টুর্নামেন্ট সেরা মিরাজ, সেরা উদীয়মান তানজিদ

পর্দা নামলো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একাদশতম আসরের। শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনালে চিটাগং কিংসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফরচুন বরিশাল। শিরোপা জিতেছেন তামিম ইকবাল-তাওহিদ হৃদয়রা, পুরস্কার হিসেবে পাচ্ছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুখ নেওয়া বা শিরোপা ছোঁয়ার তৃপ্তি না নিতে পারলেও কিছু ক্রিকেটারের দারুণ বিপিএল কেটেছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ব্যাটে-বলে ছড়িয়ে সেরা হয়েছেন কারা।
ফাইনালের ম্যাচসেরা (তামিম ইকবাল, ফরচুন বরিশাল): ফরচুন বরিশালের টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ে নেতার মতোই পারফর্ম করেছেন তামিম ইকবাল। ব্যাট হাতে দলটির ত্রাতা ছিলেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি এই ওপেনার। ফাইনালে চিটাগংয়ের দেওয়া বড় লক্ষ্য তাড়ায় দাপুটে ব্যাটিংয়ে ২৯ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি। ১৪ ম্যাচে চারটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৭.৫৪ গড়ে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১৩ রান করেছেন তামিম, যা টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ।
মেহেদী হাসান মিরাজ (টুর্নামেন্ট সেরা): দলকে প্লে-অফে নেওয়ার পথে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুর দিকে সেভাবে রান না পেলেও পরে ব্যাটিং পজিশন বদলে ওপেন করেন তিনি, এরপর থেকে নিয়মিত রান করেছেন তিনি। বল হাতেও তার অবদান এগিয়ে দিয়েছে খুলনাকে। অলরাউন্ডর পারফরম্যান্সে মিরাজ হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার ১৪ ম্যাচে দুটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৭.৩০ গড়ে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫৫ রান করার পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ১৩টি।
সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (নাঈম শেখ, খুলনা টাইগার্স): এবারের বিপিএলে নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন নাঈম শেখ। বাঁহাতি এই ওপেনার বেশিরভাগ ম্যাচেই ছিলেন দলের কাণ্ডারী। আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের পুরস্কার জিতেছেন তিনি। ১৪ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি ও তিন হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪২.৫৮ গড়ে ৫১১ রান করেছেন ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। রান তোলার গতির কারণে সব সময় সমালোচিত হওয়া নাঈম এবার ব্যাটিং করেছেন প্রায় ১৪৪ স্ট্রাইক রেটে।
সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী (তাসকিন আহমেদ, দুর্বার রাজশাহী): গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ দলের পেস আক্রমণের নেতার ভূমিকা পালন করে আসা তাসকিন আহমেদ ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। মাঝ পথে দুর্বার রাজশাহীর অধিনায়কত্ব পাওয়া ডানহাতি এই পেসার ১২ ম্যাচে নিয়েছে ২৫ উইকেট। এটা কেবল এবারের বিপিএলেরই সর্বোচ্চ নয়, আসরের ইতিহাসেই সর্বোচ্চ। এ পথে তিনি পেছনে ফেলেছেন ২০১৯ বিপিএলে ২৩ উইকেট নেওয়া সাকিব আল হাসানকে। পেসার হিসেবে এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার দিক থেকে তাসকিন ছাড়িয়ে গেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, রুবেল হোসেন, কেভন কুপারদের। এবার ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ১৯ রানে ৭ উইকেট নেন তাসকিন, যা বিপিএলের ইতিহাসের সেরা বোলিং।
সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার (তানজিদ হাসান তামিম, ঢাকা ক্যাপিটালস): ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপিএল মিশনটা ভালো যায়নি। হারের বৃত্তে বন্দী হয়ে যাওয়া দলটি লিগ পর্বের ১২ ম্যাচে মাত্র তিনটিতে জেতে। দলের এমন সফরে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। জাতীয় দলের হয়ে দেড় বছর ধরে খেলা ২৪ বছর বয়সী বাঁহাতি এই ওপেনার ১২ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি ও চারটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪৪.০৯ গড়ে ৪৮৫ রান করেছেন, যা আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ওপেনার জিতেছেন উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার, এই পুরস্কারটি এবার প্রথমবারের মতো দেওয়া হলো।
সেরা ফিল্ডার (মুশফিকুর রহিম, ফরচুন বরিশাল): অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের বিপিএল সফর ঝলমলে ছিল না। ফরচুন বরিশালের হয়ে ব্যাট হাতে সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি তিনি, ৯ ইনিংসে ২৬.২৮ গড়ে ১৮৪ রান করেছেন তিনি। চ্যাম্পিয়নদের হয়ে ব্যাটিংয়ে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অবদান রাখতে না পারলেও উইকেটের পেছনে অসাধারণ ছিলেন তিনি। তাই উইকেটরক্ষট হওয়ার পরও তাকে দেওয়া হয়েছে সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার। আসরের সর্বোচ্চ ১৪টি ডিসমিসাল ৩৭ বছর বয়সী মুশফিকের দখলে। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে তিনি ক্যাচ নিয়েছেন আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২টি এবং স্টাম্পিং করেছেন ২টি।