Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

‘সুলতানের চর দখল ছবি হারিয়ে গেল! বলছিলেন এগুলি নিয়ে যান—সাহস করিনি সেদিন!’ 

এস. এম সুলতানের বর্ণাঢ্য এক প্রদর্শনী হয়েছিল ‘৭৮ সালে, শিল্পকলা একাডেমিতে, সে এক মহাযজ্ঞে। বহু ছবি এঁকেছিলেন সুলতান সেই প্রদর্শনী সামনে রেখে। তার চল দখল সিরিজের কাজও সেই প্রদর্শনীর সময়েই আঁকা। কিন্তু সেই ছবি এরপর আর কখনও জনসমক্ষে আসেনি। সুলতানের ছবি নিয়ে আলোচনা, আগ্রহের শুরু হয় শিল্পীর জীবনের শেষ দশকে। তার ছবি চড়া দামে বিক্রি হতো, কিন্তু সারা জীবন অসীম দারিদ্র্যে কাটিয়ে গেছেন শিল্পী। সুলতানকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন, মিশেছেন, ফ্রেম বন্দি করেছেন—আরেক শিল্পী, ক্যামেরার জাদুকর খ্যাত নাসির আলী মামুন।
‘সুলতানের চর দখল ছবি হারিয়ে গেল! বলছিলেন এগুলি নিয়ে যান—সাহস করিনি সেদিন!’ 

ইজেল

আলীম আজিজ
10 August, 2025, 05:10 pm
Last modified: 10 August, 2025, 06:39 pm

Related News

  • আশিকের স্টুডিও: ট্রাম্প-পুতিনের ঢাকাস্থ আড্ডাখানা!
  • হারিয়ে যাওয়ার আগে জয়নুল, সুলতানদের ছবি পুনরুদ্ধারের লড়াই
  • গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও অবহেলিত, শিল্পকর্ম সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় শিল্পকলা একাডেমি
  • আবারও খেয়ে ফেলা হলো ৬ মিলিয়ন ডলারের সেই কলা!
  • জীবদ্দশায় মাত্র একটি ছবি বিক্রি করতে পেরেছিলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গখ!

‘সুলতানের চর দখল ছবি হারিয়ে গেল! বলছিলেন এগুলি নিয়ে যান—সাহস করিনি সেদিন!’ 

এস. এম সুলতানের বর্ণাঢ্য এক প্রদর্শনী হয়েছিল ‘৭৮ সালে, শিল্পকলা একাডেমিতে, সে এক মহাযজ্ঞে। বহু ছবি এঁকেছিলেন সুলতান সেই প্রদর্শনী সামনে রেখে। তার চল দখল সিরিজের কাজও সেই প্রদর্শনীর সময়েই আঁকা। কিন্তু সেই ছবি এরপর আর কখনও জনসমক্ষে আসেনি। সুলতানের ছবি নিয়ে আলোচনা, আগ্রহের শুরু হয় শিল্পীর জীবনের শেষ দশকে। তার ছবি চড়া দামে বিক্রি হতো, কিন্তু সারা জীবন অসীম দারিদ্র্যে কাটিয়ে গেছেন শিল্পী। সুলতানকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন, মিশেছেন, ফ্রেম বন্দি করেছেন—আরেক শিল্পী, ক্যামেরার জাদুকর খ্যাত নাসির আলী মামুন।
আলীম আজিজ
10 August, 2025, 05:10 pm
Last modified: 10 August, 2025, 06:39 pm

এস. এম সুলতানের আঁকা 'চর দখল-২' ১৯৮৬

নাসির আলী মামুনের সাক্ষাৎকার

[১০ আগস্ট সুলতানের জন্মদিন, '২৪ ছিল জন্মশতবর্ষেও, উত্তাল আগস্টে গত বছর উদযাপন আর সম্ভব হয়নি। এস. এম সুলতানের বর্ণাঢ্য এক প্রদর্শনী হয়েছিল ৭৮ সালে, শিল্পকলা একাডেমিতে, সে এক মহাযজ্ঞে। বহু ছবি এঁকেছিলেন সুলতান সেই প্রদর্শনী সামনে রেখে। তার চল দখল সিরিজের কাজও সেই প্রদর্শনীর সময়েই আঁকা। কিন্তু সেই ছবি এরপর আর কখনও জনসমক্ষে আসেনি। সুলতানের ছবি নিয়ে আলোচনা, আগ্রহের শুরু হয় শিল্পীর জীবনের শেষ দশকে। তার ছবি চড়া দামে বিক্রি হতো, কিন্তু সারা জীবন অসীম দারিদ্র্যে কাটিয়ে গেছেন শিল্পী। সুলতানকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন, মিশেছেন, ফ্রেম বন্দি করেছেন—আরেক শিল্পী, ক্যামেরার জাদুকর খ্যাত নাসির আলী মামুন। দেশে, আগস্টকে সামনে রেখে সুলতানের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। নাসির আলী মামুনের ক্যামেরায় তোলা সুলতানের একশ ছবির এক বিশাল প্রদর্শনীও হবে এ মাসেই। ২২ আগস্ট বেঙ্গল গ্যালারিতে, তার আগে কিংবদন্তিতুল্য নাসির আলী মামুনের মুখোমুখি হওয়া। এস. এম সুলতান এবং নাসির আলী মামুন—দুই শিল্পীর নানা ঘটনা, স্মৃতি অজানা কথা সবিস্তারে উঠে এসেছে এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে। নাসির আলী মামুন অসংখ্য প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বের মুখচ্ছবি ধারণ করেছেন, কে ছিলেন না তার ক্যামেরার ফ্রেমে! সুলতান থেকে আল মাহমুদ, আহমদ ছফা, শামসুর রাহমান.. দেশি—বিদেশি অগণিত ব্যক্তিত্বের নাম তালিকায়।]

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলীম আজিজ

প্রশ্ন: সুলতানের সাথে আপনার দেখা কীভাবে? তাঁর খোঁজ পেলেন কীভাবে?

নাসির আলী মামুন: সুলতান মানে এস এম সুলতান ঢাকায় এসেছিলেন তাঁর প্রদর্শনী করতে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে তাঁর একক প্রদর্শনী ছিল সেটা। স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো শিল্পীর ওটাই ছিল প্রথম কোনো  একক প্রদর্শনী। আমি যতটুক জানি। ১৯৭৬ সালে ৫ সেপ্টেম্বর প্রদর্শনী উদ্বোধন করছিলেন। প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবুল ফজল, শিল্পকলার ডিজি ছিলেন সিরাজুস সালেহীন। আমি যখন হাজির হই, তখন এস এম সুলতান বক্তব্য দিচ্ছিলেন। প্রচুর লোক জড়ো হয়েছে। একটা প্রদর্শনীর ও রকম  স্পার্ক করা... এত লোক...মানুষের মধ্যে প্রণোদনা...যেভাবে সংক্রমিত হয়েছিল! দেখলাম যারা ছবি বোঝে, কালার বোঝে, পেইন্টারদের চেনে, তারা মনে করছে যে নতুন জিনিস দেখছে, নতুন ধরনের ছবি।

প্রশ্ন: সেটা কী রকম?

