ইরানে 'সহিংস গ্রেপ্তারের' পর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে শান্তিতে নোবেলজয়ী নার্গিসকে, পরিবারের অভিযোগ
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ইরানের মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মোহাম্মদীকে গ্রেপ্তারের সময় বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। এতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। নার্গিস মোহাম্মদীর পরিবারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে নার্গিস ফাউন্ডেশন। খবর বিবিসি'র।
নার্গিস ফাউন্ডেশন জানায়, ৫৩ বছর বয়সী এই মানবাধিকার কর্মী রোববার কারাগার থেকে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তিনি জানান, সাদা পোশাকের নিরাপত্তা এজেন্টরা তার ওপর হামলা চালায় এবং লাঠি দিয়ে মাথা ও ঘাড়ে প্রচণ্ড আঘাত করে। আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে তাকে দুবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিতে হয়েছে।
গত শুক্রবার মাশহাদ শহরে একটি স্মরণসভায় যোগ দিতে গেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইরানি কর্তৃপক্ষ মারধরের অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও জানিয়েছে, 'উসকানিমূলক বক্তব্য' দেওয়ার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। মাশহাদের প্রসিকিউটর হাসান হেমাতিফার জানান, নার্গিস মোহাম্মদীসহ মোট ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে শান্তি ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।
নার্গিস মোহাম্মদী ২০২৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। জীবনের ১০ বছরেরও বেশি সময় তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন। 'রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার' এবং 'জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের' অভিযোগে তিনি ১৩ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। যদিও তিনি এসব অভিযোগ ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার করে আসছেন। চিকিৎসার প্রয়োজনে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তাকে কুখ্যাত এভিন কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
শুক্রবার তিনি মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী খসরু আলিকর্দির স্মরণসভায় অংশ নেন, যার মৃত্যুকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো 'রহস্যজনক' বলে উল্লেখ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেখানে প্রায় ১৫ জন এজেন্ট নার্গিসকে ঘিরে ধরে, তার চুল ধরে টানে এবং লাঠিপেটা করে। এ সময় সেপিদেহ ঘোলিয়ান ও পুরান নাজেমিসহ আরও দুই মানবাধিকার কর্মীকেও মারধর করা হয়।
ফোনে নার্গিস পরিবারকে জানান, তাকে 'ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার' অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং হত্যার হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, 'আমরা তোমার মাকে শোকের সাগরে ভাসাব।' বর্তমানে কোন নিরাপত্তা সংস্থা তাকে আটক করে রেখেছে, সে বিষয়ে তাকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে নরওয়ের নোবেল কমিটি। তারা একে সহিংস গ্রেপ্তার' হিসেবে উল্লেখ করে নার্গিস মোহাম্মদীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা জাফর পানাহি ও মোহাম্মদ রাসুলফসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
