ট্রাম্পের শুল্কারোপ: বাংলাদেশ থেকে পোশাকের চালান স্থগিত রাখার অনুরোধ কিছু মার্কিন ক্রেতার

শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু মার্কিন ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে পোশাকের শিপমেন্ট ১০ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রাখতে বলেছে। তারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ট্যারিফ (শুল্ক) বৃদ্ধির বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
তারা বলেছেন, একটি শীর্ষস্থানীয় মার্কিন ক্রেতা ইতোমধ্যে তার সরবরাহকারীদের অতিরিক্ত শুল্ক বহন করার নির্দেশ দিয়েছে।
একটি শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে (টিবিএস) জানিয়েছে, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ওয়ালমার্ট, লেভিস এবং পিভিএইচের মতো শীর্ষ মার্কিন ক্রেতারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ছাড় চেয়েছে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) -এক নেতা বলেন, মার্কিন ক্রেতা গ্যাপ ইতোমধ্যে তাদের সরবরাহকারীদের অতিরিক্ত শুল্ক পরিশোধের নির্দেশনা দিয়েছে।
এদিকে, রপ্তানিকারকরা শিপিং এবং অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে 'শুল্ক বৃদ্ধি এড়াতে' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্ধারিত রপ্তানি পণ্যের চালানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্কাপের নজিরবিহীন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত ৩ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, বাণিজ্য ব্যাহত করবে এবং আমেরিকার বাজারে দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস করবে।
কিছু ক্রেতা শিপমেন্ট স্থগিত করতে বলছে
প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, 'আমরা শুনেছি ওয়ালমার্টের হয়ে কাজ করা সাপ্লায়াররা তাদের শিপমেন্ট স্থগিত করছে, কারণ গ্রাহক তাদের এমনটি করতে বলেছে।'
তবে তিনি বলেন, 'আমাদের কোনো ক্রেতা আমাদের থেকে উৎপাদন স্থগিত করতে বা শিপমেন্ট বিলম্বিত করতে বলেনি। আমরা শিপমেন্ট নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের পণ্য উৎপাদন করছি।'
কারখানার মালিকের কথা উল্লেখ করে বিজিএমইএ'র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, তার ক্রেতা ইতোমধ্যে অতিরিক্ত ট্যারিফ শেয়ার করতে বলেছেন, তবে রপতানিকারকদের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা খুব কঠিন হবে।
তিনি আরও বলেন, 'কিছু ছোট ক্রেতা ইতোমধ্যে তাদের সরবরাহকারীদের এই ৩৭% শুল্ক প্রদান করতে বলছে এবং কিছু ক্ষেত্রে তারা এর একটি অংশ শেয়ার করার জন্য বলছে। আমার মনে হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।'
স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, 'এখন ক্রেতারা তাদের সরবরাহকারীদের কাছে নতুন শুল্ক কাঠামো অনুযায়ী মূল্য তালিকা পর্যালোচনা করার জন্য অনুরোধ করতে পারে।'
৯ এপ্রিলের আগে যুক্তরাষ্ট্রগামী চালানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ
বিজিএমইএ চট্টগ্রাম অফিস বাংলাদেশ শিপিং অ্যাসোসিয়েশনকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে, যাতে ৯ এপ্রিলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির উদ্দেশ্যে পাঠানো পণ্যগুলির শিপমেন্টকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এই চিঠির একটি অনুলিপি টিবিএসের হাতে এসেছে।
চিঠিতে বিজিএমইএ চট্টগ্রাম অফিস বলছে, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পণ্য বহনকারী অনেক কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দর ও বিভিন্ন আইসিডিতে শিপমেন্টের অপেক্ষায় রয়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানির এসব কনটেইনার ৯ এপ্রিলের আগে শিপমেন্টের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বিজিএমইএ'র সাবেক সহসভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, 'যেসব কন্টেইনার বন্দরেই আটকে রয়েছে, সেগুলির জন্য কর্তৃপক্ষ এবং শিপিং লাইনগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে, যেন আগামী তিন দিনের মধ্যে সেগুলোর শিপমেন্ট সম্পন্ন হয়।'
মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক ৭ এপ্রিল
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার তারিখ নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে।
তিনি বলেন, 'ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি অনুযায়ী সোমবার (৭ এপ্রিল) আমাদের একটি বৈঠক আছে এবং মঙ্গলবারের মধ্যে প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারব বলে আশা করছি।'
বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, 'বাণিজ্য ব্যবধান কমিয়ে আনতে কিছু অশুল্ক বাধা হ্রাস এবং তাদের ব্যবসা সহজতর করার জন্য আমাদের আলোচনার সুযোগ রয়েছে। যা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং এর ফলে এই ট্যারিফও কমানো সম্ভব হতে পারে।'
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের জন্য বাংলাদেশ যদি ব্যাপকভাবে শুল্ক হ্রাস করে, তবে অন্যান্য গন্তব্যে বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রপ্তানিতে এটি প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ বাংলাদেশ সেখানে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা ভোগ করে।
তিনি আরও বলেন, 'তবে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে রপ্তানি করার সময় শুল্ক দিয়ে থাকে।'
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের বিষয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, টি রপ্তানিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সরবরাহকারী উভয়ের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।'
তিনি বলেন, 'উচ্চ শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ভোক্তাদের খরচ ও পোশাকের দামকে প্রভাবিত করবে এবং এটি আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।'