মামুন: সংক্ষেপে বলি। এ রকম বিরাট বিরাট সাইজের ছবি এ দেশে ওই প্রথম। আগে এত বড় ছবি কেউ কোনো দিন দেখে নাই। বাংলাদেশের কোনো প্রদর্শনীতে ১০ ফুট, ১২ ফুট, ৮ ফুট এ রকম ক্যানভাস... অদ্ভুত অদ্ভুত মাপের, ধরনের কখনো ছবি কখনও প্রদর্শিত হয়নি। চটের ক্যানভাসে, হার্ডবোর্ডে সুলতান সমানে ছবি আঁকছেন...

প্রদর্শনীর প্রস্তুতি পর্বে আমিও শিল্পকলায় হাজির থেকেছি, দেখেছি। একধরনের চায়নিজ হার্ডবোর্ড পাওয়া যেত তখন, পাতলা, কিন্তু খুব শক্ত। সেই হার্ডবোর্ডে ছবি আঁকছিলেন সুলতান। ওই ছবির সাইজও কোনোটার ৪ ফুট, কোনোটার ৮ ফুট। সুলতান কাগজেও কাজ করছেন। এ রকম বড় বড় কাজ দেখে বিস্মিত সবাই। পশ্চিমের শিল্পীরা বিশেষ করে ইউরোপে, ইতালিতে রেনেসাঁর শিল্পীরা এ ধরনের ছবি এঁকে বিখ্যাত হয়েছেন; যা বিশাল— মোর দেন ফিগার। ওরা তো আঁকত গড, গডেস, গির্জার ছবি। কিন্তু সুলতান আঁকল কী? মাটির সাথে যাদের গভীর সম্পর্ক, সেই সব মানুষের— কৃষক, কৃষিসভ্যতা— যারা সমবায়ভিত্তিক কৃষি সভ্যতা শুরু করছিল এই অঞ্চলে...হাজার বছর আগে, ঝিলাম নদী, সিন্ধু নদ—এসব অববাহিকার যে মানুষ, সুলতানের ক্যানভাসে আসতে শুরু করে...।

প্রশ্ন: ঝিলাম নদী, সিন্ধু নদ...এখানকার কৃষি, সভ্যতা আর সুলতানের কৃষকেরা কি ঠিক আমাদের?

মামুন: হ্যাঁ, সুলতানের ছবি যখন মানুষ দেখে, সেই ১৯৭৬ সালে, তখনই তারা লক্ষ করে, এরা ঠিক বাঙালি না। তাইলে কোথাকার? ইউরোপের? না, ইউরোপেরও না। দুনিয়ার কোথাকার মানুষের ও রকম চোখ, নাক, মুখ, শরীর...কিন্তু এসব মানুষের ছবি দেখে দর্শকেরা বিমোহিত, বিমূঢ়, সেটা এক আশ্চর্য সময়, আশ্চর্য অভিজ্ঞতা, মেসমেরাইজড হয়ে যাওয়ার মতো। ভাবুন, একটা ক্যানভাসের মধ্যে এত মুখ, এত ফিগার, এত নারী-পুরুষ একসাথে কাজ করছে। এ দেশের দর্শকের এমন ছবি দেখার অভিজ্ঞতা নেই।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে তখনো সরাসরি আলাপ—পরিচয় হয়নি?

মামুন: না, কথা হয় নাই তখনো। ভয়ে কাছে যাইনি। তাঁর ছবি আঁকার সময় উপস্থিত ছিলাম, সামান্য দূর থেকে দেখছি। শিল্পকলার গোল ভবনটা তখন গ্যালারি। ওটার সিঁড়ির আড়াল থেকে তাঁকে দেখি.. অদ্ভুত একটা মানুষ... বিড়াল সঙ্গে, বিড়ালকে ভাত খাওয়াচ্ছেন, ওই একই পাতিল থেকে নিজেও খাচ্ছেন। শিল্পকলার গোল ঘরটার একদিকে দোতলায় ওঠা যাইত, ওখানে দেড়তলামতো একটা জায়গা ছিল। সিঁড়ির সঙ্গে ওখানেই থাকেন, ঘুমান। একটা দড়ি টানানো। ওখানে কাপড়চোপড় ঝুলছে। একটা ব্যাগও ছিল, ব্যাগের মধ্যে বাঁশি। কিন্তু ওখানে কোনো ইজেল নাই, অবাক কাণ্ড। কোনোমতে মেঝেতে বসে সামনে ঝুঁকে ছবি আঁকতেছেন। আমি অনেক শিল্পীকে আঁকতে দেখেছি... আর্টিস্টরা তো এইভাবে আঁকে না! তাদের নির্দিষ্ট জায়গা থাকে, স্টুডিও অথবা বাসা। ছবি আঁকে ইজেলে। আর আমি দেখছি সুলতান নামের একজন শীর্ণকায় মানুষকে, শরীরের সমস্ত হাড় দেখা যাচ্ছে...বহুকাল ধরে...আবহমান কাল ধরে, জন্মের পর থেকে যেন খায় নাই সে— এই লোক কীভাবে ফার্স্ট প্ল্যান্টেশন ছবি আঁকলেন? ১৯৭৬ সালেই আঁকা। সুলতান বলেছেন প্রথম রোপণ। কী রোপণ? কী নাম? ফার্স্ট প্ল্যান্টেশন। সুলতানের এই বিশাল বিশাল ছবি খুব একটা বিক্রি হয় নাই। এই বিক্রি না হওয়ার পেছনের কারণ? তাঁর ছবির মানুষের গায়ে কাপড় নাই। আদুর গা তাদের। ওই যে, কাপড় নাই— তখনকার যে অডিয়েন্স এ শিল্প অ্যাকসেপ্ট করতে পারে নাই, তারা বাসায় নিয়া এই ছবি রাখতে পারত না। দুজনের কথা আমিই জানি, যারা ছবি কিনে নিয়া তারপরে আবার ফেরত দিয়ে গেছেন। এদের একজন যত দূর মনে পড়ছে...ইখতেখারুল আলম, উনি প্রযোজক ছিলেন। ৫০০০ টাকার ছবি কিনে সব আবার শিল্পকলায় ফেরত দিয়ে গেছেন। টাকাও ফেরত নেন নাই। সুলতানের ওই ছবির মালিক হয়েছে শিল্পকলা।

প্রশ্ন: এই প্রদর্শনী নিয়ে তখনকার কোনো শিল্পীর সঙ্গে আপনার কোনো আলাপ হয়নি? এত বড় একটা প্রদর্শনী?

মামুন: শিল্পী শাহাবুদ্দিন তখনই প্যারিসে থাকেন। উনি ঢাকায় আসছিলেন। ছুটিতে। প্রদর্শনী শেষ। তারপরও আমি তাকে শিল্পকলা একাডেমিতে নিয়ে গেলাম। তালাবদ্ধ গ্যালারিতে সুলতানের সব ছবিই তখনও দেয়ালেই আছে। নামানো হয়নি। চাবি আনার ব্যবস্থা হলো। গ্যালারিতে ঢুকলাম আমি আর শাহাবুদ্দিন ভাই। পুরো গ্যালারি জুড়ে ধোঁয়ার গন্ধ... বিশেষ ধোঁয়া আরকি! এটাও একটা অভিজ্ঞতা...প্রতিটা ছবি লোকজন ছাড়া দেখতেছি আমরা, প্রদর্শনীর পরে। এর মধ্যে বিক্রি হওয়া ছবিও আছে, তখনো ডেলিভারি নেয় নাই। শিল্পকলা থেকে প্যাকেট করে পাঠাবে। সব ছবি ছিল, শুধু ছোট ছোট ছবিগুলি বাদে। ছোট ছবি হওয়াতে ক্রেতারা নিয়ে গেছে। শাহাবুদ্দিন ভাই দেখেন আর বিস্ময়ে শব্দ করে উঠেন: 'ওহ মাই গড! ওহ মাই গড!' বারে বারে বলতেছেন। প্যারিসে, ইউরোপের সব বড় বড় শহরে মাস্টার্স পেইন্টারদের ছবি দেখেছেন তিনি। ল্যুভসহ বড় বড় মিউজিয়ামের ছবি দেখে ফেলেছেন। এস এম সুলতানের ছবি দেখে তিনি সত্যিকার অর্থেই তাজ্জব। এই ছবি... এ দেশের বাঙালি মুসলমানের ছবি?

