কাউকে গ্রেপ্তারের পর মিডিয়ার সামনে হাজির করে ব্রিফিং নেওয়া সম্পর্কে হাইকোর্টের প্রশ্ন

কাউকে গ্রেপ্তার বা আটকের পর, বিচার শেষ হওয়ার আগেই তাকে মিডিয়ার সামনে হাজির করে ব্রিফিং করার রেওয়াজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের পরই আইনশৃংখলা বাহিনী ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা করেন। তখন আটক বা গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে মিডিয়ার সামনে আনা বিচারকাজকে প্রভাবিত করার সামিল।
আদালত আরও বলেন, 'বিচার শেষ হওয়ার আগেই এভাবে ব্যক্তিকে মিডিয়ার সামনে উপস্থিত করা হয়, তা কি ঠিক? কোনো বিষয়ে তদন্ত চলার পর রিপোর্ট দেওয়ার আগেই ঘটনা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিডিয়ার সামনে কথা বলেন, যা অনুচিত। তখন সাংবাদিকরা কী করবে? তারা এসব ঘটনা পেলে তো লিখবেই।'
নারায়ণগঞ্জের এক স্কুলছাত্রী জীবিত থাকার পরও তাকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে করা মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে হাইকোর্টে করা আবেদনের শুনানিতে এমন প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্ট।
এর আগে হাইকোর্ট গত ২৭ আগস্ট এই মামলার সব নথি ও দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী তারা হাজির হন।
তারা হলেন, ওই মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা ও নারায়ণগঞ্জ সদর পুলিশ স্টেশনের সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) শামীম আল মামুন এবং মামলাটির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোস্তাফিজুর রহমান।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এ মামলার সব নথি নিয়ে হাইকোর্টের তলবে হাজির হয়ে দুই তদন্ত কর্মকর্তা (একজন সাবেক ও একজন বর্তমান) ব্যাখ্যা দেন।
সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা ব্যাখ্যায় বলেন, 'আমি তাদের অ্যারেস্ট করেছি, রিমান্ডে নিয়েছি। তারা স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছে। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দিয়েছি। ম্যাজিস্ট্রেট রেকর্ড করেছেন। আমার কী করার আছে?'
এ সময় আদালত মামলার তদন্তের সময় আসামির দোষ স্বীকার করা স্বাভাবিক কি না- এমন প্রশ্ন করেন। আদালত বলেন, 'পৃথিবীতে এমন কোনো নজির নেই, স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসামি দোষ স্বীকার করেছে। সেখানে ধর্ষণ ও হত্যার কথা দোষ না করেই স্বীকার করল? এই মামলার তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। ধর্ষণ ও হত্যা না করেও আসামিরা কীভাবে স্বীকার করল, এটা বড় খটকা।'
আবেদনের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনির শুনানিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, নেদারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আসামির জবানবন্দি গ্রহণের সময় আইনজীবীর উপস্থিতিতে বা আইনজীবীর মাধ্যমে নিয়ে থাকেন। দেশেও ১৬৪ ধারায় আসামির জবানবন্দি গ্রহণের সময় আইনজীবীর উপস্থিত থাকা উচিত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী। নারায়ণগঞ্জের ওই ঘটনার মামলার দুই তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরী।
শুনানি শেষ হওয়ার পর আদালত আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার আদেশের দিন নির্ধারণ করেন।
এর আগে গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে কথিত মৃত কিশোরী ফিরে আসা এবং তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ মামলার সব নথি তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই মামলায় তদন্তের সঙ্গে জড়িত দুই তদন্ত কর্মকর্তাকেও তলব করেন আদালত।
এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় দুই তদন্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টে উপস্থিত হন। এর শুনানি নিয়ে এসব অভিমত ব্যক্ত করেন হাইকোর্ট।
গত ২৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার স্কুলছাত্রীর জীবিত ফেরত আসার ঘটনায় নথি তলবের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন দায়ের করা হয়। ৫ আইনজীবীর পক্ষে মোহাম্মদ শিশির মনির এ আবেদন করেন।