গাজা যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ চাইলেন ইসরায়েলের ৬০০ সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা

গাজা যুদ্ধ থামাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ইসরায়েলের প্রায় ৬০০ অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানেরাও রয়েছেন।
সম্প্রতি ট্রাম্পকে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে তারা লিখেছেন, 'আমাদের পেশাদার মূল্যায়ন অনুযায়ী, হামাস আর ইসরায়েলের জন্য কৌশলগত হুমকি নয়।'
ইসরায়েলিদের বিশাল এক অংশের কাছে ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সঠিক পথে পরিচালনার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে তারা লিখেছেন, 'যুদ্ধ বন্ধ করুন, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুন, জনদুর্ভোগ লাঘব করুন।'
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনা যখন স্থবির হয়ে পড়েছে এবং নেতানিয়াহু যখন গাজায় সামরিক অভিযান আরও জোরদার করার উদ্যোগ নিচ্ছেন, ঠিক তখন অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ট্রাম্পের কাছে এ অনুরোধ জানালেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। জবাবে গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি অভিযানে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
ইসরায়েলি বাধা-নিষেধের কারণে গাজায় খাদ্য ও ওষুধের প্রবেশ সীমিত হওয়ায় সেখানে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে এ পর্যন্ত অন্তত ১৮০ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ৯৩ জনই শিশু। জাতিসংঘ-সমর্থিত সংস্থাগুলো বলছে, 'গাজায় এখন দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে।'
সম্প্রতি হামাস ও ইসলামিক জিহাদের প্রকাশিত দুটি ভিডিওতে কঙ্কালসার দুই ইসরায়েলি জিম্মিকে দেখা যায়। ভিডিও দুটি ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
ভিডিওটি প্রকাশের পর নেতানিয়াহু দুই জিম্মির পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং জানান, তাদের ফিরিয়ে আনতে 'অবিরাম ও নিরলস চেষ্টা' অব্যাহত থাকবে। তবে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, নেতানিয়াহু মূলত 'হামাসকে সামরিকভাবে পরাজিত করেই' জিম্মিদের মুক্ত করতে চান।
এ পরিস্থিতিতে গাজায় নতুন করে অভিযান শুরু হলে তা ইসরায়েলের মিত্রদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। মিত্র দেশগুলো তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে।
জিম্মি পরিবারের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা অন্যতম একটি সংগঠন নতুন অভিযানের বিরোধিতা করে বলেছে, 'নেতানিয়াহু ইসরায়েল ও জিম্মিদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।' ট্রাম্পকে লেখা চিঠিতে এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
চিঠিতে ইসরায়েলের সাবেক মোসাদপ্রধান তামির পারদো, সাবেক শিন বেতপ্রধান (ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা) আমি আয়ালন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালনসহ আরও অনেকে সই করেছেন।
আয়ালন বলেন, 'প্রথমে এই যুদ্ধ ছিল ন্যায়সঙ্গত, প্রতিরক্ষামূলক। কিন্তু যখন আমরা আমাদের সব সামরিক লক্ষ্য অর্জন করেছি, তখন থেকেই এই যুদ্ধ আর ন্যায়সঙ্গত নেই।'
চিঠিতে সই করা সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তারা কমান্ডারস ফর ইসরায়েল'স সিকিউরিটি (সিআইএস) নামের একটি সংগঠনের সদস্য। তারা এর আগেও তাদের সরকারকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে মনোযোগী হতে বলেছিলেন।
ট্রাম্পকে লেখা চিঠিতে তারা বলেন, 'গাজা যুদ্ধ থামান! সিআইএস-এর পক্ষ থেকে আমরা আপনার কাছে অনুরোধ করছি গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে। আপনি যেমন লেবাননের যুদ্ধ থামাতে ভূমিকা রেখেছিলেন, এবার গাজার ক্ষেত্রেও তাই করুন।'
তবে ট্রাম্প আসলে নেতানিয়াহুর ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও তিনি সবসময়ই ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তবুও গত সপ্তাহে তিনি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, 'গাজায় সত্যিকারের দুর্ভিক্ষ' চলছে। তবে এ কথা অস্বীকার করেছেন দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক