ভারতে বেড়েছে সিংহের সংখ্যা—কিন্তু উদ্বিগ্ন কিছু সংরক্ষণবিদ; কেন?

গত ২১ মে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের বন বিভাগ ২০২০ সালের পর দেশের প্রথম সিংহ গণনার ফল প্রকাশ করেছে। ওই জরিপ অনুযায়ী, ভারতের বন্য সিংহের সংখ্যা — যা একমাত্র গুজরাটেই — গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়ে ৮৯১-এ পৌঁছেছে।
ভারতে সিংহ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে গুজরাটের গির অরণ্য ও আশেপাশের এলাকাগুলোকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে, বিশেষ করে ১৯৬৫ সালে গির ন্যাশনাল পার্ক ও অভয়ারণ্য স্থাপনের পর থেকে। বর্তমানে সিংহরা গির অঞ্চলের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে এবং আলাদা ছোট ছোট উপ-জনসংখ্যা গড়ে তুলেছে। এখন গুজরাটের ১১টি জেলায় সিংহের উপস্থিতি রয়েছে।
তবে এবার প্রথমবারের মতো গণনায় দেখা গেছে, গিরের মূল অঞ্চলের চেয়ে গিরের বাইরের নয়টি উপ-জনসংখ্যায় (স্যাটেলাইট পপুলেশন) বেশি সিংহ রয়েছে। গির অঞ্চলে রয়েছে ৩৯৪টি সিংহ, আর বাইরের এই নয়টি উপ-জনসংখ্যায় রয়েছে ৪৯৭টি সিংহ। এর মধ্যে গিরের আশেপাশের জেলায় নতুন তিনটি সিংহের বসতি গড়ে উঠেছে — যেমন বারদা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, জেটপুর শহর সংলগ্ন এলাকা এবং বাবরা ও জাসদন শহরের আশেপাশের অঞ্চল — সবই গুজরাটে অবস্থিত।
গণনা প্রতিবেদনে বারদা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যকে গুজরাটে সিংহের 'দ্বিতীয় বাড়ি' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারও এ বিষয়ে একমত যে, বারদাকে আরও সিংহের আবাস হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এর উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা করা হবে। প্রকৃতপক্ষে, এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের মার্চ মাসে ঘোষিত ২৯,২৭৭ কোটি রুপির (৩৪১ মিলিয়ন ডলার) প্রজেক্ট সিংহ সংরক্ষণ কর্মসূচির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সিংহের সংখ্যা যতই বাড়ুক না কেন, এর আড়ালে থেকে যাচ্ছে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ। তারা প্রশ্ন তুলছেন, ভারত যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না মানুষের সঙ্গে সিংহের দ্বন্দ্ব কমাতে এবং দীর্ঘমেয়াদে সিংহের টিকে থাকা নিশ্চিত করতে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত ২৫ জুন গুজরাটের আমরেলি জেলায় এক সিংহ একটি খামার থেকে পাঁচ বছরের এক শিশুকে টেনে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে। এই ঘটনা দেখায় যে, সিংহের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঝুঁকিও বাড়ছে।
সিংহগুলো কীভাবে গণনা করা হয়েছিল?
