অন্যান্য গ্রুপগুলোও ভিডিও তৈরি করেছে এবং সেগুলো ডিসকর্ড ব্যবহার করে শেয়ার করেছে।
এই গেমিং চ্যাট প্ল্যাটফর্মটি নেপালের হাজার হাজার আন্দোলনাকারীরা ব্যবহার করেছে। সেখানে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছে এবং দেশের জন্য অন্তর্বর্তী নেতা মনোনয়নের বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছে।
ফিলিপাইনেও ৩০ হাজারের বেশি মানুষ রেড্ডিটের একটি থ্রেডে অংশগ্রহণ করেছে। রেড্ডিট একটি 'লাইফস্টাইল' সম্পর্কিত প্লাটফর্ম। এখানে অনেক ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য পোস্ট করা হয়।

যুবকরা গণআন্দোলনের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এটি নতুন কোনো বিষয় নয়—২০০০-এর দশকের শুরুতে ফিলিপাইনে টেক্সট মেসেজিং ব্যবহার করে দ্বিতীয় 'পিপলস পাওয়ার' বিপ্লব ত্বরান্বিত হয়েছিল, আর ২০১০-এর দশকে আরব বসন্ত ও 'অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট' আন্দোলন মূলত টুইটারের উপর নির্ভর করে হয়েছিল।
এখন যা ভিন্ন তা হলো প্রযুক্তির জটিলতা এবং বিস্তৃত ব্যবহার—মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেজিং অ্যাপ এবং এখন এআই মানুষকে সংগঠিত করা সহজ করে তুলেছে।
কার্নেগি ইন্ডওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র ফেলো স্টিভেন ফেল্ডস্টাইন বলেন, 'জেনারেশন জি'রা এর সঙ্গে বড় হয়েছে, এভাবেই তারা যোগাযোগ করে… এই প্রজন্মের সংগঠন প্রক্রিয়াও তারই স্বাভাবিক প্রকাশ।'
দেশে দেশে রাজনৈতিক সংহতি
প্রযুক্তি বিভিন্ন দেশের প্রতিবাদকারীদের মধ্যে সংহতির অনুভূতিও তৈরি করেছে।
ইন্দোনেশিয়ার আন্দোলকারীরাদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি কার্টুন খুলির লোগো ফিলিপাইন ও নেপালের আন্দোলনকারীরাও ব্যবহার করছে। সেগুলো পতাকা, ভিডিও ক্লিপ এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল ছবিতে দেখা গেছে।
#সিইএবলিংস হ্যাশট্যাগও অনলাইনে জনপ্রিয় হয়েছে—যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বা সমুদ্রের কাছের "ভাই-বোন" বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং অন্যান্য দেশ একে অপরের দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
এটি সত্য যে এশিয়ায় পূর্বেও অঞ্চলের মধ্যে রাজনৈতিক সংহতির এমন ঢেউ দেখা গেছে, ১৯৮০-এর দশকের শেষে মিয়ানমার ও ফিলিপাইনেও এমন উত্তেজনা শুরু হয় তা গড়ায় ২০১৯ সালে হংকংয়ের আন্দোলনে শুরু হওয়া মিল্ক টি অ্যালায়েন্স পর্যন্ত, বলে জানিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আয়ারভাইন-এর ইতিহাসবিদ জেফ ওয়াসারস্ট্রোম। তবে তিনি বলেন, এবার বিষয়টি ভিন্ন।
তিনি বলেন, '[আজকাল] প্রতিবাদের ছবি আগে যেভাবে ছড়াতো তার চেয়ে অনেক দ্রুত এবং অনেক দূর ছড়ায়, তাই অন্যান্য স্থানে কী ঘটছে তার ছবি অনেক বড় পরিসরে পৌঁছে যাচ্ছে।'
প্রযুক্তি অনুভূতিও উসকে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফিলিপাইনি সমাজবিজ্ঞানী অ্যাশ প্রেস্টো বলেন, 'যখন আপনি এটি আপনার ফোনে সরাসরি দেখেন—বিলাসবহুল বাড়ি, দ্রুতগামী গাড়ি—তখন দুর্নীতি আরও বাস্তব মনে হয়।'

