যুক্তরাষ্ট্রে হুন্দাই কারখানায় অভিযান; শতাধিক দক্ষিণ কোরীয় আটক, সিউলে জরুরি বৈঠক

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে হুন্দাইয়ের একটি ব্যাটারি কারখানায় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের এক বিশাল অভিযানে শত শত দক্ষিণ কোরীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনার পর সিউলে জরুরি বৈঠক করেছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার।
দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ জানায়, আটক প্রবাসীদের মুক্তির দাবি ও ঘটনাটির কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ঘটনাস্থল জর্জিয়ায় কূটনীতিক পাঠানো হয়েছে।
উক্ত কারখানাটি হুন্দাই ও এলজি এনার্জি সলিউশনের যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত। এলজি জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অধিকাংশ ব্যবসায়িক সফর স্থগিত করা হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবারের ওই অভিযানে ৪৭৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। আটককৃতরা অবৈধভাবে ওই ব্যাটারি কারখানায় কাজ করছিল বলে অভিযোগ আছে।
উল্লেখ্য, এই ব্যাটারি প্ল্যান্টটি জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের অন্যতম বৃহৎ বিদেশি বিনিয়োগ প্রকল্প।
যদিও এই অভিযানের ফলে বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল, হোয়াইট হাউস তা উড়িয়ে দিয়ে অভিযানের পক্ষে উল্টো সাফাই দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'তারা (আটককৃতরা) অবৈধ বিদেশি শ্রমিক এবং আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) কেবল তাদের দায়িত্ব পালন করেছে।'
আইসিই জানায়, স্বল্পমেয়াদি বা ভ্রমণ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি নেই। সংস্থাটি বলেছে, 'আমেরিকান চাকরি সুরক্ষার জন্যই এই অভিযান জরুরি ছিল।' হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনের (এইচএসআই) বিশেষ এজেন্ট স্টিভেন শ্র্যাঙ্ক এক বিবৃতিতে বলেন, 'এই অভিযান স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, যারা সিস্টেমের অপব্যবহার করে আমাদের কর্মশক্তির কার্যকারিতা নষ্ট করে, তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।'
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকার উৎপাদন খাতে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সংবেদনশীল বাণিজ্য আলোচনার মধ্যেই এই অভিযান চালানোয় সিউলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একদিকে অন্যান্য দেশ থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করেছেন, অন্যদিকে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য ভিসা বরাদ্দ কঠোর করেছেন।মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, আটককৃত এলজি কর্মীদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ভিসায় বা ভিসা মওকুফ কর্মসূচির অধীনে ব্যবসায়িক সফরে ছিলেন।
শনিবার জরুরি বৈঠকের পর দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো হিউন জানান, আটককৃতদের সুরক্ষায় সরকার একটি 'ওভারসিজ কোরিয়ান প্রোটেকশন টাস্কফোর্স' গঠন করেছে। প্রয়োজনে তিনি নিজে ওয়াশিংটন সফর করতে পারেন বলেও ইঙ্গিত দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, 'ঘটনার পরপরই প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে বলেছেন, মার্কিন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পদক্ষেপ আমাদের নাগরিকদের অধিকার কিংবা কোরীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অন্যায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।'
শনিবার এলজি এনার্জি সলিউশন এক বিবৃতিতে জানায়, আটককৃতদের দ্রুত মুক্তির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
নতুন ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির এ কারখানাটিকে জর্জিয়ার গভর্নর রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। কারখানায় প্রায় ১ হাজার ২০০ কর্মী নিযুক্ত ছিলেন।
বর্তমানে আটক শ্রমিকদের জর্জিয়ার ফোকস্টনে অবস্থিত একটি আইসিই ফ্যাসিলিটিতে রাখা হয়েছে। এলজি জানিয়েছে, তাদের ৪৭ জন কর্মীসহ ঠিকাদারদের প্রায় ২৫০ জন শ্রমিককে আটক করা হয়েছে।