জানুয়ারিতে মহাসমাবেশের ঘোষণা নোয়াব সভাপতির
প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের বরেণ্য নাগরিক, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক নেতারা। এ হামলার প্রতিবাদে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় আগামী জানুয়ারি মাসে সারাদেশে সাংবাদিকদের নিয়ে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে নিউজ পেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে 'মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ' শীর্ষক এক প্রতিবাদ সভায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়। সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে। প্রতিবাদ সভা শেষে হোটেলের সামনের সড়কে এক মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, 'আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সারাদেশের সকল সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মহাসমাবেশ করা হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এই হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।'
এ. কে. আজাদ উল্লেখ করেন, প্রথম আলোতে আগুনের ঘটনার পর সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে অনুরোধ করেও সাড়া পাননি ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
তিনি বলেন, 'ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম আমাকে বলেছেন, প্রথম আলোতে আগুনের পর ডেইলি স্টারেও তারা [বিক্ষোভকারীরা] যাবে ভেবে সরকারের এমন কোনো সংস্থা নেই, এমন কোনো ব্যক্তি নেই যার কাছে মাহফুজ আনাম ডেইলি স্টারের সামনে নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ করেননি।'
এ সময় এ. কে. আজাদ একজন সাংবাদিককে উদ্ধৃত করে বলেন, 'একজন সাংবাদিক বলেছে তার সামনে দিয়ে হামলাকারীরা কম্পিউটার, চেয়ার নিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ বাধা দিচ্ছেনা।'
সভায় বক্তারা বলেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা কোনো একক সংবাদমাধ্যমের ওপর আঘাত নয়; এটি সরাসরি গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও গণতন্ত্রের বিকাশে সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ সব পেশাজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এখন সময়ের দাবি।
প্রতিবাদ সভায় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবীর, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং জামায়াতে ইসলামীর সহ-সম্পাদক জুবায়ের।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানবাধিকারকর্মী রেহনুমা আহমেদ এবং টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণমাধ্যমের ওপর এ ধরনের মব ভায়োলেন্স বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় দেশের গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার চরম ঝুঁকির মুখে পড়বে।
প্রতিবাদ সভায় দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা, সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।
