সাংবাদিক আনিস আলমগীর ৫ দিনের রিমান্ডে
রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালত এই আদেশ দেন।
এর আগে, আনিস আলমগীরকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান।
আনিসের পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী এর বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতে আনিস আলমগীর বলেন, 'মাননীয় আদালত, আমি সাংবাদিক। আমি ক্ষমতাকে প্রশ্ন করি। দুই যুগ ধরে আমি এটা করে এসেছি। আমার জব (কাজ) কারও কাছে নতজানু হওয়া না। আমাকে যারা নির্দিষ্ট দলের গোলাম বানাতে চায়, এটা তাদের সমস্যা। আমার ফেসবুকে সব বক্তব্য দিই। এখানে অপ্রকাশিত নেই কোনো কিছু। আমি ইউনূসের (প্রধান উপদেষ্টা) বাড়ি আক্রমণের কথা বলেছি। কিন্তু কোন কারণে বলেছি, ৩২–এ আক্রমণ এটা প্রতিহিংসার রাজনীতি। এটা ফিরে আসবে। সেটা বলেছি। জুলাইয়ের স্পিরিট কীভাবে বাড়বে, আমরা সেটা বলেছি। এখানে আমার ভুল কী হয়েছে, আমি জানি না। আমার সঙ্গে কারো যোগসূত্র নেই। ড. ইউনূস যদি চায়, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাবে, বানাতে পারে।'
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি আনিস আলমগীর এক মাস আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে টকশোতে মন্তব্য করেন 'আওয়ামী লীগের অপ্রকাশিত নেতারা সরকারকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে'।
৩ নং আসামি মেহের আফরোজ শাওন তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে এ বছরের ২৬ নভেম্বর শেখ হাসিনার লকার থেকে সোনার গয়না উদ্ধারের ঘটনাকে কটাক্ষ করে সরকারবিরোধী পোস্ট দেন। তিনি এই ঘটনাকে 'একে বারে তেলেসমাতি কারবার' বলে মন্তব্য করেন।
একই ঘটনায় ৪ নম্বর আসামি ইমতুরা তিশ ইমতিয়াজ তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে 'এটাই সাইন্স' বলে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন।
এটা ছাড়াও উল্লিখিত আসামিরা অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন সময়ে তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে বিভিন্ন প্রকার উসকানিমূলক পোস্ট ও বক্তব্য দিয়ে দেশের জননিরাপত্তা বিপন্ন করা, অন্য ব্যক্তিকে হত্যার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা এবং অন্য ব্যক্তিকে হত্যা-গুরুতর জখম করার ষড়যন্ত্র ও সহায়তা করার জন্য প্ররোচিত করে।
গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি ২ নম্বরে অবস্থিত একটি ব্যায়ামাগার থেকে বের হওয়ার পর তাকে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবির কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা একটি মামলায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাত আড়াইটার পর উত্তরা পশ্চিম থানায় উপস্থিত হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন 'জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স'-এর কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ।
অভিযোগপত্রে নাম থাকা অন্যরা হলেন—অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন,মডেল মারিয়া কিশপট্ট এবং উপস্থাপক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে ঘাপটি মেরে দেশে অবস্থান করে দেশকে অস্থিতিশীল ও অবকাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র করে আসছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামিরা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোতে বসে নিষিদ্ধ সংগঠনকে ফিরিয়ে আনার প্রপাগান্ডা চালিয়ে আসছে। এর মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা করছে। এসব বিভিন্ন পোস্টের ফলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অবকাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছেন।
