নাহিদ, আখতার, সারজিস, হাসনাতসহ ৪৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত, আছেন দুই উপদেষ্টাও
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দেশের ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার ৯ আসনসহ সারা দেশের ৪৪ আসনের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে এনসিপি।
ঢাকার ৯ আসনের মধ্যে নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১, আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়া ঢাকা-১২, তাসনিম জারা ঢাকা-৯, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকা-১৮ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন বলে এনসিপির একটি সূত্র জানিয়েছে। ঢাকার এই ৯ টি আসনের মধ্যে বিএনপি ৪ টি আসনই ফাঁকা রেখে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে গত সোমবার। ঢাকা-১১ এ বিএনপির প্রার্থী এম এ কাইয়ূম, ঢাকা-১২ তে সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা-১৪ তে সানজিদা ইসলাম তুলি এবং ঢাকা-৫ এ বিএনপির নবী উল্লাহ নবীকে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে বিএনপি।
এনসিপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সারজিস আলম পঞ্চগড়-১, আখতার হোসেন রংপুর-৪, হাসনাত আদুল্লাহ কুমিল্লা-৪, মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর-১, আরিফুল ইসলাম আদিব ঢাকা-১৪, আব্দুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ থেকে নির্বাচন করবেন বলে প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে।
এ আসনগুলোর মধ্যে অধিকাংশ আসনেই বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে পঞ্চগড়-১ এ ব্যরিস্টার মোহাম্মদ নওশাদ জমির, রংপুর-৪ এ মোহাম্মদ এমদাদুল হক ভরসা, কুমিল্লা-৪ এ মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, নোয়াখালী-৬ এ মোহাম্মদ মাহবুবের রহমান শামীম বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত হয়েছেন। তবে মাহফুজের আসন লক্ষ্মীপুর-১ আসনটি বিএনপি কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার, নতুন ভোটারদের টার্গেটিং এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে হাঁটা শুরু করা এ দলটি ইতোমধ্যেই ৪৪টি আসনে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। তাদের এ তালিকায় বর্তমান সরকারে থাকা দুইজন ছাত্র উপদেষ্টার আসনও প্রায় চূড়ান্ত।
দলের কেন্দ্রীয় নীতি-নির্ধারণী একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী শুক্রবার (৭ নভেম্বর) আসন ভিত্তিক প্রার্থীদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। তবে এর আগে কয়েকটি আসনে কৌশলগত সমন্বয় হতে পারে। তবে নতুন নেতৃত্বের ওপর ভরসা রাখছে এনসিপি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত প্রথাগত পরিবারকেন্দ্রিক নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এনসিপি নির্বাচনে নতুন প্রজন্ম, পেশাজীবী, শিক্ষিত সমাজ ও নীতি-নিষ্ঠ তরুণদের এগিয়ে আনতে চায় বলে দলীয় নেতারা দাবি করেছেন। দলের নীতিনির্ধারকদের ভাষ্য "যোগ্যতা, সততা, নিষ্ঠা এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি" এই চার প্রধান মানদণ্ডে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে।
এনসিপির প্রাথমিক তালিকায় রাজনীতি, সাংবাদিকতা, আইন, উদ্যোক্তা খাত, শিক্ষা, আইটি, উন্নয়ন খাত এবং তরুণ সামাজিক নেতৃত্বের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এতে ফুটে উঠেছে তাদের নতুন ভোট ব্যাংক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা এবং রাজনীতিতে নৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার বার্তা। দলীয় একটি নথি অনুযায়ী, ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে বৃহৎ অংশের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। রাজনৈতিক
রাজধানীর আসনগুলোর পাশাপাশি দলটি নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, ফেনী, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, নওগাঁ এবং খাগড়াছড়িতেও প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দলটির নেতারা জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চল, উত্তরবঙ্গ ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলেও সাংগঠনিক যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং মাঠে সক্রিয় প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
এনসিপির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা জানিয়েছেন, দলের মূল লক্ষ্য সরকার বা বিরোধী দল হওয়ার চেয়ে বড় "রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন"। দলটির মতে, এ দেশের তরুণ সমাজ ইতোমধ্যেই রাজনীতিতে পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার, আর সেই স্বপ্নের জায়গা থেকেই এনসিপির যাত্রা।
একজন কেন্দ্রীয় নেতা টিবিএসকে বলেন, "বাংলাদেশ রাজনীতিতে আমরা একটি নৈতিক ও আদর্শভিত্তিক বিকল্প শক্তি তৈরি করতে চাই। আদর্শ, সততা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে এটাই আমাদের নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি।"
তবে তারা স্বীকার করেন, নির্বাচন যেমন কঠিন চ্যালেঞ্জ, তেমনি মাঠের সংগঠন বিস্তৃত করা এবং ভোট-কেন্দ্রিক রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করাও সহজ নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নতুন দল হওয়ায় সাংগঠনিক কাঠামো ও ভোট ব্যাংক গঠনে এনসিপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে তরুণ প্রজন্ম ও নিরপেক্ষ ভোটারদের মধ্যে জায়গা করে নিতে পারলে তারা চমক দেখাতে পারে।
এনসিপি ইতোমধ্যে ডিজিটাল ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়া টিম, গ্রাসরুট ভলান্টিয়ার এবং স্থানীয় সমন্বয় টিম গঠন করা হয়েছে। বিশেষত প্রথমবার ভোটার এবং শিক্ষিত তরুণ সমাজকে কেন্দ্র করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
দলের এক সংগঠক টিবিএসকে বলেন, "ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, ওপেন ডিসকাশন, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক নীতিগত টাউন হল মডেল এবং আদর্শভিত্তিক রাজনীতি তৈরিতে আমরা ফোকাস করছি। মানুষের আশা ফেরাতে চাই।"
দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে এনসিপি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে তালিকা তৈরী করছে। তবে অন্তত ৫০ টি আসনে লড়াই করে জিতে আসার মতো প্রার্থী থ্কবে বলে তারা জানিয়েছেন। শুক্রবারের মধ্যে একটি তালিকা চূড়ান্ত হবে।
মঙ্গলবার মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে প্রধান করে ১০ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। মঙ্গলবার ভোরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণার কথা জানানো হয়। কমিটির সেক্রেটারি করা হয়েছে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাকে।
