Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
July 17, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, JULY 17, 2025
নামজারি থেকে খতিয়ান: জমি নিয়ে অজস্র প্রশ্নের উত্তর মিলছে ফেসবুক গ্রুপেই!

ফিচার

সালেহ শফিক & আসমা সুলতানা প্রভা
15 July, 2025, 07:50 pm
Last modified: 15 July, 2025, 08:17 pm

Related News

  • সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা না ভাঙার অনুরোধ ভারতের, সংস্কারে সহায়তার প্রস্তাব
  • বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের সঙ্গে করা সব চুক্তি পর্যালোচনা করবে সরকার
  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • জ্বালানি তেল থেকে ফল, চাহিদার মন্দায় চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব পণ্যের আমদানি কমেছে
  • এস আলমের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক যেভাবে ২,২৫৯ কোটি টাকার লোকসানকে ১২৮ কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়েছে

নামজারি থেকে খতিয়ান: জমি নিয়ে অজস্র প্রশ্নের উত্তর মিলছে ফেসবুক গ্রুপেই!

এমন ঘটনা একটি নয়, অনেকও নয়, বলা উচিত অজস্র। একটু ঠাট্টা করে বলা যায়, আমাদের ১৭ কোটি মানুষের জমি-জমা নিয়ে ১৮ কোটি সমস্যা।
সালেহ শফিক & আসমা সুলতানা প্রভা
15 July, 2025, 07:50 pm
Last modified: 15 July, 2025, 08:17 pm

ইলাস্ট্রেশন: টিবিএস

বনশ্রীর ঠাকুর্দা মারা গেছেন ২০০৪ সালে, বাবা তার পাঁচ বছর পরে। বাবার ভাই আছেন আরো পাঁচ জন। জমি আছে ঠাকুর্দার নামে। এক মাস আগে বনশ্রী নিজের ও তার মায়ের নামে উত্তরাধিকার সনদপত্র নিয়ে নামজারি করতে দিয়ে এসেছেন। এখন উকিল বলছেন- তাঁর মা হবেন উত্তরাধিকারী, আবার তহসিলদার বলছেন, বনশ্রী নিজেই হবেন উত্তরাধিকার। তাই আগের নামজারি আবেদন খারিজ করে নতুনভাবে আবেদন করতে হবে। এই গ্যারাকলে কী করবেন বনশ্রী? এমন ঘটনা একটি নয়, অনেকও নয়, বলা উচিত অজস্র। একটু ঠাট্টা করে বলা যায়, আমাদের ১৭ কোটি মানুষের জমি-জমা নিয়ে ১৮ কোটি সমস্যা।

সমস্যার ধরণেও আছে নানা হেরফের। আরো কয়েকটি ঘটনা জানালে পাঠকের কাছে তা পরিস্কার হবে। পিতার আগে সন্তান মারা গেছে। এখন ওই সন্তানের ছেলে-মেয়ে কি তার দাদার সম্পত্তির ভাগ পাবে? আরিফুল ইসলামের এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন জাকির হোসেন, না পাবে না, কারণ দাদার ওয়ারিশ ছিল বাবা। বাবা যেহেতু নাই, তাই তার সন্তানরা দাদার সম্পত্তি পাবে না। তবে দাদা যদি দেয় তবে পাবে।

এ আর সবুজের প্রশ্ন হলো, জমির ওয়ারিশ তিন জন। এদের মধ্যে দুইজন দেশে আছেন। এই দুজন তাদের অংশ বিক্রি করবে। এই দুই অংশের জমি কি কেনা যাবে?

প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন সুমন মিয়া, বলছেন, কেনা যাবে, তবে প্রথমে যিনি বিদেশ থাকেন তার বরাবর একটি নোটিশ পাঠাতে হবে।

পরের প্রশ্নটি পাওয়া যাচ্ছে রুহুল আমিনের কাছ থেকে। প্রশ্নটি একটু জটিল। তিনি জানতে চাইছেন, স্বামী মারা গেছেন স্ত্রী ও চার কন্যা রেখে। মৃত ব্যক্তির দুই ভাই আছে। ভাইদের আছে ৩ সন্তান। এক্ষেত্রে জীবিত ভাই ও ভাতিজারা কি সম্পদের ভাগ পাবেন?