তিনি আরও বলেন, এই প্রভাব বিশেষভাবে ফিলিপাইনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী এদেশে রয়েছেন।
মৃত্যু, ধ্বংস —এরপর কী?
এই প্রতিবাদগুলোর সবই অফলাইনে মারাত্মক পরিণতি ডেকে এনেছে। ভবন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাড়ি লুটপাট ও ভেঙে ফেলা হয়েছে, এবং রাজনীতিবিদদের বাড়ি থেকে বের করে মারধর করা হয়েছে।
শুধু ভবন ও ব্যবসার ক্ষয়ক্ষতির মূল্যই শত মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।
নেপালে ৭০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সরকারগুলো এ সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোভো সুবিয়ান্তো এই আচরণকে নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি একে 'দেশদ্রোহিতা ও সন্ত্রাসের দিকে ঝুঁকছে … [এবং] সরকারি স্থাপনা ধ্বংস, বাড়িতে লুটপাট' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ফিলিপাইনে প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবাদকারীদের উদ্বেগ ঠিক, তবে তাদের শান্তিপূর্ণ থাকা উচিত।
এদিকে, ফিলিপাইনের মন্ত্রী ক্লেয়ার কাস্ত্রো সতর্ক করেছেন যে, "খারাপ উদ্দেশ্যে যারা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চায়" তারা জনসাধারণের ক্রোধকে কাজে লাগাচ্ছে।

তবে প্রতিবাদকারীরা সহিংসতার জন্য 'প্রবেশকারীদের' দোষারোপ করেছেন এবং নেপালের ক্ষেত্রে অনেকেই দাবি করেছেন যে, উঁচু মৃত্যুহার পুলিশের কঠোর দমন নীতির ফল, যা সরকার তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে।
সবকিছুর মধ্যে, সরকারগুলোও আন্দোনকারীদের উদ্বেগ স্বীকার করেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দাবিতে সম্মতি জানিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় কিছু আইনপ্রণেতার আর্থিক সুবিধা বাতিল করা হয়েছে, যেমন বিতর্কিত আবাসন ভাতা এবং বিদেশ ভ্রমণ। ফিলিপাইনে, বন্যা প্রতিরোধ তহবিলের সম্ভাব্য অপব্যবহার তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে, এবং প্রেসিডেন্ট মার্কোস নিশ্চিত করেছেন যে অনুসন্ধানে কেউই রেহাই পাবে না।
এখন প্রশ্ন হলো, এই ক্রোধের পর কী হবে?
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত ডিজিটাল আন্দোলনগুলোর খুব কমই মৌলিক সামাজিক পরিবর্তন আনতে পেরেছে―বিশেষ করে এমন দেশে যেখানে দুর্নীতি ও অন্যান্য সমস্যা গভীর।
এর একটি কারণ হলো এই আন্দোলনগুলোর কোনো নেতা নেই। যা অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সুসংগঠিত সংস্কারের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
'[সোশ্যাল মিডিয়া] স্বভাবগতভাবে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের জন্য ডিজাইন করা হয়নি… আপনি এটিকে চালিয়ে রাখতে অ্যালগরিদম, ক্রোধ এবং হ্যাশট্যাগের উপর নির্ভর করছেন,' বলেছেন ড. ফেল্ডস্টাইন।
তিনি বলেন, '[পরিবর্তনের জন্য মানুষকে] একটি বিচ্ছিন্ন অনলাইন আন্দোলন থেকে এমন একটি দলে রূপান্তরিত হতে হবে যার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আছে, এবং যার বন্ধন অনলাইন ও বাস্তব উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'মানুষকে কার্যকর রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে আসতে হবে, শুধু শূন্য-ফল, সব কিছু ধ্বংস করে দেওয়ার কৌশল অনুসরণ করার পরিবর্তে।'
অবশ্য এসব নেপালের পূর্ববর্তী আন্দোলনেও স্পষ্ট ছিল। ২০০৬ সালে নেপালের মিলেনিয়ালরা মাওবাদী বিদ্রোহ এবং এক দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধের পর রাজতন্ত্র উৎখাত করে এমন একটি বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু এরপর দেশটিতে ১৭টি সরকার পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু অর্থনীতি এখনও স্থবির।
অ্যান্টি-করাপশন গ্রুপ অ্যাকাউন্টেবিলিটি ল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ অধিকারী বলেন, পূর্ববর্তী প্রজন্মের নেপালি আন্দোলনাকারীরা 'শেষ পর্যন্ত সিস্টেমের অংশ হয়ে পড়েন এবং তাদের নৈতিক ভিত্তি হারিয়ে ফেলেন।'