রাকসু নির্বাচন চলছে: সোয়া দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ২৫ শতাংশ

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে।
সকাল সোয়া ১১টা পর্যন্ত সোয়া দুই ঘণ্টায় ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন চিফ রিটার্নিং অফিসার প্রফেসর ড. সেতাউর রহমান।
তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। শিক্ষার্থীরা উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে ভোট প্রদান করছেন।'
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি একাডেমিক ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে মোট ৯৯০টি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে।
ভোর থেকেই ভোটারদের মধ্যে ছিল উৎসাহ ও উদ্দীপনা। সকাল ৯টার আগেই বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।

সকাল ৮টার পর থেকেই ভোট দিতে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেখা যায়। প্রধান ফটক, কাজলা গেটসহ ছয়টি গেট দিয়ে ভোটারদের প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আবাসিক শিক্ষার্থীরা সরাসরি হল থেকে এসে ভোট দিচ্ছেন, আর অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ছয়টি গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পারলেও বের হতে পারছেন শুধু প্রধান ফটক ও স্টেশনবাজার এলাকার গেট দিয়ে।

জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের প্রিজাইডিং অফিসার প্রফেসর আরিফুল ইসলাম বলেন, 'এই কেন্দ্রে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ১ হাজার ৮৬২ জন ভোট দেবেন। উপস্থিত পোলিং এজেন্টদের সামনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেখিয়ে সিলগালা করা হয়েছে। সব প্রস্তুতি শেষে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এখানে ৬০টি ভোট বুথ রয়েছে। একজন ভোটার পরিচয় যাচাই শেষে হাতে অমোচনীয় কালি দিয়ে ছয়টি ব্যালট পেপার হাতে পাচ্ছেন। এরপর গোপন কক্ষে গিয়ে তিনি আলাদা ছয়টি ব্যালট বাক্সে ভোট দিচ্ছেন।'

সকাল ৮টার পর থেকেই ভোটারদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়। প্রধান ফটক, কাজলা গেটসহ ছয়টি গেট দিয়ে ভোটারদের প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আবাসিক শিক্ষার্থীরা হল থেকে সরাসরি কেন্দ্রে এসে ভোট দিচ্ছেন। অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ছয়টি গেট দিয়ে প্রবেশ করলেও বের হতে পারছেন শুধু প্রধান ফটক ও স্টেশনবাজার এলাকার গেট দিয়ে।
নিরাপত্তার জন্য ছয়টি গেটে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রবেশের আগে ভোটারদের তল্লাশি করে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অচিন্তময় হাজন বলেন, 'আমার জীবনের এটা প্রথম ভোট। এই প্রথম আমি নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলাম। আমি ভোট দিতে পেরে আনন্দিত।'
ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী সাইয়েদ আস সাদাত বলেন, 'ভোট দেওয়ার জন্য সকাল সকাল হল থেকে চলে আসছি। পুরো পরিবেশ আমার খুব পছন্দ হয়েছে। সবাই উৎসমুখর পরিবেশে এসে ভোট প্রদান করছে।'

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম হাসান ভোট দিতে এসেছেন শেরে বাংলা ফজলুল হক ভবনের কেন্দ্রে। তিনি বলেন, 'জীবনে এই প্রথম ভোট দিচ্ছি। তাই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা চাই রাকসু নির্বাচন প্রতি বছর হোক, যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের নেতৃত্ব বেছে নিতে পারে।'
এবারের নির্বাচনে মোট ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন শিক্ষার্থী ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত আছেন। ২৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী।

জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের প্রিজাইডিং অফিসার অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম বলেন, 'এই কেন্দ্রে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের মোট ১ হাজার ৮৬২ জন ভোটার নিবন্ধিত আছেন। ভোট শুরুর আগে উপস্থিত পোলিং এজেন্টদের সামনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেখিয়ে সিলগালা করা হয়েছে। সব প্রস্তুতি শেষে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।'
তিনি জানান, এই কেন্দ্রে ৬০টি ভোট বুথ রয়েছে। পরিচয় যাচাই ও হাতে অমোচনীয় কালি দেওয়ার পর প্রতিটি ভোটার ছয়টি ব্যালট পেপার পাচ্ছেন। ভোটাররা গোপন কক্ষে গিয়ে আলাদা ছয়টি ব্যালট বাক্সে ব্যালট পেপার ফেলছেন।
অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার অভিযোগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটারদের হাতে দেওয়া অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বেশ কয়েকজন প্রার্থী দাবি করেছেন, অমোচনীয় কালির দাগ ঘষলে উঠে যাচ্ছে।
ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, 'কথা ছিলো অমোচনীয় কালি মুছে যাবে না। কালি মুছে যাচ্ছে এটা আশঙ্কার কথা। এছাড়া এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।'
ছাত্রশিবির মনোনীত 'সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট'-এর জিএস পদপ্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি এমনিতেই ভালো আছে। কিন্তু অমোচনীয় কালি মুছে যাচ্ছে যা দুঃখজনক।'
জুলাই ২৪ হলের জিএস ক্যান্ডিডেট জুবায়ের জিসান টিবিএসকে বলেন, 'নির্বাচন কমিশন এমন অমোচনীয় কালি দিলো যা ঘষা মাত্রই উঠে যাচ্ছে। আমি নিজে ভোট দিয়েছি অথচ আমার হাতের কালি মুছে গেছে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, 'এটা একটা বিশ্বজনীন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন এটা নিয়ে কথা বলতেই হবে। অথচ আমাদের নির্বাচন কমিশন যাচাই বাছাই শেষে সবচেয়ে ভালো মার্কার কালিটা কিনেছেন। আমাদের প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও কালি হাতে কালি লাগিয়ে দেখেছেন সেটা মুছে যায়নি।'
তিনি বলেন, 'আসলে কালি লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই যদি মোছার চেষ্টা করা হয় তাহলে কিছুটা উঠতে পারে। কিন্তু এটা যদি শুকাতে দেওয়ার সময় দেওয়া হয় তাহলে মুছে দেওয়া সম্ভব না।'