আশিক আহমেদ এ প্রশ্নের উত্তরে বলছেন, প্রথমত ভাইরা জীবিত থাকতে ভাতিজারা কোনো ভাগ পাবে না। ছেলে সন্তান না থাকায় স্ত্রী মোট সম্পদের ১৬ আনা থেকে ২ আনা পাবেন। বাকী সম্পদের ৩ ভাগের ২ ভাগ পাবেন মেয়েরা এবং ১ ভাগ পাবেন ভাইয়েরা।

আরেকটি প্রশ্ন বলে এ পর্ব শেষ করি। আব্দুর রহমান প্রশ্ন করছেন, দলিল আছে, নামজারিও করা হয়েছে, খাজনাও দেয়া হয়ে গেছে, এখন জমি দখলে নেওয়ার জন্য কি করা যায়?

মজা করে আনোয়ার হোসেন উত্তর দিয়েছেন, রাজনীতি করে। আপনার এলাকার নেতার চামচামি করেন। ফেসবুকে দুই-একটা পোস্ট দেন নেতাকে নিয়ে। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান।

এমন মজার উত্তর আরো পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন যেমন লিখেছেন, আমার হিসাবে খাজনা আসে ৬০০ টাকা আর নায়েব আমার আইডিতে দাবি দিয়েছে ১০ হাজার টাকা। এখন এটা কিভাবে কমাব।

মাসুদ পারভেজ উত্তর দিচ্ছেন, লাঠি বা বাঁশ নেন।

ছবি: ফেসবুক স্ক্রিনশট

যেহেতু সমস্যা অগণিত তাই প্রশ্নোত্তর পর্বও চলে নিত্য। ফেসবুকে জমি-জমা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান প্রদান করে এমন কিছু গ্রুপের দৈনন্দিন চিত্র এগুলো। কোনোটির সদস্য সংখ্যা ৬ লাখ, কোনোটির ৭ লাখ, আবার কোনোটির ১০ লাখ। এর মধ্যে যেটির সদস্য সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেই গ্রুপটির নাম 'জমি-জমা সংক্রান্ত নানা সমস্যা ও সমাধান এবং আইনি পরামর্শ'। গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা যিনি, তার নাম রকিম উদ্দিন রকিব।

তিনি একজন আইনজীবী। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নিয়মিত আইনচর্চা করেন। বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার এক ছোট্ট গ্রাম বাজালিয়ায়।

হিসাববিজ্ঞান থেকে এমবিএ করেছিলেন ব্যাংকার হবার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এলএলবি পড়ে আইনজীবী হবার পথে আগান। তার ভাবনায় ছিল এমন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবার চিন্তা, যেখানে মানুষ নিঃস্বার্থভাবে আইনি সহায়তা পাবে, বিশেষ করে জমি-জমা সংক্রান্ত বিষয়ে।

এই ইচ্ছের পেছনের গল্পও কম নাটকীয় নয়। বাবার বেশকিছু জমি ছিল গ্রামে। একদিন তিনি তার শিক্ষিত ছেলে রকিমের কাছে জমির দলিলের বিএস দাগ এবং আরএস দাগ কত তা জানতে চান। সেদিন রকিম তার বাবাকে কিছু জানাতে ব্যর্থ হন। তার এই অজ্ঞতা সেদিন বাবাকে বেশ ব্যথিত করেছিল।

পিতার মুখে তখন হতাশার স্বর মেনে নিতে পারেননি রকিম। অপমান, অক্ষমতা আর লজ্জায় তখনই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন, একদিন এসব বিষয়ে তিনি জানবেন। সময়ের পরিক্রমায় যুক্ত হোন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে। অনেক মানুষ জমিজমা, দাগ-দলিলের সমস্যা নিয়ে আসতে শুরু করল। কিন্তু তখনও রকিম সঠিকভাবে তাদের সমস্যান সমাধান দিতে পারতেন না।

সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক গ্রুপে প্রশ্ন করতেন, উত্তর চাইতেন। কিন্তু সেগুলোর বেশিরভাগই এপ্রুভ হতো না, আর যখন হতো ততক্ষণে প্রশ্নকর্তা হয়তো হারিয়ে যেত। এই ব্যর্থতা তাকে তাড়া করত। উপলব্ধি করলেন, আইনের এই অজানার অন্ধকার দূর করার প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতখানি!

দেখতেন, এই না জানার কারণে কত মানুষ প্রতারিত হয় ভূমি অফিসে, দালালের হাতে, এমনকি নিজ পরিবারের কাছেও। আইনের কঠিন ভাষা সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে ওঠে আরও কঠিন। এসব বিষয়কে সহজ করে সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২১ সালে 'জায়গা জমি সংক্রান্ত নানা সমস্যা ও সমাধান এবং আইনি পরামর্শ' নামে ফেসবুক গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেন রকিম।

শুরুটা ছিল ক্ষুদ্র। আশাও করেননি এত মানুষ যুক্ত হবেন। ধীরে ধীরে গ্রুপে প্রশ্নের সংখ্যা বাড়ে, সঙ্গে মানুষও! বর্তমানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জমিজমা সংক্রান্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রূপ নিয়েছে রকিমের গ্রুপটি। গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০ লাখেরও বেশি। 

ছবি: ফেসবুক স্ক্রিনশট

'৯০% মানুষই জমি সংক্রান্ত মৌলিক আইন জানেন না'

প্রতিদিন হাজার পোস্ট হয় গ্রুপে। মানুষ তাদের সমস্যা নিয়ে জানায়। আসে ভরসা নিয়ে, অজানা প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানার প্রয়াসে। বিশেষ করে যাদের পক্ষে টাকা দিয়ে আইনজীবীর কাছে যাওয়া সম্ভবপর হয়ে উঠেনা, যারা দালালের প্রতারণায় পড়ে, তাদের পাশে থাকার লক্ষ্যেই রকিমের এই প্রচেষ্টা।

গ্রুপের সমস্ত প্রশ্ন পর্বের কাজ সারেন রকিম একাই। তবে রকিমের দেখাদেখিতে অনেক আইনজীবীও যুক্ত হয়েছেন এই গ্রুপে। সময়-সুযোগ পেলেই উত্তর দিচ্ছেন প্রশ্নকর্তার পোস্টে।

রকিমের ভাষ্যে, "শুধুমাত্র জমির কাগজ না জানার কারণে যেন আর কেউ প্রতারিত না হয়, শুধুমাত্র অজ্ঞতার কারণে যেন নিজের অধিকার না হারায় এই লক্ষ্যে কাজ করেছি। আমি বিশ্বাস করি, সচেতনতা ছড়ালে সমাজ বদলায়। আর সেই চেষ্টাটুকুই করছি । আমাদের দেশে ৯০ শতাংশ মানুষই জমি-সংক্রান্ত মৌলিক আইন জানেন না। যেটা আসলে বেশ দু:খজনক একটা বিষয় আমাদের জন্য। এর ফলে প্রতারণার শিকার হওয়ার সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।" 

কোনো নির্ধারিত ফি নেই। কাজের ফাঁকে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে গ্রুপে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার। নেই কোনো বিরক্তিও। মানুষ জানছে, বুঝতে পারছে এতেই যেন স্বস্তি রকিমের।

"আমি নিজে চেষ্টা করি যারা এই সংক্রান্ত সমাধান চায়, তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জানার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে, যাতে একজন অসহায় মানুষও ভুল পথে চলে না যায়। আমি কখনো এই গ্রুপ থেকে এক টাকাও নিইনি, বরং চেয়েছি আমার অভিজ্ঞতা, আমার জ্ঞান, আমার সময়টুকু মানুষের জন্য কাজে লাগুক।"

