আজ রাকসু নির্বাচন: জিএস ও এজিএস পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

দীর্ঘ তিন দশক পর আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও হল সংসদ ও সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ভবনের ১৭ কেন্দ্রে ৯৯০টি বুথে ভোট গ্রহণ চলবে।
১৯৯০ সালের সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিচয় নয়, বিগত সময় যারা শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে সেসব প্রার্থীকে বেছে নেবেন তারা।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শোভা আক্তার বলেন, 'অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় বিভিন্ন ইস্যুতে যেসব প্রার্থী শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তাদেরকে ভোট দেবে শিক্ষার্থীরা। সে বিবেচনায় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের তুলনায় অন্য প্রার্থীরা এগিয়ে থাকবেন।'
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাকসু নির্বাচনে ১০টি প্যানেল ও বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় সংসদের ২৩টি পদে ২৪৭ জন, সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন, প্রতিটি হল সংসদের ১৫টি করে পদে ১৭টি হলে ৫৯৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
একজন ভোটার ৪৩টি পদে ভোট দিতে সময় পাবেন ১০ মিনিট। অর্থাৎ একজন ভোটার একটি ভোট দিতে প্রায় ১৪ সেকেন্ডে সময় পাবেন।
জিএস ও এসজিএস পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাকসুতে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন এবং এজিএস পদে ১৬ জন প্রার্থী লড়াই করছেন। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন ও ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৫ জন।
মঙ্গলবার রাতে 'সোচ্চার'-এর এক জরিপে রাকসুর শীর্ষ তিন পদে শিবির প্রার্থীরা এগিয়ে আছে বলে দাবি করা হয়।
তবে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের (টিবিএস) প্রতিবেদকের সঙ্গে কমপক্ষে দুই ডজন সাধারণ শিক্ষার্থীর কথা হয়।
তারা বলছেন, জিএস ও এজিএস পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। জিএস পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী ফাহিম রেজা এবং 'আধিপত্যবিরোধী ঐক্য'- প্যানেলের প্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মারের মধ্যে।
এছাড়া, এজিএস পদে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জাহিন বিশ্বাস এষা, শিবির সমর্থিত প্যানেলের সালমান সাব্বিরে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ পরানের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, শিবিরের একটি নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক আছে, যা ফাহিম রেজাকে কিছুটা এগিয়ে দিয়েছে। এছাড়া, ২০২৪ এর কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্বয়ক ছিলেন তিনি, এজন্য ক্যাম্পাসে পরিচিতি আছে।
অন্যদিকে বিগত সময় শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের আন্দোলন, পোষ্য কোটা বাতিলের আন্দোলনসহ নানা ইস্যুতে সরব ছিলেন সালাউদ্দিন আম্মার। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে; বিশেষত নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষার ক্যাম্পাসে বেশ পরিচিতি আছে। এছাড়া, কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সামনে সারিতে থেকে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ক্যাম্পাসে তার গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে।
অন্যদিকে, শিবির সমর্থিত প্যানেলের সালমান সাব্বিরেরও ক্যাম্পাসে পরিচিতি আছে। তিনি ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকটি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি শিবিরের একটি নিদিষ্ট ভোটব্যাংক আছে।
এপদে আলোচনায় আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ পরান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসে পরিচিতি লাভ করেন শাহ পরান। তার কাঁঠাল পাতার প্রচারণাপত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।
এদিকে, ছাত্রদল নেতারা বলছেন যে শীর্ষ তিনটি পদের মধ্যে একটিতে জয়ের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। এছাড়া আরও কয়েকটি সম্পাদক পদে তারা জয়ী হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতা টিবিএসকে জানান, ছাত্রদলের ভিপি ও জিএস প্রার্থী ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে সেটি জয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু তারা এজিএস প্রার্থী এষার জয়ের বিষয়ে আশাবাদী।
ছাত্রদলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, 'আমাদের এজিএস ক্যান্ডিডেট প্রার্থীর মাঠ ভালো। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তার বিষয়ে আমরা আশাবাদী। পাশাপাশি কয়েকটি সম্পাদক পদেও আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।'