অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ ফিরল সুপ্রিম কোর্টে; বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ

অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান (বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ) রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া, তিন মাসের মধ্যে পৃথক সচিবালয় গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে ফিরল বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। তারা জানিয়েছেন, এ রায়ের ফলে সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় স্থাপনে কোনো বাধা থাকল না।
এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম আমিকাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড. শরীফ ভূঁইয়া।
রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, "বিচারকদের শৃঙ্খলা, বদলি, ছুটি- সবকিছু ন্যাস্ত থাকবে সুপ্রিম কোর্টের উপরে, মাঝখানে চলে গিয়েছিল রাষ্ট্রপতির উপরে; আজকের এই রায়ের মাধ্যমে পুনরায় সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যস্ত করা হলো। একইসাথে ২০১৭ সালে সাবঅর্ডিনেট বিচার বিভাগীয় অফিসারদের জন্য যে ডিসিপ্লিনারি রুলস করা হয়েছে, এই রুলস অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে সেপারেট জুডিশিয়াল সেক্রেটারিয়েট গঠন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- রায় প্রাপ্তির দিন থেকে তিন মাসের মধ্যে।"
অ্যামিকাস কিউরি ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, "১১৬ অনুচ্ছেদকে পরবর্তীতে যেভাবে সংশোধন করা হয়েছিল, সেই সংশোধনগুলোকে আজকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। আপনারা জানেন যে, ১১৬ অনুচ্ছেদ- ১৯৭২ সালের সংবিধানে যেভাবে ছিল, তাতে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যস্ত ছিল।"
গত বছরের ২৫ অগাস্ট ১০ জন আইনজীবীর পক্ষে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চায়।
বর্তমান সংবিধানের (সংশোধিত) ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে।" ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, "বিচারকর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্বে নিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকবে।"
পরে এ অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনায় বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি, শৃঙ্খলা ইত্যাদি নির্বাহী বিভাগের আওতায় চলে আসে। এসব কাজ রাষ্ট্রপতির পক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ করে থাকে।
মামলাটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি ও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। তবে গত ২৪ মার্চ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় বেঞ্চটি ভেঙে যায়। এরপর নতুন বেঞ্চ নির্ধারণের আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির।
গত ২০ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রিট আবেদন নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠন করেন। এরপর শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করা হলো।