ছবি: ফেসবুক স্ক্রিনশট

ভোগান্তি কমিয়ে সেবা দান

আবার 'জমি-জমা সংক্রান্ত সমস্যা ও সমাধান'' শীর্ষক ৭ লাখ সদস্যের আরও একটি বড় গ্রুপ লক্ষ করা যায়। গ্রুপের ভূমিকায় বলা হয়েছে, "জমি নিয়ে বিরোধ হয়ে আসছে সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে। আগে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হত, এখন ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ হচ্ছে। তাই এর সমাধানের জন্য প্রয়োজন পরামর্শ। দালালরা মানুষকে ভুল পরামর্শ দিয়ে অনেক ঝামেলায় ফেলে, তাই ভূমি সমস্যার সমাধান নিয়ে এই গ্রুপ।''

অবশ্য প্রতিদিন শত শত জানতে চেয়ে পোস্ট দেখলে বোঝা যায় প্রকৃত অর্থেই মানুষকে জানানোর উদ্দেশ্যেই তাদের এই চেষ্টা।

আবার একই নামে ৬ লাখ সদস্যের আরও একটি সক্রিয় ফেসবুক গ্রুপ চোখে পড়ে। গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সাবের চৌধুরি। একটি সার্ভে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ২০২১ সালে এই গ্রুপ খোলেন তিনি। সেটিও আবার নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে।

সেবার খোঁজে গিয়ে দুর্নীতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল সাবের চৌধুরীকে। টের পান—আইন ও বিচারসংক্রান্ত অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে প্রশ্ন করলেও মেলে না স্পষ্ট উত্তর বা কার্যকর সমাধান। ভোগান্তি কমিয়ে সেবা দেয়ার লক্ষ্যে গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

শুরুতে বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যেই গ্রুপের ইনভাইটেশন পাঠানো হয়। কিন্তু সাড়া এতটাই ভালো ছিল যে, প্রথম দিনেই সদস্য সংখ্যা পৌঁছায় তিন থেকে চার হাজারে। আসতে থাকে নানান সমস্যা সংক্রান্ত প্রশ্নপর্ব। তখনই বুঝে নেন, এই সেক্টরে মানুষের ভোগান্তি কতখানি!

গ্রুপে যুক্ত করেছেন একাধিক নামকরা উকিলদের। তারাও আন্তরিকতার সাথে উত্তর দিচ্ছেন। সমাধান জানাচ্ছেন। 

অবশ্য সাবের চৌধুরী শুরুর দিকে সরাসরি বিভিন্ন চেম্বারে গিয়েছেন, আইনজীবীদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে গ্রুপে যুক্ত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও যোগাযোগ চালিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি বিশ্বাসযোগ্য টিম।

গ্রুপে প্রতিদিনই গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০টি পোস্ট আসে, যার বেশিরভাগেরই উত্তর দেওয়া হয়। এমনকি ইনবক্সে প্রশ্ন এলেও টিমের সদস্যরা যথাসাধ্য সহায়তা করার চেষ্টা করেন।

শুধু উপকার নয়, আছে ক্ষতির দিকও

তবে ইতিবাচকতার পাশাপাশি সাবের টানলেন কিছু নেতিবাচক দিকের কথাও। গ্রুপে যেমন অনেক ভালো আইনজীবী কাজ করছেন, তেমনি কিছু প্রতারকও নানাভাবে বিভ্রান্ত করে মানুষদের। কেউ কমেন্টের নিচে কাগজপত্র তৈরি করে দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেয়, কেউ আবার ইনবক্সে গিয়ে সরাসরি প্রতারণা করে ফেলে। অনেকে আবার অস্বাভাবিক কম মূল্যে 'সব হয়ে যাবে' ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের বিপদে ফেলে।

এর কারণ অবশ্য জমিজমা কেন্দ্রিক শব্দ জটিলতা। অনেক মানুষই এসব শব্দের ব্যবহার ও অর্থ সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞাত থাকেন। যার ফলে প্রতারণা চক্রও সক্রিয় হয়ে উঠেছে দিন দিন।

কোন শব্দের কী অর্থ

জমিজমা বিষয়ে যেসব শব্দ প্রায়ই ব্যবহৃত হয় সেগুলো হলো- মিস কেস, দাখিলা, নামজারি, খতিয়ান, মৌজা ম্যাপ, লিগ্যাল নোটিস, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, সাফ কবলা, হেবা, বণ্টননামা, খতিয়ান ও পর্চা ইত্যাদি। জানা যাক এগুলোর কোনটি দিয়ে কী বোঝায়।