এস. এম সুলতানের সঙ্গে নাসির আল মামুন।

প্রশ্ন: শাহাবুদ্দিনের এ প্রতিক্রিয়া ঠিক কী বোঝায় আসলে?

মামুন: ইউরোপের রেনেসাঁর সময়কার মাস্টার পেইন্টারদের কাজ সব গড—গডেস—সম্রাট... এদেও নিয়ে—বিশাল ক্যানভাসের ছবি হয়েছে। আর সুলতান কী এঁকেছেন? সাধারণ মানুষদের ছবি। অন্য রকমভাবে। কারণ, উনার কৃষক নারী-পুরুষ হাড়জিরজিরে, দুর্বল না। সুলতানের কৃষক বলিষ্ঠ, বলিষ্ঠ তাদের শরীর, পেশি। মানে এটা ছবিতে এক ইনার স্ট্রেংথ ফুটিয়ে তোলা। কাজেই শাহাবুদ্দিন একে দেখলেন আমাদের রেনেসাঁ হিসেবে, বাংলা, বাঙালির রেনেসাঁ। এই মাটির। ইউরোপের রেনেসাঁ না। 

প্রশ্ন: কিন্তু আপনার তখনো সুলতানের সঙ্গে পরিচয় হয়নি, ছবি তোলা শুরু করেননি, সেই পর্বের শুরু কখন হলো? 

মামুন: আমার সঙ্গে সুলতানের দেখা হইল পরের বছর। তখন পর্যন্ত সরাসরি কথাবার্তা পরিচয় হয় নাই। অনেকবার দেখছি। দূর থেকে। ছবি আঁকতে দেখছি। কিন্তু কাছে যেতে সাহস পাচ্ছি না। দেখি, চলে আসি। কারণ, তখন তাঁকে নিয়ে নানা গল্প: উনি হঠাৎ করে তেড়ে আসেন, হাতের মোটা, বড় তুলি দিয়ে বাড়ি বসিয়ে দেন, ব্যাগ দিয়ে বাড়ি দেন, থুতু মারেন—এসব গল্প। কাকে নাকি চেইন দিয়ে বাড়ি দিছেন, এসবও শুনি। কলকাতায় কী কী করছেন—সেসব পাগলামির গল্প। নড়াইল থেকে কলকাতায় যে পালিয়ে গেছিলেন... কলকাতার আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে আবার তিন বছর পরে পালিয়ে যান, কোনো শিল্পীকে নিয়ে তখন আমাদের এ ধরনের গল্প ছিল না। এই উপমহাদেশেই ছিল না। এ রকম বোহেমিয়ান লাইফস্টাইল এবং ওই রকম ছবি আঁকা। এসব কারণেই আমি তাঁর প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছিলাম। কীভাবে কাছে যাব ছবি তোলার জন্য, রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ওসব গল্প শুনে আরও ভীতি তৈরি হয়েছে, গেলে উল্টাপাল্টা কিছু ঘটে যায় যদি! কিন্তু গিয়ে দেখলাম, সব ভুল। সুলতান এক মাটির মানুষ। 

প্রশ্ন: শিল্পকলার প্রদর্শনীর আয় কেমন হয়েছিল, মনে থাকতে থাকতে জেনে নিই।

মামুন: প্রদর্শনীর পর প্রায় এক বছর, '৭৭ সালের অক্টোবর মাসে সুলতান শিল্পকলা একাডেমিতে এসেছিলেন। সুলতানের রকমই নাকি এমন ছিল! এটাই তাঁর ক্যারেক্টার। এক্সিবিশন হওয়ার পর ব্যাগট্যাগ ফালাইয়া—টালাইয়া, ছবিটবি ফালাইয়া সুলতান সিম্পলি পালাইয়া চইলা যান। এবারেও টাকাপয়সা কিচ্ছু নেন নাই। চইলা গেছেন। একবারে উধাও। কোথাও খুঁজেও পাওয়া যায়নি। আগে ১৯৪৭—এ  যেসব এক্সিবিশন করছেন বিভিন্ন জায়গায়, সেখানেও তাঁর ফেলে আসা, কিছু বিক্রি হওয়া পেইন্টিংস জেলার সিভিল সার্জন, ডিসি, প্রভাবশালী লোকেরা নিয়ে যেত। সেখানেও একই কারণ—সুলতান তো নাই, পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। ওই একই কারণে ১৯৭৬ সালের প্রদর্শনী শেষে শিল্পকলা একাডেমিও যোগাযোগ করে তাঁকে পায় নাই। ফাইনালি প্রায় এক বছর পর টাকা বুঝে নিয়েছিলেন সুলতান।

প্রশ্ন: সুলতানের সঙ্গে আপনার স্মরণীয় দেখাও হঠাৎ, তাই না?

মামুন: ঘটনাচক্রে। শিল্পকলার পাশ দিয়ে সেগুনবাগিচায় যাচ্ছি... সিএনজিতে করে। সঙ্গে রাহাত খান, কথাসাহিত্যিক। রাহাত ভাই তখন তাস খেলতে যান সেগুনবাগিচায়। আমি সঙ্গী হয়েছি। হঠাৎ করে দেখলাম, এস এম সুলতান... শিল্পকলা একাডেমিতে। একা। আমি দ্রæত সিএনজি থামিয়ে রাহাত ভাইয়ের কাছে বিদায় নিয়া ছুটলাম। এস এম সুলতানকে ফলো করতে শুরু করলাম, একটু দূর থেকে। শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে উনি ঘুরতেছেন। মনে হলো, উনি কাকে যেন খুঁজতেছেন, আমি সাহস করে বললাম, আপনার ছবি তুলতে পারি? উনি বললেন, হ্যাঁ। ...কোথায়? তখন চট করে মনে হলো শিল্পকলার ভেতরে যদি আমি ছবি তুলি, শিল্পকলার লোকেরা দেইখা ভাববে যে আমি পত্রিকার লোক না.. কে না কে...বাগড়া দিয়ে বসে যদি, আমি বললাম, চলেন রমনা পার্কে যাই। রাজি হইয়া গেলেন। হাঁটতে হাঁটতে আমরা রাস্তা পার হইয়া রমনা পার্কে গেলাম। রমনা পার্কে গিয়া লেকের পাড়ে বসলাম। কারণ, আমি জানতাম, প্রকৃতি তাঁর পছন্দের। কাজেই কোনো একটা জায়গায় বসাতে হবে। তখন পাখির ডাক, সুন্দর গাছগাছালি রমনায় যথেষ্টই ছিল। সুলতান সত্যি ইমপ্রেসড হলেন। অনেক ছবি তুললাম। কথা বললাম। উনি আমাকে দাওয়াত দিলেন, 'আমার স্টুডিও আছে, অনেক বড় স্টুডিও। আপনি কখন আসবেন, আমাকে জানাবেন। ওখানেই থাকা—খাওয়া সব হবে।' আমি তো মহাখুশি।
পার্কে বক্স ক্যামেরায় ছবি তুলেছিলাম। সাত—আটটার মতো। তখন একটা ফিল্মের মধ্যে ১২টা এক্সপোজার। রোল ফিল্ম। দুজনে মিলে এক ফ্রেমেও ছবি তুললাম একটা। ওই আজকের দিনের সেলফির মতো। মাটির মধ্যে ক্যামেরা রেখে দিলাম, অটো এক্সপোজার দিয়ে। বসছি পার্কের বেঞ্চে। উনি তখনো কালো আলখাল্লা পরা শুরু করেননি। খদ্দরের একটা পাঞ্জাবি পরা। তবে সেটাও অদ্ভুত একটা পাঞ্জাবি আর পাঞ্জাবির নিচে একটা গেঞ্জি। নিচে ফুল প্যান্ট। চুল তখনো বড়ই। ওই রকমই, ওয়াইল্ড। তখন সুলতানের বয়স ৫৩ হবে। নিয়মিত তখনই গঞ্জিকা সেবন করেন। চোখে চশমা ওঠে নাই তখন। জীবনযাপন অন্য রকম, এলোমেলো। পরে সুলতান চশমাও নিলেন, নকল দাঁত লাগালেন।

