নির্বাচনী অপরাধ দমনে ৩০০ বিচারিক কমিটি, থাকছে সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষমতা
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম অনুসন্ধান এবং নির্বাচনী অপরাধসমূহের সংক্ষিপ্ত বিচারের জন্য দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে 'নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি' গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অনুচ্ছেদ ৯১এ এবং ৯১এএ-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার উপসচিব মোহাম্মদ দিদার হোসাইন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কমিটিগুলো গঠন করা হয়। ইসি জানিয়েছে, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে এই কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, এই ৩০০টি কমিটিতে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মূল দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে—গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯১এ-এর অধীনে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়মসমূহ অনুসন্ধান করা। এছাড়া উক্ত আদেশের অনুচ্ছেদ ৭৩, ৭৫, ৭৭ এবং ৯১বি(৩)-এর আওতাধীন অপরাধসমূহের সংক্ষিপ্ত বিচারকার্য সম্পন্ন করা।
প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরপিও'তে আবারও সংশোধনী আনে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আরপিও'র সংশোধিত গেজেট জারি হয়। এতে অনুসন্ধান কমিটির (ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটি) নাম পরিবর্তন করে 'নির্বাচনী অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি' (ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি অ্যান্ড অ্যাডজুডিকেশন কমিটি) করা হয়েছে। পাশাপাশি এই কমিটিকে নির্দিষ্ট নির্বাচনী ও ফৌজদারি অপরাধের বিচার করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। আগে অনুসন্ধান কমিটি কেবল নির্বাচনী অপরাধের অনুসন্ধান করে ইসিকে প্রতিবেদন দিত এবং সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইসি ব্যবস্থা নিত। এখন ওই কমিটি সরাসরি বিচার করার ক্ষমতাও পেল। এর ফলে অপরাধ দ্রুত দমন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে ইসি।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, 'আরপিও ও আচরণবিধি অনুযায়ী কেউ আইন ভঙ্গ করলে এই কমিটিই বিচার করতে পারবে।'
রোববার জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিটির কর্মকর্তারা প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকেই নিজ দপ্তর হতে তাৎক্ষণিকভাবে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন এবং নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত থাকবেন। তারা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন এবং প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ হতে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া নির্বাচন-পূর্ব কোনো অনিয়ম সংঘটিত হলে কমিটিগুলো ৩ দিনের মধ্যে তা অনুসন্ধান করে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ করবে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা উক্ত অনুসন্ধান প্রতিবেদন সিনিয়র সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বরাবর প্রেরণ করবেন। অতিসত্ত্বর উক্ত প্রতিবেদন পিডিএফ ফরমেটে কমিশন সচিবালয়ের আইন অনুবিভাগের উপসচিবের (আইন বিষয়ক-১ শাখা) অভ্যন্তরীণ অ্যাকাউন্টে প্রেরণ করতে হবে। একইসঙ্গে কমিটিগুলো সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতিতে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
ইসি আরও জানায়, যদি কোনো নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম 'সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫'-এর লঙ্ঘনজনিত কারণে আরপিও, ১৯৭২-এর ৯১খ(৩) অনুচ্ছেদের আওতাধীন অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হয়, তবে কমিটি উক্ত আদেশের ৯১কক অনুচ্ছেদ মোতাবেক সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করতে পারবে। এছাড়া আরপিও'র অনুচ্ছেদ ৭৩, ৭৫ ও ৭৭-এর আওতাধীন অপরাধসমূহও এই কমিটি ৯১কক অনুচ্ছেদ মোতাবেক সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করতে পারবে। কমিটির কার্যক্রমে সহায়তার জন্য নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও জানানো হয়, দায়িত্বপালনকালে একজন বেঞ্চ সহকারী, স্টেনোগ্রাফার বা অফিস সহকারীকে সহায়ক কর্মচারী হিসেবে সঙ্গে রাখা যাবে। সকল জেলা প্রশাসককে চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে সার্বক্ষণিকভাবে জিপগাড়ি, মাইক্রোবাস বা স্পিডবোট এবং ক্ষেত্র মতো প্রয়োজনীয় যানবাহন সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সকল পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারকে কমিটির কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য দুইজন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য নিয়োগের অনুরোধ করা হয়েছে। অনুসন্ধান বা বিচারকার্য পরিচালনার জন্য কমিটির চাহিদামতো প্রয়োজনীয় স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার, স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কমিটির কর্মকর্তা ও সহায়ক কর্মচারীরা বিধি মোতাবেক যাতায়াত ভাতা বা দৈনিক ভাতা (টিএ/ডিএ) পাবেন।
প্রসঙ্গত, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি। 'জুলাই জাতীয় সনদ' বাস্তবায়নে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে এদিন। গত বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
