‘আমি ভাবছিলাম সিঙ্গাপুর যাব, যেতে পারি?’: হাসিনা-তাপসের আরও একটি ‘ফোনালাপ’ ভাইরাল

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের মধ্যে হওয়া গত বছরের আরও একটি 'ফোনালাপ' ফাঁস হয়েছে।
গতকাল (৪ আগস্ট) রাতে আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ফেসবুকে প্রকাশিত এই অডিও ক্লিপটি দুটি ভাগে বিভক্ত।
তবে, ফাঁস হওয়া অডিওর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
অডিওর দ্বিতীয় অংশের বর্ণনা অনুযায়ী, তাপস সিঙ্গাপুরে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে থামিয়ে দেয়। তখনই তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
অডিওর দ্বিতীয় অংশ: তাপসের সিঙ্গাপুর যাত্রা
অডিওর দ্বিতীয় অংশে তাপস সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। তবে, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে থামিয়ে দেয়। এসময় তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সায়েরের মতে, অডিওর দ্বিতীয় অংশটি ৩ আগস্ট ২০২৪ সকাল ৮টা ১৬ মিনিটে ঘটে। তাপস শেখ হাসিনাকে ফোন করে সালাম দিয়ে বলেন, 'আমি একটু সিঙ্গাপুর যাব, যেতে চাচ্ছিলাম। আমি কি যেতে পারি?'
জবাবে হাসিনা বলেন, 'হ্যাঁ, যাও। যাবা না কেন?... আমি কাউকে.. মিছিলে যেতে মানা করছি... সবাইকে প্রতিটি ওয়ার্ডে সতর্ক থাকতে হবে।'
তখন তাপস বলেন, 'আমি এয়ারপোর্টে চলে আসছি। জিও-টা (বিদেশ ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি আদেশ) এখনো হয় নাই বলে এখানে ইয়ে করছে না।'
হাসিনা তখন তাকে জিজ্ঞেস করেন, 'জিওটা সঙ্গে নিলে না কেন?'
তাপস উত্তরে বলেন, 'অ্যাপ্লাই করে দিছি, কিন্তু হতে হতে তো ১১টা-১২টা বাজতে পারে, মানে তোমার ওখানে যেতে। তো আমি ইমিগ্রেশনে আসছি, কাউকে ইমিগ্রেশনে বলা যাবে নাকি? আমার ফ্লাইট এখনি ছেড়ে দেবে।
হাসিনা উত্তর দেন, 'হ্যাঁ, বলা যাবে। ফাইল পাঠাইছো তো?' তাপস বলেন, 'হ্যাঁ, ফাইল প্রমিত মহোদয় পাঠাচ্ছেন।'
হাসিনা বলেন, 'আচ্ছা, দিয়ে দাও।'
তখন তাপস হাসিনাকে একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে অনুরোধ করে বলেন, 'এই যে এখানে অফিসার আছেন, ইমিগ্রেশন অফিসার।'
হাসিনা তখন জিজ্ঞেস করেন, 'কাউকে বলিয়ে দিতে হবে কি-না?'
তাপস বলেন, 'হ্যাঁ, আমি দিব ফোনটা?'
হাসিনা উত্তর দেন, 'না না, আমি তার সঙ্গে কথা বলব কেন। আমি অফিসের কর্মকর্তার মাধ্যমে বলিয়ে দিতে পারি।'
তাপস জিজ্ঞেস করেন, 'কাকে বলব তাহলে?'
হাসিনা বলেন, 'আমার সেক্রেটারিকে বললেই হবে, শাহ সালাউদ্দিন।'
তাপস নিশ্চিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, 'সালাউদ্দিন সাহেব?' শেখ হাসিনা উত্তর দেন, 'হ্যাঁ'
অডিওর প্রথম অংশ: তাপসের ফুফুর সাথে দেখা করার আবদার
সায়ের দাবি করেন যে অডিওর প্রথম অংশটি ২২ জুলাই সকাল ১১টা ৪৯ মিনিটে ঘটে। তাপস শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানান। তবে, উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে হাসিনা তাকে আসতে নিরুৎসাহিত করেন।
প্রথম অংশের ফোন কলে তাপস আবদার করেন, 'হাসুমনি, একটু আসতে চাচ্ছিলাম, তোমাকে দেখতে চাচ্ছিলাম, আসব?' জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'এসবের মধ্যে আসার দরকার নেই।'
তাপস তখন বলেন, 'তাহলে (কারফিউ) শিথিল হওয়ার পর আসি?'
হাসিনা বলেন, 'আমি তখন অফিসে থাকব। ব্যবসায়ীদের ডাকছি তো। ২-৩টার সময়।'
তাপস উত্তর দেন, 'আচ্ছা, তাহলে ওই সময় অফিসে এসে দেখা করে যাব।'
হাসিনা জিজ্ঞেস করেন, 'কী... কী হয়েছে?'
তাপস উত্তর দেন, 'তেমন কিছু না।'
শেখ হাসিনা তখন বলেন, 'এই পরিস্থিতিতে বাড়ির বাইরে কেন বের হবে?'
তাপস উত্তর দেন, 'আমি.. যাই হোক… অফিস খুলতে এবং নগর ভবনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম।'
তিনি উল্লেখ করেন যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং এই ধরনের পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে এবং তাকে গিয়ে সেগুলোর পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করতে হবে। 'এরপর, আমি ২টার পরে তোমার সাথে দেখা করব।'
এর আগে, আল জাজিরা শেখ হাসিনা ও তাপসের মধ্যে আরেকটি 'ফোনালাপ' যাচাই করে। সেই অডিওতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে তাপসকে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে আন্দোলনকারীদের দমন করতে হেলিকপ্টার ব্যবহারের মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিতে শোনা যায়।
ঐ অডিওতে শেখ হাসিনাকে তৎকালীন দক্ষিণ সিটি মেয়র তাপসকে উদ্দেশ করে বলতে শোনা যায়, 'যেখানেই ভীড় দেখা যাবে, ওটা ওপর থেকে – এখন তো ওপর থেকে করা হচ্ছে – ইতোমধ্যে কয়েকটা জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে। কিছু [আন্দোলনকারী] সরে গেছে।'
আরেকটি কথিত ফোনালাপে, যেটির সত্যতা আল জাজিরা যাচাই করেছে বলে জানায়, শেখ হাসিনা গত বছর আন্দোলনকারীদের ওপর 'সরাসরি মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ' দিয়েছিলেন। সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীকে 'যেখানে পাবে সেখানেই গুলি' করার আদেশ দিতে শোনা যায়।