  • মিস কেস হলো এমন একটি মামলা যেখানে কোনো ব্যক্তি তার মিউটেশন  বাতিল বা সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই আবেদন করতে হয় এসি ল্যান্ড বরাবর। তিনি আবেদন গ্রহণ করে সরেজমিন তদন্ত করেন এবং উভয় পক্ষের শুনানি শেষে সমাধান দেন।
  • দাখিলা হলো ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধের প্রমাণপত্র বা রশিদ। এটি ভূমি মালিকানার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
  • নামজারি বা নাম খারিজ বা মিউটেশন হলো জমি কেনা বা কোনোভাবে মালিকানা লাভের পর রেকর্ড সংশোধন করে নতুন মালিকের নাম নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া।
  • মৌজা ম্যাপ দিয়ে সাধারণত কোনো রেজিস্ট্রি করা ভূমি বা ভবনের মালিকানা সীমানা চিহ্নিত করা হয়
  • লিগ্যাল বা উকিল নোটিস অ্যাডভোকেটের মাধ্যমে করতে হয়। কারোওর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা লিখিতভাবে অবগত করাই লিগ্যাল নোটিস। এটি বস্তুত মামলা দায়েরের পূর্বপ্রস্তুতি।
  • পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হলো একটি আইনি ব্যবস্থা যা একজন ব্যক্তিকে অন্য একজনের পক্ষে কাজ করার অনুমতি দেয়।
  • সাফ কবলা দলিল হলো বিক্রয় দলিল। এর মাধ্যমে বিক্রেতা ক্রেতার কাছে সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তর করে।
  • হেবা বা দানপত্র দলিল মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য কার্যকর। কোনো কিছুর বিনিময়ে নয়, কেবলমাত্র সন্তুষ্ট হয়ে এইরূপ দান করা হয়।
  • বণ্টননামা হলো এমন একটি দলিল যা দ্বারা কোনো সম্পত্তির একাধিক মালিক তাদের মালিকানাধীন অংশ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। একে বাটোয়ারা দলিলও বলে।
  • খতিয়ান হলো জমির মালিকানা, পরিমাণ, শ্রেণী ও অন্যান্য বিবরণ সংবলিত একটি সরকারি নথি আর খতিয়ানের অনুলিপি যা ভূমি মালিককে দেওয়া হয় তা পর্চা।

জমি নিয়ে জটিলতা কেন?

বিবিসি বাংলার ২০২২ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ, যার বড় অংশ অর্থাৎ ৬০ শতাংশ মামলা জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের সূত্রে দায়ের করা। কিন্তু জমি নিয়ে কেন এত জটিলতা?

মোটা দাগে পুরনো এবং ত্রুটিপূর্ণ ভূমি রেকর্ড, নদীভাঙন, আইনি দুর্বলতা, অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশ, ভূমি বিষয়ক জ্ঞানের ও সচেতনতার অভাব এবং দ্রুত ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কারণে জটিলতা এবং বিরোধ বাড়ছে আর মামলার সংখ্যাও কমছে না।

রেকর্ড বা খতিয়ান থেকে শুরু হয় জমি-সংক্রান্ত ঝামেলা। ভূমি জরিপ ঠিকমতো না হওয়া এর প্রধান কারণ। সাধারণভাবে ভূমি নকশা ও ভূমি মালিকানা বিষয়ক খতিয়ান তৈরি করাকে ভূমি জরিপ বলা হয়।

প্রাচীন মিসরে নীল নদের অতি প্লাবনে জমির সীমানা মুছে যেত। তাই দড়ি দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হতো। ভারতবর্ষে জরিপ প্রথা চালু করেন সম্রাট শের শাহ। আকবরের আমলে তার সভাসদ টোডরমল জরিপ ও বন্দোবস্ত ব্যবস্থাকে বিস্তৃত করেন। তারপর ব্রিটিশ আমলে ভূগোলবিদ জেমস রেনেল সার্ভেয়ার জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৭৮০-৮১ সালে তিনি ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের প্রথম নিয়মমাফিক মানচিত্র তৈরি করেন। তারপর বাংলা ও বিহারের ৮ টি বিভাগের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ইনডেক্স ম্যাপ তৈরি করেন।

