এখনও হদিস মেলেনি ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত আকরামের মরদেহের, শোকে বিহ্বল পরিবার

রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধে রুশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়ে নিহত বাংলাদেশি যুবক আকরাম মিয়ার (২৫) মরদেহের এখনও কোনো হদিস মেলেনি। মৃত্যুর ৯ দিন পার হয়ে গেলেও ইউক্রেন সীমান্ত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি রুশ বাহিনী।
এছাড়া, মরদেহের অবস্থান শনাক্ত করতে না পারায় বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় শোকে বিহ্বল আকরামের পরিবার।
জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের লালপুর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের মোরশেদ মিয়ার ছেলে আকরাম মিয়া পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। বাবা কৃষিকাজ করে সংসার চালান। অভাবের সংসারে নুন আনতেই পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। তাই পরিবারের সবার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে ধার-দেনা করে পাড়ি জমান রাশিয়া।
এজন্য নরসিংদীর পলাশ উপজেলার আমতলা এলাকায় একটি বেসরকারি ট্রেনিং সেন্টার থেকে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শেখেন আকরাম। বিদেশে যেতে প্রায় ১০ লাখ টাকা দেন ট্রেনিং সেন্টার কর্তৃপক্ষকে। প্রথমে পোল্যান্ড যাওয়ার কথা থাকলেও ভিসা মেলেনি। পরবর্তীতে ট্রেনিং সেন্টার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গত ৯ মাস আগে রাশিয়ায় গিয়ে একটি চীনা কোম্পানিতে কাজ নেন আকরাম।
আকরামের স্বজনরা জানান, প্রথম ৪ মাস ঠিকমতো বেতন দিলেও হঠাৎ করেই বেতন বন্ধ করে দেয় চীনা কোম্পানি। একদিকে পরিবারের সবার ভরণপোষণ, অন্যদিকে বিদেশযাত্রার জন্য করা ঋণের বোঝা; সবমিলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন আকরাম। এক সময় ওই চীনা কোম্পানি আকরামসহ আরও কয়েকজন বাংলাদেশিকে বিক্রি করে দেয় রুশ বাহিনীর কাছে। এরপর তাদেরকে পাঠানো হয় যুদ্ধে। ইউক্রেন সীমান্তে যুদ্ধের মাঠেই গত ১৪ এপ্রিল নিহত হন আকরাম। তার সহযোদ্ধা মেরাজ ফোন করে মৃত্যুর খবর জানান।
আকরামের বাবা মোরশেদ মিয়া বলেন, 'মেরাজের বাড়ি ময়মনসিংহে। সে আমার ছেলের সঙ্গে রুশ বাহিনীতে ঢুকেছে। আমার ছেলে যখন মারা যায়, তখনও তারা একসঙ্গে ছিল। ভাগ্যক্রমে মেরাজ বেঁচে ফিরেছে।'
তিনি বলেন, 'সেখানে প্রতিমুহূর্তে মৃত্যু ভয়। গতকাল ক্যাম্প কমান্ডার আমার ছেলের মরদেহ আনতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল বলে মেরাজ ফোন করে জানিয়েছে। কিন্তু মরদেহ না এনেই ফিরে আসে ওরা। ঠিক কোন জায়গায় মরদেহ পড়ে আছে, কী অবস্থায় আছে- সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেনি মেরাজ।'
তিনি আরও বলেন, 'আকরামের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না ওর মা। একটু পর পর হাউমাউ করে কেঁদে উঠে সন্তানকে খুঁজছে।'
আকরামের মা মবিনা বেগম বলেন, 'আমার ছেলে পুরো সংসারটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। ছেলেটাকে হারালম। এখনও ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। কীভাবে সংসার চলবে আর কীভাবে ঋণ পরিশোধ করব- কিছুই বুঝতে পারছি না। সন্তানের মরদেহ দেখতে পারব কীনা তাও জানি না। ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না, তাও যদি ছেলের মরদেহ দেখতে পারতাম'!
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, 'আকরামের মরদেহের অবস্থান সম্পর্কে জানতে না পারায় সরকারিভাবে কিছু করা যাচ্ছে না। তবে ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। আকরামের পরিবারকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে মন্ত্রণালয়ে যেতে বলা হয়েছে।'