হাদি হত্যা: ভারতে বসে শ্যুটারদের পালানোর ব্যবস্থা করেন যুবলীগ নেতা বাপ্পী
ভারতে বসে যুবলীগ নেতা তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানো শ্যুটারদের পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী মিরপুর এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর।
এ ঘটনায় বাপ্পীর ভগ্নিপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম রাজুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ।
রিমান্ড শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাই পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মিরপুর-১১ এলাকা থেকে রাজুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভগ্নিপতি রাজুর মাধ্যমে হাদির শ্যুটারদের সীমান্ত অতিক্রমের ব্যবস্থা করেন বাপ্পী। বর্তমানে তিনি নিজেও ভারতে আত্মগোপনে রয়েছেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি আমিনুল ইসলাম রাজু ঘটনার পরপরই বিকালে নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি এজাহারনামীয় আসামি ফয়সাল করিম মাসুদকে সীমান্ত এলাকায় আত্মগোপনে সহায়তা করেছেন।
আরও বলা হয়, এছাড়াও তিনি এ মামলায় সরাসরি জড়িত আসামি ও অন্যান্য আসামিদের আত্মগোপনে সহায়তাকারীদের অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন। ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেও, অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুকৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হাদিকে গুলি করা ফয়সাল করিম মাসুদ এবং মোটরসাইকেল চালক আলমগীর শেখ ঘটনার দিনই রাতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্তসংলগ্ন ভুটিয়াপাড়া গ্রাম দিয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে যান। তাদের পালানোর ব্যবস্থা করেছেন তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী। মানবপাচারে যুক্ত স্থানীয় ফিলিপ স্নালের মাধ্যমে তাদের সীমান্ত অতিক্রম করান বাপ্পী।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বাপ্পী তার ভগ্নিপতি রাজুকে ভারত থেকে ফোন করেন এবং ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুই ব্যক্তিকে সীমান্ত পারাপারের ব্যবস্থা করতে বলেন।
রাজু নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে ফিলিপের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাপ্পীর বার্তা পৌঁছান এবং তাৎক্ষণিকভাবে তাকে পাঁচ হাজার টাকা পাঠান। পরে ফিলিপের মাধ্যমেই ভারতে পালিয়ে যান ফয়সাল ও আলমগীর।
এই ঘটনায় ফিলিপের দুই সহযোগীকে আগেই গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারাও মানবপাচারের সঙ্গে যুক্ত। ফিলিপ দুই ব্যক্তিকে সীমান্ত পার করেছে বলে ওই দুইজন তদন্ত সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ফিলিপকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ধারণা করা হচ্ছে, হাদির শ্যুটারদের সঙ্গে ফিলিপও ভারতে পালিয়ে গেছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) মো. শফিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বলেন, 'আমিনুল ইসলাম রাজু পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন। রিমান্ডে তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে যেসব তথ্য-উপাত্ত পাচ্ছি, সেগুলো আমরা যাচাই করছি।'
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোডে ডিআর টাওয়ারের সামনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। পরবর্তীতে এটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয় এবং মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয় ডিবির মতিঝিল বিভাগকে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী।
