চোরাগোপ্তা হামলার পুনরাবৃত্তি না ঘটতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ ইসির
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কা থাকলেও তা কঠোরভাবে দমনের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কা নেই জানিয়ে ভোট বানচালের চেষ্টা যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি।
রোববার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে চার নির্বাচন কমিশনারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, 'চোরাগোপ্তা হামলার সম্ভাবনা… আমরা এগুলোকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। এই ধরনের হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য কঠোর হস্তে দমন করা হবে।'
তিনি বলেন, 'ইসির মেসেজ ভেরি ক্লিয়ার—নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই, নির্বাচন সময়মতো হবে। নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে তা দমন করা হবে।'
বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। পরদিনই ঢাকায় এক সম্ভাব্য প্রার্থীর ওপর গুলির ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই জরুরি সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মূল্যায়ন, অগ্রগতি ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে বৈঠকের বিষয়ে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, 'তফসিল ঘোষণার পর থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। সামনে আমাদের করণীয় ও কৌশল কী হওয়া উচিত, সে বিষয়েও মতামত নেওয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে শরীফ ওসমান হাদীর ওপর চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। এ নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।' তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত জানানো হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, 'এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হচ্ছে—এমন কিছু বিষয় উঠে এসেছে।'
বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ তৈরি হচ্ছে কি না। জবাবে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, 'যারা এই কাজটি করেছে, তাদের উদ্দেশ্যই ছিল ভীতির পরিবেশ তৈরি করা।' তিনি বলেন, এই ভয় মোকাবিলায়ই ইসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছে এবং 'এটা সাকসেসফুল হতে দেওয়া হবে না।'
তিনি জানান, বিশেষ অভিযান 'র্যাবেল হান্ট' শুরুর পর গ্রেপ্তার হওয়া অনেক সন্ত্রাসী জামিনে মুক্ত হয়ে সমাজে অবস্থান করছে। এ বিষয়ে কী করণীয়, তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কা মোকাবিলায় ইসি কঠোর নির্দেশ দিয়েছে বলে জানান তিনি।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, 'এই চোরাগোপ্তা হামলাগুলো কোনো বড় পরিকল্পনার অংশ নাকি বিচ্ছিন্ন ঘটনা—সেখানে কোনো ব্যর্থতা আছে কি না, এসব বিষয় নিয়ে মূল্যায়ন হয়েছে।' তিনি জানান, দুটি উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন অফিসে আগুন দেওয়ার চেষ্টা থেকেও চোরাগোপ্তা হামলার সম্ভাবনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, 'আমরা এগুলোকে উড়িয়ে দিচ্ছি না, ভবিষ্যতে যে সম্ভাবনা নেই, তাও বলছি না। আজকের মূল উদ্দেশ্য ছিল—এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে এবং হলে তা কঠোরভাবে দমন করা।' এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত ধরার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বলেন, 'পাশাপাশি একটা মেসেজ সকল বাহিনীর পক্ষ থেকে সমস্বরে এসেছে- যারাই এই নির্বাচনকে বানচাল করার, প্রতিহত করার বা ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো চেষ্টা করবেন তারা ব্যর্থ হবেন এবং যেখানে যতটুকু দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন, সকল বাহিনী ততোটুক দৃঢ় হবে।'
সানাউল্লাহ জানান, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মেসেজ ভেরি ক্লিয়ার- নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নাই। তিনি বলেন, 'নির্বাচন সময়মতো হবে এবং নির্বাচনের পথে এই ধরনের যে বাধাগুলো তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে এগুলো সম্বন্ধে নির্বাচন কমিশন অবহিত, সরকার অবহিত। আজকে আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি। সরকার তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব কার্যক্রম এ পর্যন্ত নেয়া হয়েছে সেগুলো নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে যেসব জায়গাতে আরো অধিকতর কাজ করার অবকাশ আছে সেগুলো নিয়েও কথা হয়েছে।'