গুজরাট বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সিংহের সংখ্যা গণনা করা হয়েছিল ১১ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত দুইটি ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণ শিডিউলে। এ জন্য রাজ্যের সিংহের বিস্তৃত এলাকা ৭৩৫টি স্যাম্পলিং অঞ্চলে ভাগ করা হয়। প্রতিটি অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন একজন গণনাকারী (এনুমারেটর) এবং তার সঙ্গে দুইজন সহকারী গণনাকারী। সিংহদের খুঁজে বের করে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়, এবং যাতে একই সিংহ একাধিকবার গণনায় না আসে, সেজন্য আশেপাশের স্যাম্পলিং এলাকার সঙ্গে ছবি ও তথ্য মিলিয়ে যাচাই করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে বড় বিড়াল সংরক্ষণের বিশেষজ্ঞ এবং ভারতের ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউটের (ডব্লিউআইআই) সাবেক কর্মকর্তা যদবেন্দ্রদেব ঝালা সতর্ক করে বলেন, বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ঘুরে বেড়ানো বন্য মাংসাশীদের মোট সংখ্যা গণনারর পদ্ধতিটি তাদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের বৈজ্ঞানিক উপায় নয়। কারণ এই ধরনের প্রাণীরা অনেক বড় এলাকায় বিচরণ করে, ফলে তাদের সঠিকভাবে গণনা করা কঠিন।

১৯৮৫ সাল থেকে সিংহ সংরক্ষণের সঙ্গে যুক্ত অভিজ্ঞ বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ রবি চেল্লমও গুজরাটের এই পদ্ধতির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দুই দিন ২৪ ঘণ্টা করে একটানা সতর্ক থাকতে হয় — যা খুবই কঠিন। তার মতে, 'এই সময়ে কর্মীদের ক্লান্তির মাত্রা এবং সতর্কতা কতটা হ্রাস পায়, তা সহজেই কল্পনা করা যায়। এভাবে নির্ভরযোগ্য ও সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস হয় না।'
উভয় বিশেষজ্ঞের মতে, সিংহের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য আরও নির্ভরযোগ্য এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো সিংহের ছবি তোলা এবং তাদের গোঁফের নকশা বিশ্লেষণ করা, যা মানুষের আঙুলের ছাপের মতো প্রতিটি সিংহের জন্য অনন্য। এভাবে প্রতিটি সিংহকে আলাদা করে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, ফলে একই সিংহ একাধিকবার গণনা এড়ানো যায়।
তবুও ঝালা বলেছেন, প্রচলিত পদ্ধতির কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও প্রকৃত সিংহের সংখ্যা সম্ভবত সরকারি গণনার সংখ্যার কাছাকাছিই রয়েছে।
সিংহের সংখ্যা এতো দ্রুত বাড়ার কারণ কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, গুজরাট সরকারের কার্যকর নীতিমালা ও সিংহদের নতুন এলাকায় খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা — এই দুইয়ের মিলিত ফলেই সিংহের সংখ্যা এভাবে বেড়েছে।
যদবেন্দ্রদেব ঝালা বলেন, যতদিন পর্যাপ্ত খাদ্য ও আশ্রয় থাকবে এবং সিংহরা মানুষের আক্রমণের শিকার হবে না, ততদিন তাদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। তার ভাষায়, 'খাদ্যের উৎস রয়েছে — যেমন গৃহপালিত পশু, মৃত প্রাণীর দেহ (যা সিংহরা খায়) এবং শিকার হিসেবে বন্য বা ছুটে বেড়ানো গরু।'
তিনি আরও বলেন, গুজরাট সরকার গৃহপালিত পশু হারানোর ক্ষতিপূরণ প্রায় বাজার মূল্যের সমান দেয় এবং নিয়মিত বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে মিলিয়ে তা সংশোধন করে। এর ফলে মানুষ ও সিংহ একসঙ্গে বসবাস করতে পারছে।
নতুন গণনায় দেখা গেছে, গুজরাটের উপকূলবর্তী জেলা ভবনগর ও রাজ্যের উপকূলবর্তী আশেপাশের এলাকাগুলো — যা গিরের শুষ্ক পত্রঝরা বনভূমি থেকে অনেক দূরে — এখন ২১২টি সিংহের আবাসস্থল হয়ে উঠেছে।
ঝালা বলেছেন, উপকূলের এই সিংহরা প্রোসোপিস জুলিফ্লোরা নামে পরিচিত এক ধরনের কাঁটাযুক্ত ঝোপঝাড় (এক প্রকার মেসকুইট গাছ) ব্যবহার করে আশ্রয় হিসেবে। দিনের বেলা এই ঝোপঝাড় তাদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়, আর রাতে তারা আশেপাশের কৃষি ও পশুচারণ এলাকায় বেরিয়ে গিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে।

গুজরাট আর কতগুলো সিংহকে আশ্রয় দিতে পারবে?