প্রশ্ন: আমন্ত্রণ তো পেলেন, গিয়েছিলেন সুলতানের স্টুডিওতে? আগে থেকে খবর নিয়ে গিয়েছিলেন?

মামুন: গিয়েছিলাম। ফাইনালি, সেটা ১৯৭৮ সালে। খবর আমি দিছিলাম। টেলিফোন কইরা, ট্রাঙ্কল করতে হইত তখন। ওইভাবে যোগাযোগ হইছে। তো ওইভাবে নির্দিষ্ট টাইমে আমি গেলাম। সাড়ে তিনটার দিকে। কারণ, যশোর হইয়া যাইতে হইত তখন। অনেক লম্বা জার্নি। রূপগঞ্জ বাজারের এসে নামলাম। নড়াইল শহরের প্রায় এক মাইল বা এক কিলোমিটার আগে এ বাসস্ট্যান্ড। রিকশাওয়ালাকে বলা মাত্র সুলতানকে চিনল। আশপাশের কয়েকটা যুবক ছিল, তারাও চেনে। সুলতান সবার কাছে লাল মিয়া। দুজন যুবকও আমার সঙ্গে রিকশায় উঠেবসল। রিকশায় জায়গা হয় না। আমি ভয়ও পাচ্ছি, চিনি না কোথায় নিয়া যাবে! ওরা দুই পাশে বসল। আমারে মাঝখানে সুন্দরভাবে বসাইয়া ব্যাগট্যাগ নিল ওরা। সুলতানের বিরাট দোতলা বাড়ির সামনে এসে ওরা নেমে চলে গেল। দেখলাম: সুলতানের বাড়িবোঝাই গাছগাছালি। কিন্তু বাড়ি খুবই ভাঙাচোরা। ধ্বংসাবশেষ প্রায়। পরে জানলাম, ওটা ছিল নড়াইল জমিদারদের অনেক কোঠাবাড়ির একটা। খাজনা, দাপ্তরিক কাজ, কখনো জমিদারদের বংশধরেরাও বসবাস করত এসব বাড়িতে। ১৯৪৭—এর পর জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়ে গেল, ১৯৫০—এর পর এসব জমিদারবাড়ি অ্যাবান্ডনড সম্পত্তি। এটাও সে রকম এক বাড়ি, পোড়ো বাড়ি। ১৯৭১—এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়ির দরজা—জানালা চুরি হয়ে গেছিল। দামি কাঠের আসবাব ছিল, সব। এ রকম এক বাড়ির দোতলায় যখন উঠলাম, তখন আমার গা ছমছম করে উঠল। চারদিক থেকে বুঝলাম, খুবই দরিদ্র অবস্থায় আছেন সুলতান। ওই যে স্টুডিও বলছে, বড় স্টুডিও, কিন্তু এসে দেখলাম থাকার জায়গাই নাই। এটা কোনো বাড়ি! বিছানা নাই, বালিশ নাই, কোনো ফার্নিচার নাই। আস্তে আস্তে রুমগুলো দেখলাম। আমি তো থাকার জন্যই গেছি। ছবি তুলব, কয়েক দিন থাকব। কাপড়চোপড় সেভাবেই নিয়ে গেছি। শীতের দিন তখন, সম্ভবত ডিসেম্বর মাস। মাঘ মাসের শীত চলছে। বিদ্যুৎ নাই। এ বাড়িতে সাপ্লাইয়ের কোনো পানি নাই। ভয়াবহ অবস্থা! 

উনার নিজের থাকার যে রুম, তাতে ছোট্ট একটা চৌকি। চৌকির মধ্যে একটা চাটাই। চাটাইয়ের ওপরে একটা কাঁথা। ওইটার মধ্যে ঘুমায়, শতছিন্ন কাঁথা। নিজের ঘুমানোর জায়গার কথা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়লাম। মাথায় তখন এটাও ঘুরছে, সুলতান একজন সেলিব্রিটি, এস এম সুলতান, গ্রেট ম্যান— তাঁর এই অবস্থা, খালি দেখতেছি আর অস্থির হয়ে যাচ্ছি। দেখতে দেখতে বিকাল সাড়ে চারটা বেজে গেছে। সুলতান নির্বিকার। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। ওর মধ্যে সুলতানকে খেয়াল করলাম: পিঠটা অদ্ভুত ধরনের, সামনের দিকে বেঁকে আছে ...একটা কার্ভ। পাতলা একটা লোক। বড় আলখেল্লা পরত যখন, তখন পিঠের ওই কুঁজো ভাবটা দেখা যেত না। এদিকে খিদেয় মাথা ঝিমঝিম করছে আমার। চারটা সাড়ে চারটা বাজে, সুলতান তখনো কিছু বলে না। আমিও বলতে পারতেছি না খিদের কথা, ভয় লাগছে, প্রথম গেছি। ...আরও পরে বুঝলাম: কাউকে পাঠিয়েছেন চাল, ডাল জোগাড় করে আনার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যে চুলা জ্বলল, মাটির চুলা। সুলতানের পালিত কন্যার নাম নিহারবালা দেবী, পরিচয় করিয়ে দিলেন আমার খুব প্রশংসা করলেন: নামকরা ফটোগ্রাফার, আমার বন্ধু। আমার ওপরে কাজ করবে, এখানে থাকবে, মেহমান। কিন্তু নিহারবালা খুবই বিরক্ত হলেন। তার দুই মেয়ে সঙ্গে। তারাও বিরক্ত। কেউ কথা বলতেছে না। ওই মহিলা একবার বলল: কিসের মধ্যে যে পড়ছি? 

প্রশ্ন: আপনি কি পাততাড়ি গুটিয়ে ভেগে যাওয়ার চিন্তা করলেন?

মামুন: না। অমি গা করলাম না। এত দূর থেকে আসছি... কেউ আমাকে পছন্দ করুক আর না করুক, ছবি তোলার কাজটা আমার শেষ করে যেতেই হবে এখান থেকে। রাতে শোয়ার জায়গা হলো মাটিতে। এবং রাতে আরেক অভিজ্ঞতা।

প্রশ্ন: সেটা কেমন?

