মেইতেই নেতাকে গ্রেপ্তারের পর উত্তাল মণিপুর, ইন্টারনেট বন্ধ-কারফিউ জারি

আবারও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে। রোববার মেইতেই সম্প্রদায়ের সশস্ত্র সংগঠন আরামবাই তেংগোলের প্রধান অসেম কানন সিংসহ পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করলে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কারফিউ জারি ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খবর বিবিসির।
গত ৭ জুন, অসেম কানন সিংসহ পাঁচ নেতাকে মণিপুরের ইম্ফল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে আসাম রাজ্যের গৌহাটিতে নিয়ে যায় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)। ২০২৩ সালে রাজ্যে সহিংসতার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন অপরাধে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে। মণিপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া স্থানান্তর করে আসামে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভকারীরা ইম্ফলের বিভিন্ন অংশে সড়ক অবরোধ করে, পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় ও একটি বাসে আগুন দেয়। 'দ্য হিন্দু' পত্রিকার খবরে বলা হয়, কিছু বিক্ষোভকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়ে।
'হিন্দুস্তান টাইমস'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘর্ষে ১৩ বছরের এক কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছোড়ে।
রাজ্য সরকার জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইম্ফলসহ পাঁচ জেলায় মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা পাঁচ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে এক জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং কিছু এলাকায় চার জনের বেশি মানুষের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, আরামবাই তেংগোল শনিবার রাত থেকে রাজ্যের কিছু অংশে ১০ দিনের স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল ঘোষণা করেছে।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এক্স-এ পোস্ট দিয়ে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'দেশের নাগরিকদের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দায়িত্ব। এটি এড়িয়ে যাওয়া দায়িত্ব থেকে পিছু হটা।'
২০২৩ সাল থেকে মণিপুরে মেইতেই ও কুকি—দুই বৃহৎ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভূমি ও প্রভাব নিয়ে সংঘাত চলতে থাকে। এই সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি নিহত ও হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এর আগে বছরের শুরুর দিকে, সমালোচনার মুখে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করলে কেন্দ্র সরকার মণিপুরে সরাসরি শাসন চালু করে।
সরকারি ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে বিরোধী দলগুলো দাবি করছে, ২০২৩ সাল থেকে চলা সহিংসতার পরেও প্রধানমন্ত্রী মোদি এখনো মণিপুর সফর করেননি।
রোববার রাজ্যের বহু দলের বিধায়করা এক যৌথ প্রতিনিধি দল হিসেবে গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ক্ষমতাসীন বিজেপির বিধায়ক কে এইচ ইবোমচা জানান, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের পর যেন গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়া হয়—এই দাবি তারা গভর্নরের কাছে তুলেছেন।