১৮০২ সালে উইলিয়াম ল্যাম্বটনের নেতৃত্বে ভারতব্যাপী ত্রিকোণমিতিক জরিপ শুরু হয় যেন ভবিষ্যতে সঠিক ও নির্ভুল নকশা প্রণয়ন করা যায়। ১৮৪৬ সালে আবার জমিদাররা নিজেদের এলাকার সীমানা বিরোধ মেটাতে থাকবাস্ত নামের এক জরিপ কাজ পরিচালনা করেন যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কর্নেল স্মিথ। এর ওপর ভিত্তি করে গ্রামগুলোর সীমানা নির্ধারিত হয় এবং রাজস্ব জরিপ পরিচালনা করা হয়। এটি চলে ১৮৭৮ পর্যন্ত এবং একে প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক জরিপ বলা। জমিদারের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরের ভূমিকে খাস ভূমি হিসেবেও চিহ্নিত করা হয় এ জরিপের মাধ্যমে।
১৮৭৫ সালে ব্রিটিশ সরকার সার্ভে আইন পাশ করে। কিন্তু স্বত্ব নির্ধারণে এ আইন যথেষ্ট ছিল না। তাই ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাশ করা হয়। ভূমি রেকর্ড দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৮৮৮ সালে সার্ভে অব ইন্ডিয়ার সহায়তায়। কক্সবাজারের রামু থানায় খতিয়ান প্রণয়নের কাজ আরম্ভ হয় যেটি ১৮৯০ সালে সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

এ অভিজ্ঞতার আলোকে চট্টগ্রাম জেলায় ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে বা সিএস জরিপ শুরু হয় ১৮৯০ সালে এবং ১৮৯৮ সালে সম্পন্ন হয়। এরপর পুরো পূর্ববাংলায় সিএস জরিপ পরিচালিত হয় এবং দিনাজপুর জেলা জরিপের মধ্য দিয়ে ১৯৪০ সালে শেষ হয়। তবে তখন বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলা আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত থাকায় ওই অঞ্চলে সিএস জরিপ পরিচালিত হয়নি। এ জরিপটি যেহেতু দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে চলেছিল তাই এই সময়কালে ভূমির প্রকৃতি ও মালিকানায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।

সেজন্য ১৯৪০ সাল থেকে বৃহত্তর ফরিদপুর ও বাকেরগঞ্জ জেলায় সংশোধনী জরিপ শুরু হয় যাকে রিভিশনাল সার্ভে বা আরএস জরিপ বলে। ১৯৪৫ সালে ফরিদপুর এবং ১৯৫২ সালে বাকেরগঞ্জের জরিপ শেষ হয় ও খতিয়ান চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়। ১৯৫০ সালে জমিদারি হুকুম দখল ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ায় আর কোনো জেলায় আরএস জরিপ পরিচালিত হয়নি। এ আইনের মাধ্যমে জমিদারদের অধিভুক্ত সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ দিয়ে এস্টেটগুলো অধিগ্রহণ করা হয় এবং প্রজার নামে খতিয়ান প্রণয়ন করে প্রজাস্বত্ব বলবৎ করা হয়। একে বলা হয় এসএ জরিপ। তবে এটি কোনো মাঠ পর্যায়ের জরিপ ছিল না। প্রশাসনের কর্মচারিগণ জমিদারের কাচারিতে বসে পত্তন রেজিস্ট্রার দেখে খতিয়ান প্রণয়ন করেন। ফলে ১৯৬৬ সালে আবার দেশব্যাপী সংশোধনী জরিপ শুরু হয় যা এখনো চলমান।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় একটি বিশেষ ধরণের জরিপ কাজের প্রয়োজন দেখা দেয়। এ দেশে নদী ভাঙনের ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা নদী বা সাগর গর্ভে চলে যায়। আবার কোথাও কোথাও নতুন চর জেগে ওঠে। এসব নদী ভাঙন এলাকা জরিপ করার জন্য ১৯৬৩ সালে একটি স্থায়ী দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিস স্থাপন করা হয়। দিয়ারা শব্দটি এসেছে দরিয়া থেকে। এছাড়া শুধু ঢাকা মহানগরীর জন্য আরেকটি সংশোধনী জরিপ পরিচালিত হয় যা মহানগরী জরীপ বলে পরিচিত।