মামুন: আগাথা ক্রিস্টির ফিল্ম বলতে পারো বা হরর ফিল্ম। বাতি নেই, পুরো বাড়ি অন্ধকার। হঠাৎ অন্ধকারের মধ্যে অনেক চোখ। দেয়ালের ফাঁকে, ছাদে... কোথায় নেই! কী এগুলো, শরীরর কাঁপছে। একটু পর বুঝলাম বাদুড় থেকে শুরু করে নানান ধরনের জীবজন্তু ওগুলো... খাঁচার মধ্যে রাখা। খাঁচাগুলি বাইরে শুধু তার দিয়ে ঘেরা। পাল্লাহীন সব দেয়াল আলমারি ওগুলো। পুরোনো আলমারি। এর মধ্যে আছে বেজি, নানান ধরনের বেজি। আরও কী কী অদ্ভুত ধরনের জন্তু। আমি কোনো দিন দেখিও নাই, একটা দেখলাম উদ্বিড়ালের মতো। কিন্তু এরা তো খাঁচায় বাঁচে না! পানি খেতে হয়।... আছে বড় বড় বনমোরগ। দড়ি দিয়ে বাঁধা। বনবিড়াল। আতঙ্কে কাটা হয়ে গেলাম। ওইটা যদি খাঁচা থেকে বের হয়ে আসে...এ সময় সুলতান হারিকেন নিয়ে ঢুকলেন। রাত আড়াইটা কি তিনটা তখন। আমি দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি, মাটিতে শুয়েছি। প্যান্ট, শার্ট, জুতা পরেই। শীত থেকে বাঁচতে মাফলার দিয়ে গলা—মাথা প্যাঁচাইছি। কোনো কাঁথা নাই, তোশক নাই, বালিশও নাই। আমার ব্যাগ একটা মাথার নিচে দিছি। সুলতানের এসব দিকে খেয়াল নেই। নির্বিকার, স্বাভাবিক। বোঝার চেষ্টা করলাম, এত রাতে সুলতান হারিকেন হাতে উঠে এসেছেন কেন? কালো আলখাল্লা পরা ছয় ফুট লম্বা একটা লোক। ছায়ার মতো দেখা যাচ্ছে শুধু। উনি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সব জীবজন্তুরা আওয়াজ করতে শুরু করেছে, কোরাসের মতো। হঠাৎ আওয়াজ বন্ধ। দেখি সুলতান প্রতিটি খাঁচায় গিয়ে কথা বলতেছেন। নিচু গলায়। শুধু একটা কথা বুঝলাম: ...তোদেরকে আজকে খেতে দিতে পারি নাই। মেহমান আসছে ঢাকা থেকে, মেহমানকে বিরক্ত করিস না। ওকে ঘুমাতে দে। কালকে তোদের খেতে দিব। বুঝলাম, আজকে আমার কারণে পশু-পাখিদের খেতে দিতে পারেন নাই; কারণ, আমাকে খাওয়াতে হয়েছে।

প্রশ্ন: ছবি তোলা শুরু হলো পরদিন থেকে?

মামুন: ওই বাড়িতে ছবি তুললাম, তারপর গ্রামে বের হইলাম। সুলতান যেসব জায়গায় বড় হয়েছেন, চিত্রা নদী, সাঁওতালপল্লি... অল্প সময়ে অনেক ছবি তুললাম। জায়গাটা তো খুব বেশি বড় না, ছোট। চিত্রা নদীর পাড়েই সুলতানের এই বাড়ি। পানি বাড়লেই বাগানে ঢোকে। অনেক ছবি তুললাম। সঙ্গে নানা কথা। শাহেদ সোহরাওয়ার্দী, মুকুলচন্দ্র দে, আবেদিন স্যার, পাকিস্তানের কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ...আরও অনেকের গল্প। 

প্রশ্ন: সুলতান আঁকছেন এ রকম কোনো ছবি... মানে আপনার সামনেই তিনি এঁকে চলেছেন, এ রকম ঘটনা আছে?

মামুন: 'চরদখল'—এই ছবিটা আঁকা দেখছি আমি, ১৯৭৬ সালের ঘটনা। এটার ছবি আমার তোলা। কিন্তু এই ছবিটা ধ্বংস হয়ে গেছে। কারও কালেকশনে নাই। চরদখলের এটাসহ সুলতান আমার জানামতে ছয়টা ছবি আঁকছিলেন। অন্যগুলি পাওয়া যায় কিন্তু এই ছবিটা পাওয়া যায় না। এইটা তখন উনি বিক্রি করতে পারেন নাই। নড়াইলে নিয়ে গেছিলেন। নেওয়ার পরে অন্য সব ছবির মতো ঘুণপোকায় ড্যাম্প হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এই ছবিটা আমি ১৯৭৮-৮১ সালেও দেখছি।

শিল্পী এস. এম সুলতান।

প্রশ্ন: নড়াইলে সেবার আট দিনে ছয়টা ফিল্ম ব্যবহার করছিলেন, তাই না। তার সঙ্গে গ্রামে ঘোরার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

মামুন: হ্যাঁ...এ রকমই...ছয়টাতে ছয় বারো ৭২ ছবি। একটা ঘটনা বলি শুধু... সুলতান এক চায়ের দোকানে নিয়ে গেছেন আমাকে, সকালবেলা। গিয়ে টেবিলের দিকে মাথা নিচু করে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। মাটির কাপে চা। এক হিন্দুর দোকান, চা দেওয়ার পর উনি দোকানিকে বারেবারে বলতেছেন, 'বিস্কিট। বিস্কিট দে, মেহমানকে বিস্কিট দে...'। তিন—চারবার বললেন। দোকানি খালি গায়ে বইসা রইছে। ছোট বাচ্চা ছেলেটা আমাদের চা দিয়েছে। কিন্তু বিস্কুট দিচ্ছে না। চায়ের দাম কম, বিস্কুটের দাম বেশি। কারণ, দোকানি জানে লাল মিয়ার কাছে পয়সা নাই। সে বিড়বিড় করে বলতেছে...বাকি খাইয়া চইলা যাবে। পয়সাও তো দেবে না... সুলতান ভাইও শুনছেন তার এ কথা। কিন্তু নির্বিকার, পেপার পড়ে যাচ্ছেন। আমরা চা খাইলাম। দুটো বিস্কুট অবশ্য দিছিল। ওঠার সময় সুলতান ভাই বললেন, সময় আসলে তোকে চার গুণ দিয়ে দিবানে। 

ফেরার দিন সুলতান ভাই নিজে বাসস্ট্যান্ডে আসলেন। বাসে উঠে আমার জন্য ভালো সিট বাছাই করে দিলেন। দেখি বাসের লোকজনের কাছেও তাদের লালমিয়া অনেক সম্মানের। ভাড়াও কম রাখল কনডাক্টর। সুলতান ভাইয়ের সাথে এপর থেকে কনস্ট্যান্ট যোগাযোগ ছিল। ঢাকায় এলে কবে কবে আসে। কোন মাসে। কোথায় গিয়া উঠতে পারে... আমারও ফোন নাই, উনারও ফোন নাই। তখন তো ট্রাঙ্কলের ব্যবস্থা। ফোন থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যায় না। তারপরও যোগাযোগ ছিল। উনি এলেই খবর দিতেন আমারে। আমার ঠিকানা জানা ছিল। গ্রিন রোডে স্টাফ কোয়ার্টারের কাছে আমার একটা স্টুডিও ছিল। স্টুডিও নেহার। যেখান থেকে আমি ফটোগ্রাফির যাত্রা শুরু করেছি। সুলতানের কাছে ওই স্টুডিওর ঠিকানা দেওয়া ছিল। সুলতান ভাই ওখানে লোক পাঠাইত। 

প্রশ্ন: ঢাকা এলে নাকি লোকজন তাঁকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখত নানা ধান্ধায়, এটা কি ঠিক?

