সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের পর জেন-জিদের বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল; গুলি, নিহত অন্তত ১৯

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপসহ বড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নেপাল সরকার। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানী কাঠমান্ডুতে তরুণ সমাজের নেতৃত্বে আন্দোলনে পুলিশি গুলিতে (৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অন্তত ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে দেশটির গণমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা থেকে কার্যকর হওয়া এ সিদ্ধান্তে এক ডজনের বেশি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।
দুর্নীতি ও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে কাঠমান্ডু, পোখারা, বুটওয়াল, ভৈরহাওয়া, ভারতপুর, ইটাহারি এবং ডামাকসহ বিভিন্ন শহরের যুবকরা রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভের সময় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় প্রশাসন কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করে। কিছু বিক্ষোভকারী সংসদ ভবনে ঢুকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, শুধু কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত ১৭ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারে ৮ জন, এভারেস্ট হাসপাতালে ৩ জন, সিভিল হাসপাতালে ৩ জন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ২ জন এবং ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে ১ জন মারা যায়।
এদিকে, সারাদেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সুনসরিতে ইটাহারি শহরে বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ জন মারা গেছে।

এর আগে নতুন বানেশ্বরের সিভিল সার্ভিস হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক মোহনচন্দ্র রেগমি জানিয়েছেন, সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, মহাঙ্কালস্থ ট্রমা সেন্টারের প্রধান মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. বদ্রি রিজাল জানান, দুইজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।
রেগমি জানান, নিহতদের মধ্যে একজনের বয়স আনুমানিক ৩৫-৪০ বছর এবং অপরজনের বয়স প্রায় ২০-২৫ বছর। ডা. রিজাল জানান, এখানে ৩০ জনের বেশি আহতকে আনা হয়েছে। দুইজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছানো হয়। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এর আগে সিভিল সার্ভিস হাসপাতালের মেডিকেল ডিরেক্টর দীপক পাওডেল জানান, শুধু তাদের হাসপাতালে ১০০ জনের বেশি আহতকে আনা হয়। অধিকাংশের শরীরে রাবার বুলেটের আঘাত রয়েছে।
আহতের সংখ্যা এত বেশি যে সিভিল হাসপাতাল অনেক রোগীকে অন্যত্র পাঠিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আহতদের বেশিরভাগকে সিভিল হাসপাতাল ও বীর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সাইনামঙ্গলস্থিত কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতালে অনেককে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
কাঠমান্ডু উপত্যকা পুলিশ কার্যালয়ের মুখপাত্র শেখর খানাল এ বিষয়ে জানান, 'কতজন আহত হয়েছেন তা এখনও হিসাব করা হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারী উভয়পক্ষেই অনেকে আহত হয়েছেন।'
সরকার কর্তৃক কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশাধিকার বন্ধ এবং রাজনৈতিক দুর্নীতির প্রতিবাদে মূলত 'জেন জি' নামে পরিচিত তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নামে। সংঘর্ষের পর সংসদ ভবনের চারপাশসহ বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশাধিকার বন্ধের বিষয়ে মানবাধিকার ও গণমাধ্যম সংগঠনগুলো এ পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা অলি সরকারের এই সিদ্ধান্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দিচ্ছে এবং ব্যবসার ক্ষতি করছে।
সরকার জানিয়েছে, মোট ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ- যার মধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্স, রেডিট, লিংকডইন, পিন্টারেস্ট ও সিগন্যাল রয়েছে- নতুন আইন অনুযায়ী নিবন্ধন না করায় এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।