আমাকে শোরুমে নিলে সব সত্যি বের হবে: হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক
'আমাকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশকে বলেছি ভালো করে তদন্ত করেন। প্রয়োজনে ওই শোরুমে আমাকে নিয়ে যান, তাহলে সব সত্যি বের হবে। আমি নির্দোষ, আমি এই ঘটনার কিছুই জানি না'—আদালতের কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসব কথা বলেন শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক মো. আব্দুল হান্নান।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিদারুল আলমের আদালতে রিমান্ড শুনানি চলাকালে বিচারকের উদ্দেশে আসামি এসব কথা বলেন।
এর আগে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সামিম হাসান আসামিকে আদালতে হাজির করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শামসুদ্দোহা সুমন।
শুনানিতে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, 'হাদিকে হত্যাচেষ্টায় যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছে সেটা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের মডেল তদন্ত কর্মকর্তা চিহ্নিত করেছেন। হত্যাচেষ্টার রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামি হান্নানের রিমান্ড প্রয়োজন। কীভাবে এই মোটরসাইকেল আসামিদের কাছে গেল, মালিক হয়েও তাদের সাথে কী সম্পর্ক—এ নিয়ে সারা দেশ উদ্বিগ্ন। প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামির সাত দিনের পুলিশি রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।'
রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, 'মোটরসাইকেলের নম্বর পরীক্ষা করে দেখা গেছে এর মালিক হান্নান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমন করতে বিভিন্ন সময়ে মোটরসাইকেলটি ব্যবহার হয়েছে বলে জানা গেছে। এই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর থেকে এ বিষয়ে এলোমেলো তথ্য দিয়েছেন। সাবেক পতিত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের অধীনে এদের একটি চক্র আছে। এরা টার্গেট করে আলাদা আলাদা আক্রমণ করছে। এরই অংশ হিসেবে তারা হাদিকে আক্রমণ করে। তদন্ত কর্মকর্তার নিবেদন অনুযায়ী সাত দিনের পুলিশি রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।'
তবে এদিন আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানির শেষ মুহূর্তে আদালতের কাছে কথা বলার অনুমতি চান আসামি মো. আব্দুল হান্নান।
আদালত অনুমতি দিলে আব্দুল হান্নান বলেন, 'আমি এই মোটরসাইকেলটি মিরপুর মাজার রোড থেকে কিনেছিলাম। পরবর্তীতে অসুস্থ ছিলাম বলে সবাই আমাকে মোটরসাইকেল চালাতে নিষেধ করে। এ কারণে আমি মোটরসাইকেল চালানো বন্ধ রাখি ফলে সেটা বাসায় পড়ে ছিল। পরে আমি মোটরসাইকেলটি একটি শোরুমে বিক্রি করি। দুই মাস পরে নাম পরিবর্তন করে দেওয়ার কথা ছিল। শোরুম থেকে আমাকে নাম পরিবর্তনের জন্য ডাকা হলেও অসুস্থতার জন্য যেতে পারিনি। আমাকে গ্রেপ্তারের সময় আমি পুলিশকে বলেছি, ভালো করে তদন্ত করেন। প্রয়োজনে ওই শোরুমে আমাকে নিয়ে যান, তাহলে সব সত্যি বের হবে। কিন্তু তারা আমাকে সেখানে নিয়ে যায়নি। বরং মামলা দিয়ে থানায় আটকে রেখেছে। আমি নির্দোষ। আমি এই ঘটনার কিছুই জানি না।'
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর তাকে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়।
এর আগে, গত শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মো. আব্দুল হান্নানকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ওই মোটরসাইকেলটি নিজের বলে স্বীকার করেছেন।