মামুন: ঢাকায় এলে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতাম। এটা আরেক রকম ব্যাপার ছিল। এটা ঠিক, ঢাকায় যখন উনি আসত, তখন দেখতাম, তাঁর পিছে লোক লেগে গেছে। ছবি আঁকানো, তাঁরে নিয়া চা খাওয়ানো বা তাঁরে বাসায় নিয়া যাইয়া এক বেলা খাওয়ানো, এই রকম। এ রকম হচ্ছিল এ কারণে যে সুলতানের ছবির দাম তখন অনেক। ওই ১৯৭৮ সালেই তাঁর ছবির অনেক দাম ছিল। শুধু ঢাকা না, নড়াইলেও দেখছি ঢাকা থেকে কিছু লোক হাজির হয়ে গেছে। এমনভাবে যেত তারা, মনে হতো বেড়াতে গেছে, কিছু বোঝে না, জানে না। আমার সঙ্গেও এ রকম অনেকের দেখা হয়ে গেছে, তখন দেখেছি, তারা তাদের উদ্দেশ্য বলত না। খালি হাসত, আর সুযোগ খুঁজত সুলতান ভাইরে কীভাবে একা পাওয়া যায়। এক ফাঁকে ছবি আঁকাইয়া নিয়া চলে যাবে ঢাকায়। ছবি নিয়েই সোজা ঢাকার বাসে উঠবে। সুলতানের ছবি মানে তখন আসলে একটা ব্যাংক চেকের মতো। এ রকম দেখেছি যে ৫০০ টাকা দিয়া দুইটা ছবি আঁকাইয়া নিয়া যাইতেছে সুলতানকে দিয়ে। ইজেল নাই, কিচ্ছু নাই, স্টুডিও নাই, মাটিতে বইসা ছবি এঁকে দিতে পারতেন। আমার ছবির মধ্যে আছে উনি মাটিতে বইসা ছবি আঁকতেছেন। সুলতান ওভাবেই মাটিতে বসেই খাইতেন, ওইখানেই ছবি আঁকতেন। খাওয়া—আঁকা মাটিতেই।

প্রশ্ন: এই রকম জীবনযাপন কেন? যাঁর ছবি গোড়া থেকেই ভালো দামে বিক্রি হতো?

মামুন: কারণ, সুলতান জানতেন, সুলতান সবচেয়ে স্মার্ট শিল্পী। সুলতান ইচ্ছা করেই এই জীবন বাইছা নিছিলেন। কারণ, উনি জানতেন, তাঁর শিল্প, তাঁর যে কাজ, তাঁর শিল্পের ডেস্টিনেশন অনেক দূরে। সুলতান জানতেন, ৫০ বছর, ১০০ বছর পরও সুলতানের কাজ থাকবে। এই বিশ্বাস তাঁর কথাবার্তার মধ্যে প্রকাশ পেত... কথাপ্রসঙ্গে অনেক কথা বলতেন সুলতান। হাইলি ফিলোসফিক্যাল কথাবার্তা, তাঁকে আমি শিল্পী এবং দার্শনিক বলি। আমি গবেষক না। গবেষকেরা দেখবেন। সুলতানের প্রতিটা ছবির মধ্যে অনেক লেয়ার আছে। এস এম সুলতানের ছবির পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন এখনো বাকি।

প্রশ্ন: ছবির বাইরে সুলতানের অন্য কোনো দিক চোখে পড়েছে?

মামুন: তাঁর ওই বাড়িতে, যে বাড়িতে ছিলেন, ওইখানে ছবি আঁকার বাইরে পড়াশোনা করার বা অন্য কোনো কিছু ছিল না... যা পড়াশোনা করার তা তাঁর আগেই করা, আগেই করে ফেলছেন। সুলতান ছিলেন, ওই যে আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলতেন, জীবনপাঠ। সুলতান এটা করেছেন... একবার যা দেখতেন, বুঝতে পারতেন। মানুষের ভেতরের এনাটমি জানার জন্য কৌতূহল ছিল... নিজ মুখেই বলেছেন, ডোমদের সঙ্গে সখ্য গড়েছিলেন, নড়াইল সদর হাসপাতালের যে মর্গ ছিল, ওখানে নিয়মিত যেতেন। তাঁর ডোম বন্ধু সুলতানকে অনেক সময় লাশ কাটার ঘরের চাবি দিয়া অথবা দরজা খুলে দিয়ে চলে যেতেন। লাশ টেবিলের ওপরে আছে, মৃত মানুষ। সুলতান লাশ কাটাছেঁড়া করে দেখতেন যে ভেতরে কী আছে। ধমনি আছে, কোথায় শিরা, হাড় কেটে দেখছেন, সুলতান নিজে বলেছেন, পেট কাইটা দেখছেন কোথায় কী আছে। এই একই কাজ সুলতান করছেন কলকাতা আর্ট স্কুলে পড়ার সময়ও, সেই ১৯৪০—৪১ সালেই।

ওখানে একটা হাসপাতালে চাকরি নিয়েছিলেন এক প্রাইভেট হাসপাতালে। তাঁর কাজ ছিল এই লাশের শরীরের ছবি আঁকা। কেটে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ছবি আঁকা। ড্রইং, স্কেচ। সুলতান জীবন দেখতে চেয়েছেন। আবার শিল্পের কারণে তিনি পারিবারিক জীবনে ঢোকেন নাই। সুলতানের বান্ধবী ছিল কলকাতায়, পাকিস্তানে। এমনকি লন্ডনে যখন গেছে, সেখানেও তাঁর নারী বন্ধু ছিল। কিন্তু উনি কোনো সময় কারও সঙ্গেই সংসার জীবনে ঢোকেন নাই। সুলতান বিশ্বাস করতেন, একটা মানুষের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে গেলে তার শিল্পজীবন ব্যাহত হবে। এটা উনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। বান্ধবী ছিল, শারীরিক সম্পর্ক ছিল। সেসব নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। সামনে লিখব। তাঁর ভারত, পাকিস্তানে যাওয়া, ঢাকায় আসা, নিউইয়র্ক, লন্ডনে যাওয়া, ওই তিনটা পর্ব আলাদা আলাদা। কাজ করার পরিকল্পনা আছে। 

