বদরুদ্দীন উমর মারা গেছেন

লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী. রাজনীতিক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর মারা গেছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় আক্রান্ত বদরুদ্দীন উমরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আজ (৭ সেপ্টেম্বর) তাকে অসুস্থ অবস্থায় বাসা থেকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানে সকাল ১০টা ৫ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মো. মোকাদ্দেস টিবিএসকে বলেন, বদরুদ্দীন উমরকে ব্রেন-ডেড অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে শ্বাসকষ্ট ও নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে ১০ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ১ আগস্ট বাসায় ফেরেন তিনি।
বামপন্থী রাজনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক বদরুদ্দীন উমরের জন্ম ১৯৩১ সালে, ভারতের বর্ধমানে। তার বাবা আবুল হাশিম ভারতীয় উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ ছিলেন।
দেশভাগের পর বদরুদ্দীন উমরের পরিবার ঢাকায় চলে আসে এবং এখানে ১৯৫০ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। বর্ধমান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর করেন বরদুদ্দীন উমর। উচ্চতর ডিগ্রি নেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে।
বদরুদ্দীন উমরের পেশাজীবন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন১৯৬৮ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে সরাসরি বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত হন।
বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ছিলেন তিনি। এক সময় পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন। ২০০৩ সালে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নামে একটি সংগঠন গড়ে সভাপতির দায়িত্ব নেন তিনি।
২০২৫ সালে বদরুদ্দীন উমর দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন, কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এ বিষয়ে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, '১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুলোর কোনোটি গ্রহণ করিনি। এখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের দেওয়া এই পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে আমি এটা জানিয়ে দিচ্ছি।'
তার গবেষণামূলক কাজের মধ্যে রয়েছে 'পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি' (তিন খণ্ডে), 'সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা', 'পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতি', 'বাঙালীর সমাজ ও সংস্কৃতির রূপান্তর', 'ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ' এবং 'চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলাদেশের কৃষক'।