সময়ের বিশাল পরিক্রমায়, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এবং রাজনৈতিক পালাবদলে আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনা দফায় দফায় পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার অধিকাংশ যে জমি-জমা সংক্রান্ত কারণেই হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এসব সমস্যার সমাধান যেসব প্রতিষ্ঠানে পাবার কথা সেখানে সেবার বদলে ভোগান্তির কারণে 'জমি-জমা সংক্রান্ত সমস্যা ও সমাধান' শীর্ষক ফেইসবুক গ্রপগুলোর সদস্যসংখ্যাও ক্রমবর্ধমান।

এই একই কারণে সাবের চৌধুরীর লক্ষ্য আরও বড়। জানালেন, ৪০-৪৫ জন অ্যাডভোকেট ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করে একটি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ তৈরি করতে চান, যেখানে ডকটাইমের মতো সহজে আইনি সেবা পাওয়া যাবে। বিশেষ করে জমি সংক্রান্ত সমস্যায় মানুষ যেন দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য আইনি পরামর্শ পায়, সেটিই হবে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। সাবের বলেন, "বাংলাদেশে জমি নিয়ে যত জটিলতা, তার অনেকটা কমে যেত যদি একজন অ্যাডভোকেট শুরুতেই খোলামেলা ও সঠিক পরামর্শ দিতেন।"
         

Related Topics

টপ নিউজ

জমি / আইনি সমস্যা / ফেসবুক গ্রুপ / বাংলাদেশ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • আদালত প্রাঙ্গণে বিএসবি গ্লোবালের খায়রুল বাশারকে কিল-ঘুষি-লাথি, ডিম নিক্ষেপ
  • নামজারি থেকে খতিয়ান: জমি নিয়ে অজস্র প্রশ্নের উত্তর মিলছে ফেসবুক গ্রুপেই!
  • এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত
  • ভারতে বেড়েছে সিংহের সংখ্যা—কিন্তু উদ্বিগ্ন কিছু সংরক্ষণবিদ; কেন?
  • টহল গাড়ির সামনে ছিনতাই, ভুক্তভোগীকে সহায়তা না করে চলে গেল পুলিশ
  • সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা না ভাঙার অনুরোধ ভারতের, সংস্কারে সহায়তার প্রস্তাব

Related News

  • সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা না ভাঙার অনুরোধ ভারতের, সংস্কারে সহায়তার প্রস্তাব
  • বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের সঙ্গে করা সব চুক্তি পর্যালোচনা করবে সরকার
  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
  • জ্বালানি তেল থেকে ফল, চাহিদার মন্দায় চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব পণ্যের আমদানি কমেছে
  • এস আলমের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক যেভাবে ২,২৫৯ কোটি টাকার লোকসানকে ১২৮ কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়েছে

Most Read

1
বাংলাদেশ

আদালত প্রাঙ্গণে বিএসবি গ্লোবালের খায়রুল বাশারকে কিল-ঘুষি-লাথি, ডিম নিক্ষেপ

2
ফিচার

নামজারি থেকে খতিয়ান: জমি নিয়ে অজস্র প্রশ্নের উত্তর মিলছে ফেসবুক গ্রুপেই!

3
বাংলাদেশ

এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত

4
আন্তর্জাতিক

ভারতে বেড়েছে সিংহের সংখ্যা—কিন্তু উদ্বিগ্ন কিছু সংরক্ষণবিদ; কেন?

5
বাংলাদেশ

টহল গাড়ির সামনে ছিনতাই, ভুক্তভোগীকে সহায়তা না করে চলে গেল পুলিশ

6
আন্তর্জাতিক

সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা না ভাঙার অনুরোধ ভারতের, সংস্কারে সহায়তার প্রস্তাব

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net