দনবাস ছাড়তে হবে, ন্যাটোতে যোগ দেয়া যাবে না: যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনকে আরও যেসব শর্ত দিলেন পুতিন

যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প এলাকা দনবাস ছেড়ে দেয়াসহ অন্তত তিনটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অন্য শর্তগুলো হলো ইউক্রেন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আকাঙ্ক্ষা ছেড়ে দিতে হবে এবং ইউক্রেনে পশ্চিমা সেনা মোতায়েন করা যাবে না।
বিষয়টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ তিনটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
শুক্রবার আলাস্কায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চার বছরের বেশি সময় পর প্রথম রাশিয়া-আমেরিকা শীর্ষ বৈঠকে বসেন পুতিন। প্রায় তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ইউক্রেন সংকটের সম্ভাব্য সমাধান। তবে বৈঠক শেষে একসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সামনে উপস্থিত হলেও দুই নেতা সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাননি।
সূত্রগুলো জানায়, গত বছর জুনে দেওয়া দাবি থেকে কিছুটা পিছু হটেছেন পুতিন। আগে তিনি ডনবাসের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক ছাড়াও দক্ষিণের খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া সম্পূর্ণ ইউক্রেন ছাড়ার দাবি করেছিলেন। কিয়েভ সেটি 'আত্মসমর্পণ'-এর শর্ত হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে। নতুন প্রস্তাবে পুতিন কেবল দনবাস থেকে ইউক্রেনের সেনা প্রত্যাহার চান। বিনিময়ে রাশিয়া খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ায় বর্তমান ফ্রন্টলাইনে থামতে রাজি, বলে সূত্রগুলোর দাবি।
বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দনবাসের ৮৮ শতাংশ এবং খেরসন-জাপোরিঝঝিয়ার ৭৩ শতাংশ এলাকা। তবে সম্ভাব্য সমঝোতার অংশ হিসেবে ইউক্রেনের খারকিভ, সুমি ও দ্নিপ্রোপেত্রোভস্কের অল্প কিছু দখলকৃত এলাকা ছাড়তে রাজি মস্কো।
এ ছাড়া পুতিন ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার আইনি নিশ্চয়তা, ইউক্রেনের সেনাশক্তি সীমিতকরণ এবং দেশটিতে কোনো পশ্চিমা সেনা না রাখার প্রতিশ্রুতি চাইছেন।
তবে কিয়েভ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, দনবাস ইউক্রেনের 'প্রতিরক্ষা দুর্গ' এবং এখান থেকে সরে আসা মানে দেশের অস্তিত্ব ঝুঁকির মুখে ফেলা। ন্যাটোতে যোগদানের লক্ষ্যও ইউক্রেনের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, দনবাস থেকে প্রত্যাহারের শর্ত কিয়েভের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর পুতিনের 'সমঝোতার ইঙ্গিত' ট্রাম্পের উপস্থিতিতে রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেই বেশি প্রতীয়মান।
রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে ইউক্রেনের মোট এক-পঞ্চমাংশ এলাকা, যা যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সমান। সূত্রগুলো মনে করছে, আলাস্কায় বৈঠক যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শান্তির সেরা সুযোগ তৈরি করেছে, যদিও কিয়েভ বা ওয়াশিংটনের অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প বলেন, তিনি যুদ্ধের 'রক্তপাত' বন্ধ করে 'শান্তির প্রেসিডেন্ট' হিসেবে পরিচিত হতে চান। এজন্য তিনি পুতিন ও জেলেনস্কির বৈঠকের আয়োজন করছেন। তার পর যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণে ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকের পরিকল্পনাও রয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছেন, পুতিন জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে প্রস্তুত, তবে সব শর্ত আগে পরিস্কার করতে হবে। অন্যদিকে পশ্চিমা নেতারা সন্দিহান যে পুতিন সত্যিই যুদ্ধ শেষ করতে চান কি না।
সূত্রগুলোর মতে, সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদন পাওয়ার মতো ত্রিপক্ষীয় (রাশিয়া-ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র) চুক্তি হতে পারে। আবার ২০২২ সালের ব্যর্থ ইস্তাম্বুল আলোচনার মতো নিরপেক্ষতার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রস্তাবও আলোচনায় থাকতে পারে।
একজন সূত্রের ভাষায়, 'দুটি পথই খোলা—যুদ্ধ অথবা শান্তি। শান্তি না হলে সামনে আরও যুদ্ধ।'