সুলতানের ব্যক্তিগত জীবন যেমন ছিল, তাঁর শিল্পকর্মও তা—ই ছিল। তাঁর চলাফেরা, কথাবার্তা— এই যে তাঁর বেশভ'ষা, দীর্ঘ আলখেল্লা পরা, এর কাহিনি কী? এই আলখেল্লাটা বা আলখেল্লার কাছাকাছি পোশাক, সুলতান পরা শুরু করেন চল্লিশের দশক থেকে। জমিদাররা যেমন প্রিন্স কোটের মতো কোট পরত, সে রকম পোশাক সুলতানকে দিয়েছিলেন নড়াইলের জমিদার। ব্রিটিশ টেইলার দিয়ে ডিজাইন। জুতা-টুতাও উপহার পাইছিলেন। ওগুলা সব পরিত্যাগ করেন সুলতান। তিনি নিজের মতো পোশাকের একটা সংস্করণ বানান, তা ওই কালো আলখেল্লা। একবার মাথা গলিয়ে দিলেই হতো, বোতামের ঝামেলা নাই। পরে পাকিস্তানের প্রখ্যাত আর্টিস্ট সাদেকিন সুলতানকে একটা কালো আলখেল্লা দিয়েছিলেন। ওইটা সব সময় পরতেন। বাংলাদেশে আসার পরেও বেশির ভাগ সময় পরতেন। নিজে দোকানে গিয়া ওই ডিজাইনে আলখেল্লা বানাইতেন। সব সময় যে ওইটা পরতেন, তা না। আমার কাছে কোটওয়ালা ছবি আছে। শার্টওয়ালা ছবি আছে। তার বেশির ভাগ কোট, শার্ট, কাপড়চোপড় আলখেল্লা ছাড়া সবই সেকেন্ড হ্যান্ড।

প্রশ্ন: সুলতান—আহমদ ছফা সখ্যের শুরু কখন থেকে, শুনেছি সুলতানকে ইন্টারন্যাশনাল হলে ছফার কাছে আপনি নিয়ে গিয়েছিলেন?

মামুন: ডিসেম্বরে, ১৯৭৯ সালে আহমদ ছফার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হলো সুলতানের। আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসে থাকতেন তখন ছফা ভাই। ওইখানে আমি সুলতান ভাইকে নিয়া গেছিলাম। ছফা বলছিলেন, তুমি যেখানেই পাও, তাঁরে ধইরা নিয়া আসবা। তত দিনে ঢাকায় অনেকে জেনে গেছে, সুলতানের সঙ্গে আমার সখ্যের কথা। শীত তখন। সুলতান ছফাকে সেভাবে চিনতেন না। নামও হয়তো শোনেননি। ওই প্রথম পরিচয়। আর ছফা সুলতানকে নামে চিনতেন, ১৯৭৮—এ এক্সিবিশন দেখেছেন... তো ওই দিন দেখা হওয়ার পর দুজনের আলাপ জমে গেল। সুলতান ভাই বাঁশি বাইর করলেন। ছফাও। দুইজনে বাঁশি বাজাইলেন। আমারে তাঁরা আর চেনেন না। না ছফা না সুলতান। ছফা নড়াইল যাবেন, তাঁদের নানান প্ল্যান, মিউজিয়াম করবেন। এক্সিবিশন হবে। সুলতানের ছবির প্রদর্শনী হবে জার্মানিতে, নানান রকম প্রজেক্ট—প্ল্যান—তাঁরা সব কইরা ফেললেন। দেখলাম যে দুইজনই পাগলামিতে মেতেছেন। ১৯৮৬ সালে জার্মান কালচারাল সেন্টারে সুলতানের বড় প্রদর্শনী হলো। সেটার পুরো কৃতিত্ব ছফার।

আহমদ ছফা সুলতানের ওপরে একটা ছোট বইও লিখছেন—'বাংলার চিত্র ঐতিহ্য ও সুলতানের সাধনা'। আহমদ ছফা এই বই লেখার আগে নিজেই ছবি আঁকা শুরু করলেন। আলকাতরা দিয়া ছবি আঁকেন। পয়সা নাই তো তাঁর, রং কেনার পয়সা নাই। কীভাবে তুলি ধরতে হয়, ধরলে মনের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়, এসব নানা পাগলামি... সুলতানকে নিয়ে লেখার আগে পড়াশোনার পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যালি এগুলো করেছেন ছফা। ছফা পরে ওই বই, আর আলকাতরায় আঁকা ছবি নিয়া প্রফেসর রাজ্জাক স্যারের কাছে বিক্রি করতে গেছেন। রাজ্জাক স্যার ছবি দেখে প্রশংসা করতেন: 'বহুত ভালো হইছে, বহুত ভালো হইছে ছবি, ছফা মিয়া! সেই ছবি রাজ্জাক স্যার টাকা দিয়ে কিনতেন। পরে ছফা চলে যাবার পর নাকি হাসতেন, হুঁকা খাইতেন আর হাসতেন। ছফার সামনে তো আর হাসা যায় না, তাতে ছফা রাগ হবে। কিছুদিন পরে ছফা আইসা ওই ছবি নিয়া যেতেন, অন্যজনের কাছে আবার বিক্রি করতেন। তারপর আবার আসতেন রাজ্জাক স্যারের কাছে নতুন ছবি নিয়ে। যথারীতি রাজ্জাক স্যার কিনতেন।

প্রশ্ন: সুলতান নিজেই রং বানিয়ে ছবি আঁকতেন, স্থায়ীত্বের কথা না জেনেই?

মামুন: হ্যাঁ, সুলতানকে রং বানাতে দেখেছি। কয়েকবার। সুলতান কেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্ট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রং ব্যবহার না কইরা গাছের রঙে গেলেন? সুলতান চাইতেন যে বাংলাদেশের যারা গ্রামে থাকে, তারা ক্যানভাস কিনতে পারে না। এবং ইউরোপের থেকে যে রং আসে, সেই রংও তারা কিনতে পারে না। এত দাম। তাহলে তারা ছবি আঁকবে কেমনে? সুলতান মনে করতেন, ছোটদের ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা উচিত। তাহলে কেউ ক্রাইম করতে পারবে না। মানে দেশের মধ্যে সমাজে অনাচার, ক্রাইম এগুলো কমে যাবে। মানুষ শান্তিতে থাকবে। এবং যে ছবি আঁকতে পারবে, বড় আর্টিস্ট হয়ে সে বিলিয়ন ডলার ইনকাম করতে পারবে। সেই জন্য সুলতান শিশু স্বর্গ করছিলেন। আর উনার যে ফিলোসফিটা ছিল যে গ্রামের ছেলেমেয়েরা যেহেতু রং কিনতে পারবে না, ক্যানভাস কিনতে পারবে না, সেই জন্য চট কিনে এর ওপর ছবি আঁকবে। চটের দাম কম। তবে সুলতানের বানানো রঙে আঁকা ছবি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। প্রশ্ন হলো, উনি কি জানতেন না? অনেকে তাঁর রং বানানো নিয়ে হাসে। কিন্তু  সুলতান অবশ্যই জানতেন, এ উদ্যোগ ছিল ছোটদের উৎসাহিত করার জন্য, স্বপ্ন দেখানোর জন্য। লক্ষ ছিল একটা বড় জেনারেশনকে সম্পৃক্ত করা, যারা পরবর্তীকালে শিল্পী হবে।

প্রশ্ন: সুলতান হার্ডবোর্ডে ছবি এঁকেছেন এ কারণে? 

