গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা: স্বামী-স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার ৮

গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার ঘটনায় শহিদুল নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আজ (৯ আগস্ট) দুপুরে কিশোরগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে এ ঘটনায় এক নারীসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
এর আগে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পরিচয় শনাক্ত করার পর শুক্রবার দিবাগত রাতে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও তিনজনকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার অনন্তপুর গ্রামের হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে শাহজালাল (৩২), পাবনা জেলার চাটমোহর থানার পারবাড়িয়া গ্রামের কিয়ামুদ্দিন হাসানের ছেলে মো. ফয়সাল হাসান (২৩) এবং সুমন (২৬)।
এর আগে পুলিশ ও র্যাবের যৌথ অভিযানে জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার মাহমুদপুর গ্রামের মোবারকের ছেলে মো. মিজান ওরফে কেটু মিজান (৩৫), তার স্ত্রী গোলাপি (২৫), পাবনা জেলার ফরিদপুর থানার সোনাহারা গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. স্বাধীন (২৮) এবং খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ময়লাপোতা এলাকার মো. হানিফের ছেলে মো. আল আমিন (২১) গ্রেপ্তার হন।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান। তিনি জানান, গ্রেপ্তার আসামিরা গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করে আসছিল। তাদের অনেকে পূর্বের একাধিক মামলার আসামি।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফুটেজে তাদের হাতে দা, ছুরি ও চাপাতি দেখা গিয়েছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তাহেরুল হক চৌহান বলেন, হত্যার পর থেকেই একাধিক পুলিশ টিম গুরুত্বের সঙ্গে অভিযান চালিয়ে আসছিল। ফুটেজ বিশ্লেষণ ও অবস্থান শনাক্তের পর তাদের গ্রেপ্তার সম্ভব হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তার একটি মার্কেটের ভেতরে সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ–এর গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন।

পুলিশ জানায়, ঘটনার আগে মার্কেটের নিচে এক নারীর সঙ্গে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তির বাকবিতণ্ডার সময় কয়েকজন সন্ত্রাসী বাদশাকে ধারালো অস্ত্রে আঘাত করে তাড়া করে। তুহিন সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করায় সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে চায়ের দোকান থেকে টেনে বের করে কুপিয়ে হত্যা করে। ফুটেজে দেখা গেছে, হামলাকারীদের হাতে রামদা, বড় ছুরি ও চাপাতি ছিল।
হত্যাকাণ্ডের পর শুক্রবার রাতে গাজীপুর মহানগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে এবং ঢাকার তুরাগ থানার এলাকায় গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, বাসন থানা পুলিশ ও র্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
জিএমপির বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান জানান, সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় বাসন থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এর একটি মামলার বাদী নিহত তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম এবং অপরটি বাদশা মিয়ার ভাই, যিনি তুহিন হত্যার আগে সংঘটিত আরেকটি হামলার ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। উভয় মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তুহিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে চান্দনা চৌরাস্তা ঈদগাহ মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সহকর্মী, স্বজন ও সাধারণ মানুষ এতে অংশ নেন।
ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাতেই এলাকায় বিক্ষোভ হয় এবং শুক্রবার সকালে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক ইউনিয়ন মানববন্ধন করে। তারা দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানায় এবং প্রশাসনের 'ধীরগতিতে' ক্ষোভ প্রকাশ করে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার তাহেরুল হক চৌহান বলেন, চিহ্নিত আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে এবং শিগগিরই সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।