নিজেদের নিরাপত্তার ঠিক নেই, এসেছেন আমার নিরাপত্তা দিতে: পুলিশকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে মো. ফাতেহ আলীর (৬১) শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট ও হাতে হাতকড়া পরাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে উল্টো হুমকি ও কটূক্তির মুখে পড়েন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় অস্ত্র আইনে করা মামলায় কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয় সুব্রত বাইনকে।
এরপর প্রিজনভ্যান থেকে নামানোর সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাজতখানার পুলিশ সদস্যরা তার শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট ও হাতে হাতকড়া পরাতে চাইলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতে থাকেন সুব্রত বাইন।
এ সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে সুব্রত বাইন বলেন, 'এতো নিরাপত্তা, অমুক তমুক- কত কিছুই না দেখব!'
এরপর এক পুলিশ সদস্য তার শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরিয়ে দেন। এরপর দুই হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া পরাতে চাইলে ধমক দেন সুব্রত বাইন।
পরে মহানগর দায়রা জজ আদালত হাজতখানার ইনচার্জ রিপন মোল্লাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'আপনি কবে থেকে ডিউটি করেন? আমি কইবার এখানে (কোর্টে) আসছি?'
জবাবে রিপন মিয়া বলেন, 'আপনার নিরাপত্তা স্বার্থে এসব করা হচ্ছে।' এরপর প্রিজনভ্যান থেকে হাঁটিয়ে হাজতখানায় নেওয়া হয় সুব্রত বাইনকে। হাঁটার সময় তিনি বলেন, 'আপনাদের নিজেদের নিরাপত্তার ঠিক নেই, এসেছেন আবার আমার নিরাপত্তা দিতে! আপনাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করেন।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজতখানার ইনচার্জ মো. রিপন মোল্লা বলেন, 'হাতকড়া পরানো নিয়ে আমাদের নিয়ে আসামি বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবেন।'
বেলা পৌনে ১টার দিকে হাতিরঝিল থানায় অস্ত্র আইনে করা মামলায় চার্জগঠন শুনানির জন্য সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী আরাফাত ইবনে নাসিরকে হাজতখানা থেকে ঢাকার মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৫ নম্বর বিচারক ফাহ্মিদা জাহাঙ্গীরের আদালতের এজলাসে তোলা হয়।
এ সময় তাদের শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট ও হাতে হাতকড়া পরানো হয়। আদালতের কাঠগড়ায় ওঠানোর পর তাদের জ্যাকেট ও হেলমেট খুলে দেওয়া হয়।
বেলা ১টার দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন এবং মামলার চার্জগঠন শুনানি শুরু হয়। সুব্রত বাইনের পক্ষে আইনজীবীরা মামলাটি থেকে আসামির অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ চার্জগঠনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জগঠনের আদেশ দেন।
চার্জগঠনের সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। এরপর আদালত আগামী ১৬ নভেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন।
গত ১৩ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৫ নম্বর আদালতে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়।
চার্জশিটভুক্ত অপর তিন আসামি হলেন আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, এম এ এস শরীফ এবং আরাফাত ইবনে নাসির। শুনানিকালে সুব্রত বাইন ও আরাফাত ইবনে নাসিরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়, আর অপর দুই আসামি- আবু রাসেল মাসুদ ও এম এ এস শরীফ- ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।