হাজার বছরেও নষ্ট হয় না মধু! এর বৈজ্ঞানিক রহস্য কী?

একবার কোন খাবারের ঢাকনা খোলা মানেই ব্যাকটেরিয়ার দখলে গিয়ে খাবার নষ্ট হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু কিছু খাবার আছে, যেগুলো সময়ের ধার ধারেই না—বছরের পর বছরও থাকে খাওয়ার উপযোগী। আর এমন এক বিস্ময়কর খাবার হলো মধু। প্রতিবেদন বিবিসির।
সাধারণ খাবার যেখানে কয়েক দিনেই ছত্রাকের ছায়ায় ঢেকে যায়, সেখানে মধু বছরের পর বছর থাকলেও নষ্ট হয় না। ঢাকনা বন্ধ অবস্থায় অনেকদিন রাখলে মধু হয়তো জমে যায় বা স্ফটিকের মতো হয়ে পড়ে, কিন্তু পঁচে বা বাসি হয়ে যায় না। এই অদ্ভুত টিকে থাকার পেছনে আছে মধুর বিশেষ রাসায়নিক গঠন এবং মৌমাছির দারুণ এক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।
মধু টাটকা থাকার মিষ্টি রহস্য!
মিষ্টি মানেই ব্যাকটেরিয়ার জন্য ভোজের আয়োজন। তরল ও মিষ্টি এই মধু তো ব্যাকটেরিয়ার জন্য আদর্শ খাবার হবারই কথা ছিল। কিন্তু এখানেই চমক। মৌমাছিরা যখন ফুলের মধু সংগ্রহ করে, সেটি তখন অনেকটা পানিযুক্ত চিনির মতো তরল হয়। এরপর মৌমাছিরা তাদের হজমে সাহায্যকারী এনজাইমের মাধ্যমে সেই তরলে অ্যাসিড যুক্ত করে, চিনিকে ভেঙে সহজ উপাদানে পরিণত করে এবং মধুচাকে তা জমা রাখে।
এরপর তারা নিজেদের ডানার ঝাপটিয়ে সেই মধুকে শুকিয়ে ফেলে। ধীরে ধীরে বাষ্পীভবনের প্রক্রিয়ায় মধুর পানির মাত্রা ৭০-৮০ শতাংশ থেকে নেমে আসে মাত্র ১৫-১৮ শতাংশে। এত কম পানির উপস্থিতিতে কোনো ব্যাকটেরিয়ার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হয় না।
খাবার নষ্ট হওয়ার মানে হলো ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক কিংবা ফাঙ্গাস সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে। এরা সাধারণত আর্দ্র পরিবেশ, মাঝারি গরম তাপমাত্রা ও অক্সিজেন পছন্দ করে। আর মধু সেই সব প্রয়োজনীয় উপাদান একেবারেই রাখে না।
এতে পানির অভাব, অ্যাসিডের উপস্থিতি এবং অক্সিজেনের ঘাটতি সবই রয়েছে। ফলে ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকাই কঠিন। বিজ্ঞানীরা একে বলেন 'লো ওয়াটার অ্যাকটিভিটি' যা খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত অন্যতম জনপ্রিয় কৌশল।
তবু সাবধানে রাখা চাই
খোলা অবস্থায় মধুর কৌটায় বারবার ভেজা কিংবা লালাযুক্ত চামচ দেয়া হলে তখন বাইরের ব্যাকটেরিয়া এবং আর্দ্রতা মধুর মধ্যে ঢুকে পড়ে। সেজন্যই বলা হয়, মধু দীর্ঘস্থায়ী হলেও তাকে ঠিকমতো সংরক্ষণ করতে হয়।
অবশ্য একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করলে, ইচ্ছা করলেই মধুতে পানি মিশিয়ে ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশ ঘটানো যায়। আর তাতেই তৈরি হয় এক ধরনের জনপ্রিয় এলকোহলজাতীয় পানীয়, মিড (Mead)। গরমের দিনে ঠান্ডা মিডের গ্লাস হাতে নিতে কেউই খুব একটা আপত্তি তুলবে না!
অনুবাদ : নাফিসা ইসলাম মেঘা