কার্যালয় ঠিক হচ্ছে, বাসা ঠিক হচ্ছে...ডিসেম্বরের আগেও আসতে পারেন তারেক রহমান: মির্জা ফখরুল
ডিসেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসতে পারেন বলেন মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে টিবিএস মাল্টিমিডিয়ার বিশেষ আয়োজন 'রোড টু ইলেকশন'-এ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের নির্বাহী সম্পাদক শাখাওয়াত লিটনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুলকে প্রশ্ন করা হয়, 'আগামী নির্বাচনে আপনাদের প্রাইম মিনিস্ট্রিয়াল ফেস কে হচ্ছেন?' উত্তরে তিনি বলেন, 'আমাদের তো বলাই আছে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের চেয়ারপার্সন, তিনি যদি সুস্থ থাকেন তাহলে তিনি হবেন। তা না হলে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান।'
তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কবে— এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'খুব শীঘ্রই ফিরবেন। উনার দুই-একটা সমস্যা আছে, আইনগত সমস্যা আছে, দেশে গুছিয়ে নেওয়ার ব্যাপার আছে।'
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে বা পরে ফিরবেন কি-না— এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'এটা এই মুহূর্তে আমি বলতে পারবো না। আগে তো বটেই।'
ডিসেম্বরে শিডিউল ঘোষণার আগে ফিরবেন কি-না— এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আরো আগে আসতে পারেন উনি। এই বিল্ডিং-এ (গুলশানে অবস্থিত বিএনপির চেয়ারপার্সনের কার্যালয়) তার কার্যালয় ঠিক করা হচ্ছে, তার বাসা ঠিক করা হচ্ছে।'
উল্লেখ্য, ৭ আগস্ট রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অন্যান্য সংকট কেটে যাবে এবং সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে সাক্ষাৎকারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নির্বাচনের পথ কতটা মসৃণ- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট শাসন দিয়ে সব পথ ভেঙে-চুড়ে তছনছ করে দিয়েছে। একটা গরুর গাড়ি চলার মতোও উপযোগী না। অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতায় এটি ঠিকঠাক করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরাও এতে সহযোগিতা করছি।
তিনি বলেন, আমার খুব দৃঢ় বিশ্বাস আগামী নির্বাচন সবার কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হবে। এখন যে নির্বাচন কমিশন এসেছে, তারা যথেষ্ট নিরপেক্ষ এবং যোগ্য। আর সরকারও অত্যন্ত নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে।
এদিকে, রোববার (৭ আগস্ট) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে জাতীয়তাবাদী আয়কর আইনজীবী ফোরামের আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তারেক রহমান দেশে ফিরলেই বিএনপির নির্বাচনি প্রচারণার অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, 'অতি শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। সেদিন নির্বাচন প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে। বলছি না নির্বাচন হয়ে যাবে। তবে তিনি দেশে এলে বিএনপির নির্বাচনি প্রচারণার অর্ধেক হয়ে যাবে সারাদেশে।'
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, 'তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন হবে এক অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক ঘটনা।'
তারেক রহমানের আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে ৮৪টি মামলা চলেছে। এর মধ্যে বিচারিক আদালত পাঁচ মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। মামলাগুলো হলো—২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি, অর্থ পাচার, নড়াইলের মানহানির মামলা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা।
তবে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে হাইকোর্ট এসব মামলার সব সাজা খারিজ করে তাকে খালাস দেন। চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অন্য আসামীদের খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এর আগে, এ মামলায় তারেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাবরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত।
এদিকে তার দেশে ফেরার বিষয়ে নানা আলোচনা চলছে। গত ১০ জুন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ নিয়ে বক্তব্য দেন। এর পর ১২ জুন স্বরাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, 'তার দেশে ফেরায় কোনো বাধা নেই। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, তাই ইচ্ছা করলে দেশে ফিরতে পারবেন।'