বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব
বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে। আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) তাকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। সূত্র মারফত এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এর আগে গত সোমবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনারকে তলবের দুই দিনের মাথায় নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করা হলো।
তলবের বিষয়ে এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করেছে এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিবেশের অবনতিতে ভারতের তীব্র উদ্বেগের কথা অবহিত করেছে। বিশেষ করে, কিছু চরমপন্থী উপাদানের কার্যকলাপের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে যারা ঢাকায় ভারতীয় মিশনের আশেপাশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা সম্পর্কে চরমপন্থী উপাদানগুলো যে মিথ্যা বর্ণনা তৈরি করার চেষ্টা করছে তা ভারত সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে। দুর্ভাগ্যজনক যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘটনাগুলোর বিষয়ে কোনো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করেনি বা ভারতের সাথে অর্থপূর্ণ প্রমাণ ভাগ করেনি।'
এদিন ভারতীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু পরে দিল্লির জহরলাল নেহেরু ভবনে পৌঁছান হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ। সেখানে তিনি প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করেন। সূত্রের খবর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হাইকমিশনারের কাছে তাদের নিরাপত্তা শঙ্কার বিষয়টি তুলে ধরেন এবং ভারত বিষয়টি কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে, তা অবহিত করেন।
ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠানো এবং বাংলাদেশে ভারতীয় 'প্রক্সি' রাজনৈতিক দল ও কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বুধবার দুপুর ২টায় ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে পদযাত্রার (মার্চ) ডাক দেয় 'জুলাই ঐক্য'। এই কর্মসূচি ঘিরে হাইকমিশন চত্বরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়া এবং নিরাপত্তা প্রটোকল বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছে সাউথ ব্লক।
চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে আজ দুপুর থেকে ঢাকাস্থ ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করলে ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে আলাদা করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশে তিনি বলেন, 'ভারতকে স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই, যারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সম্ভাবনা, ভোটাধিকার ও মানবাধিকারকে বিশ্বাস করে না, যারা এ দেশের সন্তানদের ওপর আস্থা রাখে না, আপনারা যেহেতু তাদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন, আমরাও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে সেভেন সিস্টার্স আলাদা করে দেব।'
এ বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা হুঁশিয়ারি দেন, ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে নর্থ-ইস্টকে [উত্তর-পূর্বাঞ্চল] বিচ্ছিন্ন করার হুমকি অব্যাহত থাকলে নয়াদিল্লি বেশিদিন চুপ থাকবে না। গত মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) তিনি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দখলের বারবার আহ্বান বাংলাদেশের 'হীন মানসিকতার' প্রতিফলন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে ভারতের নর্থইস্টকে তাদের সঙ্গে একীভূত করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য এমনটা কল্পনা করাও ভুল।'
তিনি সতর্ক করে বলেন, 'আমাদের উচিত দেশটিকে [বাংলাদেশ] সাহায্য না করা এবং তাদের জানিয়ে দেওয়া যে, ভারতের বিরুদ্ধে এমন আচরণ করা হলে আমরা চুপ থাকব না।'
