আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য নতুন গাড়ি কেনার উদ্যোগ, বাসা খোঁজা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীদের জন্য

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত না হলেও ভবিষ্যৎ সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, উপদেষ্টা বা সমপর্যায়ের ব্যক্তিদের জন্য নতুন গাড়ি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এজন্য আগামী বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেসুর রহমানের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে। শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করবেন বলে সম্প্রতি একাধিক উপদেষ্টা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে টিবিএসকে বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনা মাথায় রেখে নতুন সরকারের মন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য এখন থেকেই গাড়ি কেনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি ও পরে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন শেষে এসব গাড়ি কিনতে বেশ সময় লাগবে। তাই এখন থেকেই প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে।
এছাড়া আগামী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের রাজধানীতে থাকার জন্য নতুন বাসা খোঁজার কাজও শুরু করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। আগামী সরকারের প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীরা কোথায় থাকবেন, সে বিষয়ে সুপারিশ করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ২০ জুলাই মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
এর আগে গত মে মাসে উপদেষ্টা বা মন্ত্রী ও সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য ২৫টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব প্রস্তুত করে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদনের জন্য উপত্থাপন করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গঠিত কমিটি তা অনুমোদন না করে ফেরত দিয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের জন্য গাড়ি সরবরাহ করে থাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর এসব গাড়ি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে।
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা একটি নতুন গাড়ি কত দিন ব্যবহার করবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন ও বিধান নেই। ১৯৮০-র দশকে সরকারের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ১০ বছর পরপর সরকারি গাড়ি প্রতিস্থাপনের কথা বলা আছে।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের পর মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য নতুন কোনো গাড়ি কেনা হয়নি। ফলে সর্বশেষ কেনা গাড়িগুলোর বয়সও প্রায় ৯ বছর হয়ে গেছে। বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরাও ওইসব গাড়ি ব্যবহার করছেন।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ ভিভিআইপি ও বিদেশি ডেলিগেটদের জন্য ২০টি মার্সিডিস বেঞ্জ কার কেনার প্রস্তাব করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব অত্যাধুনিক গাড়ির প্রতিটির দাম ধরা হয়েছিল প্রায় ৩.৫ কোটি টাকা। এছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য ৫০টি টয়োটা ক্যামরি হাইব্রিড সেডান কার কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, যার প্রতিটির দাম ধরা হয় প্রায় ১.০৫ কোটি টাকা।
এসব গাড়ি কেনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চেয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট ও সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কারণে এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়।
এর আগে, ২০১৮ সালের মে মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ৪৫তম সম্মেলন উপলক্ষে আগত বিভিন্ন দেশের অতিথিদের যাতায়াতের জন্য ৩০টি মার্সিডিজ ও বিএমডব্লিউ গাড়ি কিনে সরকার। সম্মেলনে ব্যবহারের পর এর মধ্যে কয়েকটি বিএমডব্লিউ গাড়ি তৎকালীন মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যদের ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া পাঁচটি গাড়ি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দিয়ে বাকিগুলো রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ও সরকারি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য সরকারি পরিবহন পুলে হস্তান্তর করা হয়।