প্রিমিয়ার লিগে পারিশ্রমিক কমিয়েছে সব দল, হতাশ ক্রিকেটাররা

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিপিএলের একাদশতম আসর মাঠে গড়ানো নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। বিসিবি সভাপতি পাল্টে যায়, ১৫টি পরিচালক পদ শূন্য হয়ে যায়। বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়াই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, সেখানে বিপিএল আয়োজন ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এমন অবস্থায় জাতীয় দলের সিনিয়রসহ বেশ কিছু ক্রিকেটার বিসিবি সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেন। পারিশ্রমিক কমিয়ে হলেও আসরটি আয়োজনের অনুরোধ জানান তারা। পারিশ্রমিক নিয়ে অনেক জটিলতা থাকলেও আসরটি হয়েছে। এবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও পারিশ্রমিক জটিলতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
ওয়ানডে ফরম্যাটে ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার এই আসরটি মার্চের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে। এর আগে থেকেই পারিশ্রমিক নিয়ে নাখোশ ক্রিকেটাররা। সব দলই পারিশ্রমিক কমিয়েছে, অর্ধেকেরও বেশি পারিশ্রমিক কমানো হয়েছে। জানা গেছে, আগের আসরে ৩০-৪০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পাওয়া ক্রিকেটাররা এবার ১০ লাখও পাচ্ছেন না। ৭০-৮০ লাখ পাওয়া ক্রিকেটাররাও পাচ্ছেন অর্ধেক পারিশ্রমিক। পুরনো প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করছে না ক্লাবগুলো। আগে পারিশ্রমিকের পরিমাণ একটি বলে রাখলেও দলবদলের সময়ে ক্রিকেটারদের সঙ্গে সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি অনেক ক্লাব। এ কারণে শেষ সময়ে অনেক ক্রিকেটারই নতুন দল বেছে নিয়েছেন। দুই দিনের দলবদল শেষে পারিশ্রমিক নিয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন অনেক ক্রিকেটারই।
রোববার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে নাম লেখানোর পর বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম বলেন, 'দিনশেষে টাকার জন্যই খেলে ক্রিকেটাররা। প্রত্যেকটা টুর্নামেন্ট থেকেই যখন টাকা কমে যায়, অবশ্যই এটা একটা দুঃখজনক বিষয়। শুধু জাতীয় দলের ক্রিকেটার নয়, অনেক ক্রিকেটার আছে; যাদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে পরিবার চালাতে হয়। তাদের অনেক কঠিন হয়ে যায়। আমার মনে হয়, ইনশাআল্লাহ এই পরিস্থিতি দ্রুত কেটে যাবে। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ওপর (পারিশ্রমিকের ধাক্কা) আসে না, আমি বলব না। অবশ্যই আসে। তবে যারা শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে, তাদের তুলনায় হয়তো একটু কম আসে। তবে সবার ওপরই একটা প্রভাব পড়ে।'
আবাহনীর হয়ে খেলতে যাওয়া মোহাম্মদ মিঠুনের কণ্ঠেও হতাশা। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার বলেন, 'সত্যি বলতে আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনো উন্নতি দেখছি না। সেটা বিপিএল হোক বা ডিপিএল। সৎ থেকে বললে, এটা প্রতিনিয়ত নিচের দিকেই যাচ্ছে। প্রত্যেকটা জায়গায় উন্নতি হয়। আমাদের এখানে অবনতি হচ্ছে। আপনি যতোই দেশের প্রেক্ষাপট বলেন বা অজুহাত দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু দিন শেষে যখন চাকরি করবেন, আপনি কিন্তু যথাযথ পারিশ্রমিকই আশা করবেন।'
'আমাদেরও পেশা কিন্তু ক্রিকেট। আমরা আশা করি, গত বছর যেখানে শেষ হয়েছে; সেখান থেকে উন্নতি করার। কিন্তু এখন সব ক্রিকেটারের পারিশ্রমিক কমেছে এবং সেটা বড় অঙ্কে কমেছে। যেটা পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমরা আশা করি না। কতো কমেছে সেটা ব্যক্তিগতভাবে বলব না। সার্বিকভাবে যদি চিন্তা করেন, গত বছরের তুলনায় এবার ক্রিকেটাররা ৩০ শতাংশ পারিশ্রমিক পাচ্ছে কিনা সন্দেহ আছে।' যোগ করেন বিপিএলের রানার্স আপ চিটাগং কিংসকে নেতৃত্ব দেওয়া এই ব্যাটসম্যান।
এই মুহূর্তে নির্বাচিত সরকার নেই বলে পারিশ্রমিক নিয়ে জটিলতা আছে এবং এটা সামনেও থাকবে বলে জানান মোহামেডানের ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন শিপন। তার ভাষায়, 'দিন শেষে সব দলের মধ্যেই পারিশ্রমিকের সমস্যাটা চলছে, চলবে। কারণ এখন তো সরকারের অবস্থানটা একটু ভিন্ন অবস্থায় আছে। নতুন কোনো সরকার আসেনি। তাই সবারই পারিশ্রমিকের একটা সমস্যা থাকবেই। তো এর মধ্যেই যেভাবে পারা যায়, আমরা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে আমাদের এখনও সেভাবে কথাবার্তা হয়নি। ক্লাব থেকে একটা নির্দেশনা আসবে। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করবো। তাই আপাতত আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা বলতে পারছি না পারিশ্রমিক কেমন হবে।'
কম পারিশ্রমিকের পাশাপাশি দলগুলোর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ব্যাপারটি নিয়ে আরও বেশি হতাশ ক্রিকেটাররা। এক ক্রিকেটারের সঙ্গে মৌখিক চুক্তি হয় একটি ক্লাবের, সবকিছু নিশ্চিতই ছিল। ওই ক্রিকেটারকে ১৮ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে ক্লাবটি। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক পরে ওই ক্রিকেটারকে ১০ লাখ টাকায় খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়। দলবদলের দুদিন আগে আরও কমিয়ে ওই ক্রিকেটারকে ৬ লাখ টাকায় খেলতে বলে ক্লাবটি। কয়েকটি দফায় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় ক্লাবটিতে নাম লেখায়নি ওই ক্রিকেটার। দলবদলে অন্য ক্লাবকে বেছে নিয়েছেন তিনি। প্রায় সবগুলো ক্লাবই ক্রিকেটারদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না।