তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে মহাখালীতে সড়ক-রেলপথ অবরোধ

সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করার দাবিতে আজ (১৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থিত রেল ক্রসিংয়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার রেল যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান ঢাকা রেলওয়ে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা মুখলেসুর রহমান।
তিনি বলেন, "দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু অবরোধের কারণে ট্রেনটি যেতে পারেনি, স্টেশনেই আটকে আছে।"

বনানী পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল সরওয়ার জানান, রেললাইনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা আমতলী মোড়েও অবরোধ করেছেন।
বিক্ষোভের কারণে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড ও রেল ক্রসিং-এ আসা-যাওয়ার সব সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

জানা যায়, বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি মিছিল বের করেন। এর ১৫ মিনিটের মাথায় তারা রেল ক্রসিং ও সড়কে অবস্থান নেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এসে তাদের দাবি না শোনা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেলপথ ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
সরকারি তিতুমীর কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রফিক উদ্দিন রায়হান টিবিএসকে বলেন, "তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠন করতে হবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় করতে অনেক সময় প্রয়োজন কমিশন গঠন করলে ধারাবাহিকভাবে এ বিষয় তারা কাজ করবে। আমরা কমিশন গঠনের আশ্বাস না পেলে রাস্তা থেকে উঠবো না।"
বেলা ২টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। এ সময় বনানীর দুই পাশের রাস্তা বন্ধ দেখা গেছে; সড়কে কোনো গড়ি চলছে না।

শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একটি সাঁজোয়া যান এবং জলকামান-সহ পুলিশ সদস্যদের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
অবরোধের ফলে আটকে পড়া গাজীপুর পরিবহণ বাসের হেলপার মোহম্মদ ফারুক বলেন, "গাজীপুর থেকে গুলিস্থান গাড়ি যায়। আমরা বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার গাজীপুর চলে যাচ্ছি। যাত্রী সব নেমে হেঁটে চলে যাচ্ছে। আমাদের আজকে আয় কমে গেল।"
দুপুর ২ টায় গাড়িটিকে গাজীপুরের দিকে চলে যেতে দেখা যায়।

আকলিমা বেগম নামক একজন যাত্রী তার ৫ বছরের সন্তান নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, "কিছু হলেই রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন। আসলে আমাদের মতো সাধারণের এই ভোগান্তির কথা কেউ ভাবেন না।"
বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে মহাখালী এলাকায় গাড়ি না চলার কারণে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায় যাত্রীদের।
দুপুর ৩ টায় মহাখালীতে আটকে থাকা 'আজমেরি গ্লোরি 'গাড়ির ৭০ বছর বয়সি যাত্রী আজিজুল বলেন, "বেলা ১১ টা থেকে আটকে রয়েছি। গাড়িটি গাজিপুরের দিক যাবে। আমি গাজীপুর কোনাবাড়ি যাবো। জানি না আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো। সরকার কেন ব্যবস্থা নেয় না। বৃদ্ধ বয়সে এই ভোগান্তি সহ্য হয় না।"

এদিকে, অবরোধের কারণে নোয়াখালী থেকে আসা আন্তঃনগর ট্রেন উপকূল এক্সপ্রেস মহাখালী ক্রসিং পার হওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তা থামানোর চেষ্টা করেন। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেন থামানোর পরিবর্তে গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ট্রেনে ইট-পাথর ছুঁড়লে বেশ কয়েকটি জানালার কাঁচ ভেঙে যায়।
ট্রেনটি শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে চলে যেতে পারলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টে দেখা যায়, আক্রমণের ফলে ট্রেনের ভেতরে বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রেলওয়ে সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুমের কনস্টেবল আজিম জানান, "শিক্ষার্থীদের ছোঁড়া ইট-পাটকেলে ট্রেনের ভেতরে এক শিশুসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।"
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা এবং তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠনের দাবিতে কলেজটির শিক্ষার্থীরা গত কয়েক মাস ধরে সড়ক অবরোধ করে একাধিকবার বিক্ষোভ করেছেন।