২০১০ সালের পর থেকে গুজরাটে সিংহের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে, আর এদের বিচরণক্ষেত্র ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার থেকে ৩৫ হাজার বর্গকিলোমিটারে পৌঁছেছে।
তবে এর মধ্যে মাত্র ১,৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা সংরক্ষিত বনাঞ্চল, আর এর মধ্যে মাত্র ২৫০ বর্গকিলোমিটার শুধু সিংহের জন্য নির্দিষ্ট। ফলে বেশিরভাগ সিংহই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বাইরে বসবাস করছে।
গণনা অনুযায়ী, ৪৫ শতাংশ সিংহকে বনাঞ্চলের বাইরের এলাকায় পাওয়া গেছে, যেমন অনাবাদি জমি, কৃষিজমি ও মানুষের বসতিবর্তী এলাকা।
রবি চেল্লম সতর্ক করেছেন, এই সিংহরা নানা বিপদের মুখোমুখি হচ্ছে — খোলা কূপে পড়ে যেতে পারে, ভারী গাড়ি বা ট্রেনের ধাক্কায় মারা যেতে পারে, বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুতায়িত হতে পারে বা বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেছেন, এখন নিয়মিতই সিংহদের অস্বাভাবিক স্থানে দেখা যাচ্ছে — যেমন মানুষের বাড়ির ছাদে, হোটেলের বেজমেন্ট পার্কিংয়ে, এমনকি ব্যস্ত মহাসড়কে।
রবি চেল্লম বলেন, 'এই অঞ্চল ইতোমধ্যেই তার ধারণক্ষমতার অনেক বেশি সীমা অতিক্রম করেছে।' তার মতে, যেখানে মূলত মানুষের বসতি, সেখানে সিংহের সংখ্যা বাড়িয়ে যাওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
ঝালাও এতে একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, 'প্রশ্ন হলো: মানুষ তাদের আশেপাশে এত বড় মাংসাশী প্রাণী কতটা সহ্য করতে প্রস্তুত?' কারণ সিংহের সংখ্যা যত বাড়ছে এবং তারা যত মানুষের গ্রাম, শহর বা কৃষিজমিতে ছড়িয়ে পড়ছে, মানুষের ঝুঁকি ও দ্বন্দ্বও তত বাড়ছে।
সিংহের সংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে গুজরাটের মানুষের উপর কী প্রভাব পড়ছে?
কনজার্ভেশন বায়োলজি নামে বিজ্ঞান ভিত্তিক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, গুজরাটে গৃহপালিত পশুদের ওপর সিংহের আক্রমণের ঘটনা ঘটে এমন গ্রামগুলোর সংখ্যা প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। পাশাপাশি, সিংহের দ্বারা প্রতি বছর মারা যাওয়া গৃহপালিত পশুর সংখ্যা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই তথ্য ২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছিল।

গবেষণার সহ-লেখক যদবেন্দ্রদেব ঝালা আশঙ্কা করছেন, মানুষের সঙ্গে সিংহের দ্বন্দ্ব ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। তিনি বলেন, "একটি বড় মাংসাশী প্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থান করা সহজ নয়। মানুষকে শিখতে হয় যে, রাতে বাচ্চাদের মাঠে ছেড়ে রাখা যাবে না, ঘরের আশেপাশের গাছপালা পরিষ্কার রাখতে হবে, সন্ধ্যার সময় মাঠে শৌচ করতে বের হওয়া রোধ করতে হবে, এবং গৃহপালিত পশুর জন্য দেওয়ালবন্দি পাড়া তৈরি করতে হবে।"
রবি চেল্লম এই উদ্বেগের সাথে একমত পোষণ করে বলেছেন, সিংহ ও মানুষের সংঘর্ষ বাড়ছে। তিনি বলেন, অনেকেই, বিশেষ করে সরকার, সিংহের সংখ্যা বাড়াকে ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখে থাকলেও বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। সিংহের সংখ্যা যত বাড়ছে, ততই সিংহদের পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। তিনি উল্লেখ করেন, মানুষদের দ্বারা সিংহদের হয়রানির ঘটনা অনেকবার ঘটেছে এবং একই সাথে সিংহদের মানুষের ওপর আক্রমণের প্রবণতাও বাড়ছে।
বারদা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য কি সত্যিই সিংহের 'দ্বিতীয় বাড়ি'?
গণনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮৭৯ সালের পর প্রথমবারের মতো বারদায় সিংহের স্থায়ী জনসংখ্যা (১৭টি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গুজরাট সরকার বারদাকে সিংহের 'দ্বিতীয় বাড়ি' হিসেবে প্রচার করলেও, বিশেষজ্ঞ রবি চেল্লম ও যদবেন্দ্রদেব ঝালা বলছেন, বারদার আকার ছোট এবং গিরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় এটি আলাদা বা ভৌগোলিকভাবে স্বতন্ত্র আবাসস্থল হিসেবে বিবেচিত হয় না, যা স্বাধীনভাবে আলাদা সিংহের জনসংখ্যা টিকিয়ে রাখতে পারে।
এখানে বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করেছেন কেন বারদার সিংহদের আলাদা জনসংখ্যা বলা যায় না। ঝালা বলেন, বারদায় সিংহের বসতি সিংহের বিচরণ এলাকা বিস্তারের লক্ষণ হলেও, এটি আলাদা জনসংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হবে না কারণ বারদা গিরের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন সংযুক্ত—অর্থাৎ সিংহরা দুই স্থানেই মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারে।
চেল্লম ব্যাখ্যা করে বলেন, সিংহদের 'দ্বিতীয়' মুক্ত বিচরণ জনসংখ্যা হিসেবে গড়ে তোলার মূল উদ্দেশ্য হলো ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করা, যাতে একক স্থানে যদি বিপদ ঘটে তাহলে পুরো বিপন্ন প্রজাতির জনসংখ্যা হারানোর ঝুঁকি কমানো যায়। যেহেতু বারদা গির থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, তাই এটি এই গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে না।
বারদা গির থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, কিন্তু আকারে অনেক ছোট — মাত্র ২০০ বর্গকিলোমিটার, যেখানে গিরের মূল সংরক্ষিত এলাকা ১,৪০০ বর্গকিলোমিটার।
ঝালা উল্লেখ করেন, বারদা একটি ছোট এলাকা যেখানে শিকারি পশুর সংখ্যা খুবই কম, তাই এটি সিংহদের একটি সুস্থ ও টেকসই জনসংখ্যা ধারণ করতে সক্ষম নয়।
তিনি আরও বলেন, এই ছোট এলাকা নানা ঝুঁকির সম্মুখীন, যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, অরণ্য আগুন, রোগ মহামারি, রাজনৈতিক সহিংসতা, অবৈধ শিকার এবং যুদ্ধ। এসব কারণে সিংহের টিকে থাকার সম্ভাবনা কম।
কেন সিংহদের গুজরাটের বাইরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না?
এটি এমন একটি প্রশ্ন যা সংরক্ষণবিদদের উদ্বেগের বিষয় এবং ভারতের সর্বোচ্চ আদালতকেও হতাশ করেছে।

২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে দেশের শীর্ষ আদালত গুজরাট সরকারের কাছে নির্দেশ দিয়েছিল যে, তারা ছয় মাসের মধ্যে কিছু এশীয় সিংহকে প্রতিবেশী রাজ্য মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে স্থানান্তর করবে, যাতে ভৌগোলিকভাবে পৃথক ও মুক্ত বিচরণকারী সিংহের একটি জনসংখ্যা গড়ে ওঠে। কুনোকে সিংহদের জন্য উপযুক্ত বন ও ঘাসের এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
যদিও গুজরাট সরকার শীর্ষ আদালতকে আশ্বস্ত করেছিল যে তারা আদেশ পালন করবে, তবু ১২ বছর পরও আদেশ বাস্তবায়িত হয়নি এবং রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কেউই এর জন্য কোনো শাস্তির মুখোমুখি হয়নি। রবি চেল্লম এই অবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং বলেন, 'সিংহদের কুনোতে স্থানান্তর সংক্রান্ত আদেশ না মানার ক্ষেত্রে গুজরাট সরকার ও ভারত সরকার যে অবাধভাবেই কাজ করছে তা দেখার জন্য খুবই দুঃখজনক।'
ঝালা বলেন, সিংহদের কুনোতে স্থানান্তর না হওয়া শুধু সরকারের ভুল নয়, এটি বন্যপ্রাণী বিজ্ঞানী ও সংরক্ষণকর্মীদেরও এক ধরনের ব্যর্থতা। তিনি বলেন, সরকার ছাড়া সংরক্ষণ কাজ করা সম্ভব নয়। তার মতে, বিজ্ঞানীরা সরকারকে যথেষ্ট ভালোভাবে বোঝাতে পারেননি যে কুনো সিংহদের 'দ্বিতীয় বাড়ি' হিসেবে আদর্শ স্থান।
চিতাগুলো কি কুনোতে স্থানান্তরিত হয়নি?
