১১ বছর পর কোয়াবের নেতৃত্বে পরিবর্তন

অনেকবারই পরিবর্তনের দাবি উঠেছে, কিন্তু সেটা দাবি পর্যন্তই থেকে গেছে। অবশেষে দাবি বাস্তবে রূপ নিলো, ক্রিকেটারদের অধিকার আদায় ও সংরক্ষণের সংগঠন ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নেতৃত্বে এলো পরিবর্তন। দীর্ঘ ১১ বছর দায়িত্ব পালনের পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন নাঈমুর রহমান দূর্জয় ও দেবব্রত পাল। ২০১৪ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন এ দুজন।
কোয়াবের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের জন্য ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে সেলিম শাহেদকে। রোববার মিরপুরের জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি ভবনে দেশের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারদের বৈঠকের পর এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাবেক ক্রিকেটার ও বিসিবির বর্তমান ম্যাচ রেফারি সেলিম শাহেদের নেতৃত্বাধীন এই কমিটিতে আছেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, নিয়ামুর রশিদ রাহুল, হাবিবুল বাশার এবং সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল। এ ছাড়া, আট বিভাগের অধিনায়কদেরও এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- আরাফাত সানি (ঢাকা), ইরফান শুক্কুর (চট্টগ্রাম), নাজমুল হোসেন শান্ত (রাজশাহী), নুরুল হাসান সোহান (খুলনা), মোসাদ্দেক হোসেন (ময়মনসিংহ), জাকির হাসান (সিলেট), কামরুল ইসলাম (বরিশাল) ও নাঈম ইসলাম (রংপুর)। অধিনায়কদের এই তালিকায় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে।
গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর থেকে আত্মগোপনে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য দূর্জয়। গত ৭-৮ মাসে তাকে দেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি, কোয়াবের একাধিক সভাতেই উপস্থিত ছিলেন না তিনি। এ কারণে নিয়ম অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সভাপতির পদ হারিয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালে ক্রিকেটারদের আন্দোলনের প্রথম দাবিই ছিল কোয়াবের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচন করা। যদিও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২৩ সালের বার্ষিক সাধারণ সভাতেও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দেখা যায়নি। তাই নাইমুর-দেবব্রত জুটিই নেতৃত্বে থেকে যায়।
বর্তমান সংকট সমাধানে ক্রিকেটারদের নিয়ে বসার উদ্যোগ নেন সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন। সাবেকদের মধ্য থেকে আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আকরাম খান, হাবিবুল বাশার, খালেদ মাসুদ, জাভেদ ওমর ও সানোয়ার হোসেন। যোগ দেন তামিম ইকবাল, শান্ত, সোহান, ফরহাদ রেজা, নাঈম ইসলাম ও জিয়াউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন বর্তমান ক্রিকেটারও।
বৈঠকের পর ক্রিকেটারদের মুখপাত্র হিসেবে সংবাদমাধ্যমকে অ্যাডহক কমিটির কথা জানান কোয়াবের সদস্য আকরাম খান। নতুন কমিটির পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন সেলিম শাহেদ। তিনি বলেন, 'যেকোনো কিছুরই একটা প্রক্রিয়া আছে। আমাদের প্রথম বিষয়টা হলো (কোয়াবের) গঠনতন্ত্রকে একটা কাঠামোর মধ্যে ফেলতে হবে। সেই প্রক্রিয়া অনুযায়ী যেন সবকিছু চলে। তাই আমরা সিস্টেমটা তৈরি করার চেষ্টা করবো, গঠনতন্ত্র আপডেটের চেষ্টা করব। কারা ভোটার, সেটাও সুষ্ঠু নীতিমালা নেই।'
'আমরা যেন একটা নীতিমালা তৈরি করতে পারি পরবর্তী নির্বাচনের জন্য। এটা করতে ৩ মাস লাগতে পারে, ৬ মাসও লাগতে পারে। যতদিনই লাগুক, আমরা যেন জিনিসটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব। এরপর নির্বাচন দেওয়াই আমাদের পরিকল্পনা।' যোগ করেন তিনি।
দূর্জয় ও দেবব্রতর নেতৃত্বাধীন কমিটির বিলুপ্তির কারণ ব্যাখ্যা করে সেলিম শাহেদ বলেন, 'মূলত তিনি (দূর্জয়) কয়েকটি সভায় ছিলেন না। যে কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি অফ হয়ে যান। আরেকটা বড় জিনিস, আমাদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আগের যে কমিটি ছিল, সেটা বিলুপ্ত। আর বিলুপ্ত করে আমরা অ্যাডহক কমিটি করেছি। যেন আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারি। এজন্য প্রথম হচ্ছে, গঠনতন্ত্র ঠিক করা। দ্বিতীয়ত প্রক্রিয়া ঠিক রাখা। তৃতীয়ত নির্বাচনের যে নীতিমালা, সেটা ঠিক করে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়া।'
আগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অবস্থান নিয়ে তিনি আরও বলেন, '(কোয়াবের) গত কমিটিতে যারা ছিলেন, বেশিরভাগই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। প্রেসিডেন্ট (দূর্জয়) পদত্যাগ করেছেন এবং সেক্রেটারি দেবব্রত পাল, তিনিও নিজ থেকে মেনে নিয়েছেন এই পদে থাকছেন না। তাই আমরা নতুন কমিটির মাধ্যমে নতুন করে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবো।'