মামুন: হার্ডবোর্ডে ছবি আঁকার কথা বলি...মাটিতে বিছিয়ে হার্ডবোর্ডের মধ্যে একটা লেয়ার দিয়া সুলতান আর আমি বাইরে থেকে ঘুরে আসলাম। নড়াইলের বাড়িতে গেছি। সুলতান খালি পায়ে। কাদাটাদা লেগে আছে। কারণ, আমরা নদীর পাড়ে গেছিলাম, নদীও পার হইছি। সুলতান কাদা পায়েই ক্যানভাসে বইসা পড়লেন। ওই কাদা রঙের সাথে মিশে বিষয়বস্তুর সাথে মিশা অন্য এক শিল্প তৈরি হইল। ...ওই কাদার মধ্যে, অদ্ভুত জিনিস। সুলতানের ছবি আঁকা দেখলে মনে হয়, তখন তাঁর চোখ, তাঁর সমস্ত স্নায়ু, তাঁর শরীরের যে শিরা—উপশিরা, সেগুলিও মনে হয় ছবি আঁকছে। ধ্যানগ্রস্তের মতো। তখন তিনি আর কথা বলতেন না। আপনি পাশে আছেন, কিন্তু ছবি আঁকার সময় সুলতান কারও সাথে কথা বলতেন না। পছন্দ করতেন না। উনি কী একটা ধ্যানের মধ্যে থাকতেন। অন্য এক জগতে।

প্রশ্ন: সুলতানকে নিয়ে নানা মিথ, খেয়ালি গল্প প্রচলিত...ছবি তুলতে গিয়ে কখনো সমস্যা হয়নি আপনার?

মামুন: না, কোনো দিনই না। সুলতান ভাই আমার ক্যামেরার সামনে এমনভাবে নিজেকে সমর্পণ করতেন যে আমি যেভাবে চাইতাম, ওইভাবে উনি থাকতেন। এমনও হয়েছে দুপুরে শুইছে, আড়াইটা তিনটা, আমি আছি। বাথরুমে বইসা আছে খালি গায়ে। নেংটি পরা। ছবি তুলেছি। অনেক ফটোগ্রাফার তো তাঁর ছবি তুলছে। কিন্তু তাঁর প্রাইভেট লাইফে কেউ ঢুকতে পারে নাই। সুলতানের প্রাইভেট লাইফে কেউ কখনো ঢুকতে পারে নাই।

প্রশ্ন: সুলতানের ছবি তোলা নিয়ে কি কোনো অতৃপ্তি আছে আপনার মধ্যে?

মামুন: সে রকম না। তবে একটা ছবির কথা মনে পড়ে। নানাভাবে। চরদখল যে ছবিটার কথা বলেছি আগে। সেই চরদখল ছবির পরিণতি...ছবিটা আমি আঁকতে দেখছি। চরদখল ছবিটা যখন উনি আঁকেন, তখন একটা ড্রইং করেন প্রথমে চারকোল দিয়া। আগেও অনেকগুলা ছবিতে আমি দেখছি উনি চারকোল দিয়া ড্রইং করতেছেন। ওই ড্রইংয়ে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, সে কী আঁকতেছে। হঠাৎ মনে হইছে, কোনো ডিজাইন ফুটে উঠতেছে... গোল্লা গোল্লা কী কী যেন। তারপর মাসলগুলা ফুটে উঠতেছে... একটা লাইন দিয়ে দিয়ে মানুষ। তারপরে প্রত্যেকটা চরিত্র আলাদা আলাদা ধরে কাজ শুরু করলেন। অবাক হয়ে যেতে হয়—কত কত চরিত্র ওই ছবিতে। তাঁর অনেক ছবি আছে—দুই—তিন শ ক্যারেক্টার। ও রকম এই বাংলায় দেখছেন কাউকে আঁকতে? একটা ক্যানভাসের মধ্যে এত ক্যারেক্টার...কিন্তু প্রত্যেকটা ক্যারেক্টার আলাদা। আপনি যখন মাইক্রোস্কোপিক ওয়েতে দেখবেন ওগুলা, তখন মনে হবে যে তাদের চোখ এবং তারা যে আক্রমণ করতে যাচ্ছে...সব পরিষ্কার।

বাংলার মানুষের মহাশক্তি, সেই শক্তি কিসের? তাঁর শরীরের শক্তি না। তাঁর শরীরে একদম কোনো শক্তি ছিল না। তাঁর যে মনের শক্তি, তাঁর যে কল্পনার শক্তি, সেইটা দিয়ে সে উঠে দাঁড়াত। এস এম সুলতানের মতো লিকলিকে একটা মানুষ...চরদখলের এক মহাকাব্যিক দৃশ্য ফুটিয়ে তুলছেন। কিন্তু এই ছবিটা বাঁচানো সম্ভব হয় নাই। ছবিটা বাঁচানো যায় নাই। এই রকম আরও অনেক ছবি, যেগুলো বিক্রি হয় নাই, নিয়ে গেছিল নড়াইলে। এবং আমাকেও মাঝে মাঝে বলতেন, 'এগুলি নিয়ে যান।' আমি বাসের ওপরে উঠাইয়া দিব। আমি যদি তখন নিয়ে আসতাম, এই ছবিগুলো আমি যদি বিক্রিও করে দিতাম, কারও না কারও কাছে থাকত বাংলাদেশে। কিন্তু আমি আনি নাই, আমি সাহসও করি নাই। এই দুঃখ আজও পোড়ায়।

Related Topics

টপ নিউজ

এস এম সুলতান / চিত্রকর্ম / শিল্পকলা একাডেমি / শিল্পকর্ম

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বিএনপি-জামায়াতের জনপ্রিয়তা কমেছে, বেড়েছে এনসিপির: জরিপ
  • ভারতের সঙ্গে ৩ স্থলবন্দর বন্ধ ও ১টির কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার
  • মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ‘সিন্ডিকেট’: লোটাস কামালের পরিবারসহ সাবেক ৩ এমপিকে অভিযোগমুক্তি
  • দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত নয়, বন্ধ করা উচিত: বিটিএমএ সভাপতি
  • ‘আমি কোলাটেরাল ড্যামেজ’: বাংলাদেশে দুর্নীতির মামলা নিয়ে টিউলিপ সিদ্দিক
  • ডানার ফ্ল্যাপ বিকল, ২৬২ যাত্রী নিয়ে রোমে আটকা বিমানের ঢাকাগামী ফ্লাইট

Related News

  • আশিকের স্টুডিও: ট্রাম্প-পুতিনের ঢাকাস্থ আড্ডাখানা!
  • হারিয়ে যাওয়ার আগে জয়নুল, সুলতানদের ছবি পুনরুদ্ধারের লড়াই
  • গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও অবহেলিত, শিল্পকর্ম সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় শিল্পকলা একাডেমি
  • আবারও খেয়ে ফেলা হলো ৬ মিলিয়ন ডলারের সেই কলা!
  • জীবদ্দশায় মাত্র একটি ছবি বিক্রি করতে পেরেছিলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গখ!

Most Read

1
বাংলাদেশ

বিএনপি-জামায়াতের জনপ্রিয়তা কমেছে, বেড়েছে এনসিপির: জরিপ

2
বাংলাদেশ

ভারতের সঙ্গে ৩ স্থলবন্দর বন্ধ ও ১টির কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার

3
বাংলাদেশ

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ‘সিন্ডিকেট’: লোটাস কামালের পরিবারসহ সাবেক ৩ এমপিকে অভিযোগমুক্তি

4
বাংলাদেশ

দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত নয়, বন্ধ করা উচিত: বিটিএমএ সভাপতি

5
বাংলাদেশ

‘আমি কোলাটেরাল ড্যামেজ’: বাংলাদেশে দুর্নীতির মামলা নিয়ে টিউলিপ সিদ্দিক

6
বাংলাদেশ

ডানার ফ্ল্যাপ বিকল, ২৬২ যাত্রী নিয়ে রোমে আটকা বিমানের ঢাকাগামী ফ্লাইট

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab