চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ‘আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ’ জসিম উদ্দিন, তৃণমূলে ক্ষোভ
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জসিম উদ্দিন আহমেদকে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন দেওয়ার খবরে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তার রাজনৈতিক পটভূমি ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে দলের ভেতরে।
গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জসিম উদ্দিনের মনোনয়নের খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাৎক্ষণিক ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সমর্থকরা জসিম উদ্দিনের অতীত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জসিমের কিছু ছবি প্রকাশ করেছেন, যেখানে তাকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মতো শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, জসিম উদ্দিন আহমেদ ২০২৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে চন্দনাইশ উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বাসস জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর বাড্ডার এক হত্যাচেষ্টা মামলায় গত বছরের ৪ ডিসেম্বর খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ এলাকার হোটেল লা-মেরিডিয়ানের পাশের সড়ক থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ৫ ডিসেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেলাল হোসেন তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯০ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়। মামলার এজাহার নামীয় ২১নং আসামি জসিম উদ্দিন আহমেদ।
তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবি, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ব্যক্তির মনোনয়ন বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।
বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও দলীয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তালিকায় চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে জসিম উদ্দিন আহমেদের নাম রয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জসিম উদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন। আজ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন।
তবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া গতকাল জানান, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জসিম উদ্দিনের মনোনয়নের খবর দেখলেও দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি।
জসিম উদ্দিন আহমেদের বিএনপিতে কোনো আনুষ্ঠানিক পদ নেই। রাজনৈতিক ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সঙ্গে জসিমের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। দেশ-বিদেশে তার বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য বিস্তৃত। কক্সবাজার ও দুবাইয়ে তাঁর নিজস্ব হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘি এলাকায় 'মহল মার্কেট' এবং খুলশীতে 'জসিম হিল পার্ক'সহ তার বহু বাণিজ্যিক ও আবাসিক সম্পদ রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও শহীদুল হকের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের সূত্র ধরে বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন জসিম উদ্দিন। তৃণমূল নেতারা বলছেন, এ ধরনের সম্পর্ক দলের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এই আসনে মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন দলের ১২ জন নেতা। তারা হলেন—জাকের হোসেন, শফিকুল ইসলাম রাহী, মো. নাজিম উদ্দিন, মো. নুরুল আনোয়ার, এহসানুল মওলা, মো. ইখতিয়ার হোসেন, মো. আল হেলাল, এম এ হাশেম রাজু, মহসিন জিল্লুর করিম, এজাজ আহমেদ চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম মামুন। এদের অনেকেই চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া এলাকায় দীর্ঘকাল ধরে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছেন।
ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে 'বহিরাগত' ও আওয়ামী সুবিধাভোগী কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার খবরে কর্মীরা মুষড়ে পড়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা ভোগ করা একজনকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া লজ্জাজনক। এটি দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করবে।'
আগে গুঞ্জন ছিল যে, আসন ভাগাভাগির অংশ হিসেবে আসনটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু এলডিপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটে যোগ দেওয়ার পর সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে। এই আসনে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবার তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ না করলেও তার ছেলে ওমর ফারুক দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এই আসনে অন্যান্য দলের প্রার্থীরা হলেন—জামায়াতে ইসলামীর মো. শাহাদাত হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. বাদশা মিয়া, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির মুহাম্মদ হাসান আলী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুল হামিদ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মাওলানা মো. সুলাইমান এবং ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের এইচ এম ইলিয়াস।
