রাকসু: উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কালি লাগানো মাত্রই ঘষাঘষি না করলে কালি উঠবে না—অমচোনীয় কালি প্রসঙ্গে উপাচার্য

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটারদের হাতে দেওয়া অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশ কয়েকজন প্রার্থী দাবি করেছেন, অমোচনীয় কালির দাগ ঘষলে সেটি উঠে যাচ্ছে।
ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, 'কথা ছিলো অমোচনীয় কালি মুছে যাবে না। কালি মুছে যাচ্ছে এটা আশঙ্কার কথা। এছাড়া এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।'
ছাত্রদলের এজিএস পদপ্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা বলেন, 'ভোট দেওয়ার পূর্বে ভোট কক্ষে ভোটারদের হাতে যে অমোচনীয় কালি দেওয়া হয়েছে তা মুছে যাচ্ছে। তা সত্যিই হতাশার। আমরা ভেবেছিলাম অন্ততপক্ষে অমোচনীয় কালি মুছে যাবে না। এতে জাল ভোট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।'
ছাত্রশিবির মনোনীত 'সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট'-এর জিএস পদপ্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি এমনিতেই ভালো আছে। কিন্তু অমোচনীয় কালি মুছে যাচ্ছে যা দুঃখজনক।'
তিনি বলেন, 'এছাড়া প্রথমদিকে চিরকুট নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিলো না। পরে দেওয়া হয়েছে। এরকম দুই একটা অসংগতি ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজে ভোট দিতে আসছে। শিক্ষার্থীরা ভোট প্রদানের মাধ্যমে সৎ, যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেবে।'
'আধিপত্য বিরোধী ঐক্য' প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, 'নির্বাচনের এখন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। তবে অমোচনীয় কালি মুছে যাওয়া সত্যিই হতাশাজনক। এই কালি বিদেশ থেকে আমদানিকৃত করার পর যদি তা মুছে যায় তা হতাশাজনক। এছাড়া আরও কি কি মিসম্যানেজমেন্ট রয়েছে তা এখনো বুঝতে পারছি না। শিক্ষার্থীরা এই প্রশাসনের ওপর ভরসা করতে চায়। এই নির্বাচন কমিশন সব দিক ভালো রেখে নির্বাচন সুন্দভাবে অনুষ্ঠিত করবে এই ভরসা রাখতে চাই।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, 'এটা একটা বিশ্বজনীন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন এটা নিয়ে কথা বলতেই হবে। অথচ আমাদের নির্বাচন কমিশন যাচাই বাছাই শেষে সবচেয়ে ভালো মার্কার কালিটা কিনেছেন। আমাদের প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও কালি হাতে কালি লাগিয়ে দেখেছেন সেটা মুছে যায়নি।'
তিনি বলেন, 'আসলে কালি লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই যদি মোছার চেষ্টা করা হয় তাহলে কিছুটা উঠতে পারে। কিন্তু এটা যদি শুকাতে দেওয়ার সময় দেওয়া হয় তাহলে মুছে দেওয়া সম্ভব না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি বলব, আপনি যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কালি লাগানো মাত্র ঘষাঘষি না করেন, একটু শুকানোর সময় দেন, কালি উঠবে না, ইনশাল্লাহ।'
আজ সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবন কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য এ কথা বলেছেন।
রাকসুতে দ্রুত ফলাফল দিয়ে উদাহরণ তৈরি করতে চান কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, 'নির্বাচনের ফল দিতে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা লাগতে পারে বলে। ছয়টি ওএমআর মেশিন সর্বোচ্চ পারফরমেন্সে চললে এ সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে এই সময়টা দিতে হবে।'
তিনি বলেন, 'ভোট পুরোপুরি সুষ্ঠুভাবে চলছে। ভেতরে ও বাইরে বড় ডিসপ্লেতে সব কার্যক্রম উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, সবাই দেখতে পারবেন কী হচ্ছে। রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চলেছে।'
নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো আছে উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, 'উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো এখন পর্যন্ত তেমন কিছু শোনা যায়নি। শুধু গরমে শিক্ষার্থীরা একটু কষ্ট পাচ্ছেন।'
জুলাই ২৪ হলের জিএস ক্যান্ডিডেট জুবায়ের জিসান টিবিএসকে বলেন, 'নির্বাচন কমিশন এমন অমোচনীয় কালি দিলো যা ঘষা মাত্রই উঠে যাচ্ছে। আমি নিজে ভোট দিয়েছি অথচ আমার হাতের কালি মুছে গেছে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।'
অমোচনীয় কালি মুছে যাওয়ার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের শিক্ষার্থীদের চার ধাপে সিকিউরিটি চেকিং করা হচ্ছে। অমোচনীয় কালি এমনিতে দেওয়া হয়েছে। ওটা সিকিউরিটির মধ্যে পড়ে না।'