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার আটটি চিতাবাঘ নামিবিয়া থেকে কুনো ন্যাশনাল পার্কে আনা হয়, ভারতের চিতাবাঘ পুনঃপ্রবর্তনের অংশ হিসেবে। চিতাবাঘ ভারতের বন থেকে ১৯৫২ সালে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
তবে কুনোতে চিতাবাঘ আনার পর বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল যে, এটি কি কুনোতে সিংহ স্থানান্তরের পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করবে কিনা।
২০২২ সালে চিতাবাঘ আনার পরিকল্পনাটি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ঝালা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতের বন্যে চিতাবাঘ ফেরার ঘটনা "অসাধারণ" এবং কুনোতে সিংহ ও চিতাবাঘ সহজেই একসঙ্গে বাস করতে পারে।

ঝালা বলেন, চিতাবাঘদের কারণে সিংহদের কুনোতে স্থানান্তর বাধাগ্রস্ত হবে না। বরং কুনোর ভূদৃশ্য ও শিকার জায়গা সিংহদের জন্য আরও উপযুক্ত, তাই সিংহরা চিতাবাঘের চেয়ে সেখানে আরও ভালো বাসা গড়তে পারবে।
ঝালা আরও বলেন, সিংহ আনা চিতাদের জন্যও সহায়ক হতে পারে। কুনোতে বিশ্বের সর্বোচ্চ চিতাবাঘের ঘনত্ব রয়েছে, প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে ২২টি চিতাবাঘ। চিতাবাঘ চিতাদের জন্য বেশি হুমকি হয়ে দাঁড়ায়; সিংহ চিতাবাঘের ঘনত্ব কমাতে সাহায্য করতে পারে কারণ তারা চিতাবাঘ, বিশেষ করে বাচ্চাদের শিকার করে।
তবে রবি চেল্লম এই চিতাবাঘ পুনঃপ্রবর্তন প্রকল্পের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "এটি আসলে চিতাবাঘ সংরক্ষণের চেয়ে বেশি সিংহদের কুনোতে স্থানান্তর বিলম্ব করার কৌশল।"
ঝালার মতো, রবি চেল্লমও মনে করেন সিংহরা কুনোতে ভালোই বাঁচতে পারবে। তিনি বলেন, সিংহ খুবই শক্তিশালী ও সহিষ্ণু প্রাণী। যদি স্থানান্তরের পরিকল্পনা ভালোভাবে করা হয় এবং সাবধানে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে কুনোতে সিংহরা সফলভাবে টিকে থাকবে এই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু বড় বিড়ালগুলোর পরবর্তী ভবিষ্যৎ কী?
এখানে সিংহদের ভবিষ্যত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ঝালা গুজরাটে সিংহ সংরক্ষণকে একটি "অসাধারণ সাফল্যের গল্প" বলে প্রশংসা করেছেন। তবে তিনি মনে করেন সিংহ প্রজাতির জন্য আরও অনেক কিছু করা যেতে পারে। তিনি বলেন, শুধু কুনো বা গুজরাটেই সীমাবদ্ধ না থেকে সিংহদের তাদের ঐতিহাসিক বিস্তৃত এলাকা জুড়ে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা উচিত, যা একসময় পারস্য (বর্তমান ইরান) থেকে পূর্ব ভারতের অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এশিয়ার ভারত ব্যতীত বাকি অংশে শেষ সিংহদের ইরানে ১৯৪০-এর দশকে শিকার করা হয়েছিল।
চেল্লম সতর্ক করে বলেছেন, গুজরাটে সিংহের বর্তমান সংখ্যার ঘনত্ব একটি প্রকার টাইম বোমার মতো কাজ করছে, প্রতিদিনই টিক টিক করে এটি সবাইকে সতর্ক করছে। অর্থাৎ যেকোনো সময় সিংহের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
মানুষের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সিংহের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে তিনি সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন যে, গুজরাটে পর্যাপ্ত স্থান এবং ভালো মানের আবাসস্থলের অভাব একটি গুরুতর বাধা এবং এটি সিংহ সংরক্ষণের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।