হুন্দাই কারখানায় আটক কর্মীদের ফেরাতে চুক্তি দ. কোরিয়ার, বিদেশি কোম্পানিকে মার্কিন কর্মী নিতে বললেন ট্রাম্প
দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে গত সপ্তাহে চালানো অভিযানের পর দেশটির আটক শ্রমিকদের ফেরানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গত সপ্তাহের ওই অভিযানে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ৩০০ জনকে আটক করা হয়। কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় গতকাল রোববার রাতে জানায়, তাদের মুক্তির জন্য আলোচনা শেষ হয়েছে এবং তাদের মুক্তির প্রক্রিয়া চলমান।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দুই দেশের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষ হলেই আটক শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে একটি বিশেষ বিমান পাঠানো হবে। তবে কী ধরনের প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
ইয়োনহাপ সংবাদ সংস্থা ওয়াশিংটনে দক্ষিণ কোরিয়ার কনসাল জেনারেল চো কি-জুংকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, শ্রমিকরা সম্ভবত বুধবার একটি বিমানে উঠবেন।
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কোনো প্রতিনিধি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে হোয়াইট হাউসের অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোমান আলাদাভাবে জানিয়েছেন, কর্মস্থলে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
পরে রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুলনামূলক নরম সুরে কথা বললেও কড়া অভিবাসননীতি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে মার্কিন শ্রমিকদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং অভিবাসন আইন মেনে চলতে হবে।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যাল'-এ লিখেছেন, 'জর্জিয়ায় হুন্দাই ব্যাটারি কারখানায় অভিবাসনবিরোধী অভিযানের পর আমি যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারী সব বিদেশি কোম্পানিকে আহ্বান জানাচ্ছি আমাদের জাতির অভিবাসন আইনকে সম্মান করার জন্য।'
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, 'আপনাদের বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই, আর আমরা আপনাদের উৎসাহিত করছি বৈধভাবে আপনাদের মেধাবী ও উচ্চ প্রযুক্তিগত দক্ষতাসম্পন্ন মানুষদের আনতে, যারা বিশ্বমানের পণ্য তৈরি করবে। আমরা আপনাদের জন্য এটি দ্রুত এবং বৈধভাবে সম্ভব করব। তবে এর বিনিময়ে আমরা চাই আপনারা যেন আমেরিকান শ্রমিক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেন।'
এই পোস্টটি করার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ঘটনাটি খতিয়ে দেখবেন। তবে এটি দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কোনো ক্ষতি করবে না।
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন ফেডারেল এজেন্টরা জর্জিয়ার এলাবেলে হুন্দাইয়ের কার ব্যাটারি প্ল্যান্ট থেকে প্রায় ৪৭৫ শ্রমিককে আটক করে। এটি মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের তদন্ত কার্যক্রমের ইতিহাসে এক স্থানে চালানো সবচেয়ে বড় অভিযান।
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসনকে প্রশাসনের অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন এবং জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সারা দেশে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া জোরদার করেছেন। পাশাপাশি তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনার একটি বড় অংশ নির্ভর করছে অন্য দেশ ও বিদেশি ব্যবসাগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার ওপর।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার আটক শ্রমিকদের গ্রেপ্তার এবং সাঁজোয়া যান ব্যবহার করে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষের পরিচালিত বড় ধরনের অভিযানের ভিডিওচিত্র প্রকাশের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, হাতকড়া পরিয়ে শ্রমিকদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) জানিয়েছে, অবৈধ কর্মসংস্থানের অভিযোগে বিচারিক তল্লাশি পরোয়ানার ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়েছে।
এক কাস্টমস কর্মকর্তা বলেন, আটক হওয়া অনেকেরই ওই কারখানায় কাজ করার বৈধ অভিবাসন অনুমোদন ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রে অটোমোবাইল খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগ বেশি
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ কাং হুন-শিক রোববার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত কোরীয় শ্রমিকদের ভিসা ব্যবস্থা উন্নত করার উপায় খুঁজে দেখা হবে, যাতে 'এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।'
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) জানিয়েছে, আটক শ্রমিকদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি ছিল না, কারণ তারা হয় অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন অথবা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করছিলেন।
এদিকে, ওয়াশিংটন ও সিউলের সম্পর্ক এখনো টানাপোড়েনের মধ্যেই রয়েছে। জুলাইয়ে ঘোষিত বাণিজ্য চুক্তির চূড়ান্ত বিবরণ নিয়ে উভয়পক্ষ এখনো আলোচনায় রয়েছে। ওই বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল রাখা হয়েছে, যাতে কোরীয় কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে সহায়তা করা যায়।
অন্যদিকে, হুন্দাই জানিয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়ে ২৬ বিলিয়ন ডলার করবে, যার মধ্যে একটি মার্কিনভিত্তিক রোবোটিক্স কারখানাও রয়েছে।
অভিযানটি চালানো হয়েছিল ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্পে, যেখানে বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) ব্যাটারি উৎপাদন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে হুন্দাই এবং এলজি এনার্জি সলিউশন সমান ৫০ শতাংশ করে শেয়ার ধরে রেখেছে। এটি জর্জিয়ার ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প।
অভিযানের পর এলজি এনার্জি সলিউশন জানিয়েছে, বিশেষ কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কর্মীদের ব্যবসায়িক সফর স্থগিত করা হয়েছে এবং বর্তমানে যারা সেখানে আছেন তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।
এদিকে, রয়টার্স সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনে যোগ দিতে ট্রাম্প অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়া সফর করতে পারেন।
