এক দশকেরও বেশি সময় পর আবার কনটেইনার শিপিং খাতে ফিরছে বিএসসি

এক দশকেরও বেশি সময় পর আবার কনটেইনার শিপিং খাতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)।
সরকারি মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করছে ছয়টি নতুন জাহাজ কেনার জন্য, যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩০ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা)।
প্রস্তাবিত জাহাজগুলোর ধারণক্ষমতা হবে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টিইইউ (ট্রেন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) এবং এদের ড্রাফট থাকবে ৯ দশমিক ৮ মিটার। এগুলো মূলত চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন ট্রানশিপমেন্ট বন্দরে চলাচল করবে। এছাড়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাং ও তানজুং পেলেপাসসহ আঞ্চলিক গন্তব্যে এবং আন্তর্জাতিক চার্টার রুটেও চলার পরিকল্পনা রয়েছে।
ছয়টি নতুন কনটেইনার জাহাজ যুক্ত হলে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এইচআর লাইনস লিমিটেডের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কনটেইনার শিপিং বাজারে প্রবেশ করবে বিএসসি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বিএসসি দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের সঙ্গে একটি কনসেপ্ট পেপারে স্বাক্ষর করেছে, যা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য করা হয়েছে। এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থায়ন করবে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক এবং বাকিটা সরবরাহ করবে বাংলাদেশ সরকার।
দক্ষিণ কোরিয়ার ডেইসান শিপবিল্ডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও এইচডি হুন্দাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। প্রস্তাব অনুযায়ী, ছয়টি জাহাজ বছরে আনুমানিক ২ হাজার ২৬১ দশমিক ১৫ কোটি টাকা আয় করবে, যেখানে পরিচালন ব্যয় হবে ১ হাজার ২১৫ দশমিক ১১ কোটি টাকা।
বিএসসি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এই প্রকল্প বৃহত্তর জাহাজ সংগ্রহ পরিকল্পনার অংশ, ২০৩০ সালের মধ্যে আরও ১৬টি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে বাল্ক ক্যারিয়ারসহ অন্যান্য ধরনের জাহাজও থাকবে। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।
তিনি আরও বলেন, 'সবকিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে ২০২৭ ও ২০২৮ সালে ছয়টি জাহাজ সরবরাহের জন্য প্রস্তুত হবে।'
বিএসসি'র মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) ক্যাপ্টেন জামাল হোসেন তালুকদার বলেন, 'জাহাজ কেনার জন্য আমরা ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন পেয়েছি। এখন সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে।'
তিনি জানান, বিএসসি'র সর্বশেষ কনটেইনার জাহাজ 'এমভি বাংলার শিখা' ২০১৫ সালে স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করা হয়। নতুন জাহাজ যুক্ত হলে এক দশকেরও বেশি সময় পর বিএসসি আবার কনটেইনার শিপিং ব্যবসায় ফিরবে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক জাহাজ ভাড়ার হার বৃদ্ধির কারণে বিএসসি চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৪১ দশমিক ৮৮ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কোম্পানির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএসসি'র রাজস্ব ৩১ শতাংশ বেড়ে ২৯৭ কোটি টাকা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১৪২ দশমিক ৬২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১০০ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা।
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিএসসি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৪৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা তার ৫২ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একসময়ে ৪৪টি জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে মাত্র পাঁচটি জাহাজ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা দীর্ঘদিনের দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও অপরিকল্পিত পরিচালনার ফলাফল।
সম্প্রতি, বিএসসি ৩৭ বছর ধরে ব্যবহৃত দুটি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ—'বাংলার জ্যোতি' ও 'বাংলার সৌরভ'—৪৬ কোটি টাকায় বিক্রি করেছে। এসব জাহাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি মোট ১ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জন করেছে।