রাকসু নির্বাচন নিয়ে জরিপ: ৩ পদেই শীর্ষে শিবিরের প্যানেল; ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে ফলাফল প্রত্যাখ্যান ছাত্রদলের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রকাশিত এক জরিপে শীর্ষ তিন পদেই ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল এগিয়ে রয়েছে বলে উঠে এসেছে। জরিপের ফলাফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। তবে এই জরিপকে 'পক্ষপাতমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ছাত্রদল।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন 'সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ'।
জরিপ অনুযায়ী, ভিপি, জিএস ও এজিএস—এই তিন পদেই এগিয়ে আছে ছাত্রশিবির সমর্থিত 'সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট'। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, আর তৃতীয় স্থানে রয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত 'ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম'।
ফলাফলে দেখা যায়, ছাত্রশিবির সমর্থিত 'সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট' পেয়েছে—ভিপি পদে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ, জিএস পদে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ ও এজিএস পদে ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট।
ছাত্রদল সমর্থিত 'ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম' পেয়েছে—ভিপি পদে ২ দশমিক ৩ শতাংশ, জিএস পদে ২ দশমিক ৬ শতাংশ ও এজিএস পদে ৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোট।
অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ভিপি পদে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ, জিএস পদে ২০ দশমিক ১ শতাংশ এবং এজিএস পদে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
এছাড়া ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাম সংগঠন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও অন্যান্য সংগঠনগুলোর প্রার্থীরা প্রত্যেকেই ১ শতাংশের নিচে ভোট পেয়েছেন বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়।
জরিপের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ছাত্রদল সমর্থিত 'ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম'-এর জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন টিবিএসকে বলেন, 'এই জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সদস্য। এই জরিপ বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন ঘটাবে না এবং নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।'
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রিচি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ২৮৪ জন আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এই জরিপ পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ নারী, ১৩ দশমিক ২ শতাংশ অমুসলিম এবং ২ দশমিক ৩ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী ছিলেন।
তিনি আরও জানান, ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী রাকসু নির্বাচনে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। ছাত্রীদের মধ্যে ভোটদানের ইচ্ছা ৬৯ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ছাত্রদের মধ্যে ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
আর ৮৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে, ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন রাকসু নির্বাচনের ফলাফল ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এমন প্যানেলকে সমর্থন করেছেন যেখানে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র অ্যাক্টিভিস্টরা [অধিকারকর্মী] একসঙ্গে আছে।
৮২ দশমিক ৩ শতাংশ বলেছেন, প্যানেল নয়—যোগ্য প্রার্থী দেখে ভোট দেবেন তারা।
একইভাবে ৭৭ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন, ব্যক্তিগত পরিচয় বা রাজনৈতিক দল নয়, যোগ্যতা হবে ভোটের মাপকাঠি।
তবে জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় একটি অংশ এখনও সিদ্ধান্তহীন। ভিপি পদে ৪৯ শতাংশ, জিএস পদে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং এজিএস পদে ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কাকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে কোনো মতামত জানাননি।
এদিকে, জরিপ পরিচালনাকারী সংগঠন 'সোচ্চার'-এর সঙ্গে ছাত্রশিবির সমর্থিত 'সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট'র এজিএস পদপ্রার্থী সালমান সাব্বিরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, তিনি এই সংগঠনের সাবেক সভাপতি ছিলেন, যা জরিপের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুসরাত জাহান রিচি বলেন, 'জরিপ পরিচালনায় সোচ্চারে'র কোনো সদস্য জড়িত ছিলো না। এক্ষেত্রে সোচ্চারে'র সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন ৩০ জন সাধারণ শিক্ষার্থী জরিপ পরিচালনা করেন। সেক্ষেত্রে এই জরিপ পক্ষপাতমূলক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সত্যি বলতে সালমান সাব্বিরকে আমি চিনিও না।'