Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

হারিয়ে যাওয়ার আগে জয়নুল, সুলতানদের ছবি পুনরুদ্ধারের লড়াই

শিল্পকর্ম সংরক্ষণের আগে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হয় ব্যবহৃত রঙ, উপকরণ এবং নির্মাণকাল। এর মাধ্যমে উপকরণগুলোর ব্যবহার-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। আর এই বিশ্লেষণেই কনজারভেটর নির্ধারণ করেন সংশ্লিষ্ট শিল্পকর্মে কী ধরনের ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।
হারিয়ে যাওয়ার আগে জয়নুল, সুলতানদের ছবি পুনরুদ্ধারের লড়াই

ফিচার

সালেহ শফিক
06 August, 2025, 08:05 am
Last modified: 06 August, 2025, 08:07 am

Related News

  • গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও অবহেলিত, শিল্পকর্ম সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় শিল্পকলা একাডেমি
  • আবারও খেয়ে ফেলা হলো ৬ মিলিয়ন ডলারের সেই কলা!
  • ফুলঝুরি সিস্টার্স: সরোদ হাতে দুই বোনের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন
  • জীবদ্দশায় মাত্র একটি ছবি বিক্রি করতে পেরেছিলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গখ!
  • ১২৫ বছরে কারও চোখে পড়েনি ভ্যান গখের চিত্রকর্মে লুকানো এই বৈজ্ঞানিক রহস্য

হারিয়ে যাওয়ার আগে জয়নুল, সুলতানদের ছবি পুনরুদ্ধারের লড়াই

শিল্পকর্ম সংরক্ষণের আগে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হয় ব্যবহৃত রঙ, উপকরণ এবং নির্মাণকাল। এর মাধ্যমে উপকরণগুলোর ব্যবহার-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। আর এই বিশ্লেষণেই কনজারভেটর নির্ধারণ করেন সংশ্লিষ্ট শিল্পকর্মে কী ধরনের ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।
সালেহ শফিক
06 August, 2025, 08:05 am
Last modified: 06 August, 2025, 08:07 am
সুলতানের গ্রামীণ জীবন সিরিজের একটি ছবি (সংরক্ষণের পরে)।

মোহাম্মদ হাসানুর রহমান রিয়াজ পড়েছেন ভাস্কর্য বিভাগে। ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউট (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) থেকে তিনি ২০০২ সালে এমএফএ সম্পন্ন করেন। পাশ করার পর অন্য অনেকের মতো রিয়াজও কাজের খোঁজে ছিলেন।

এ সময়ই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির একটি বিজ্ঞপ্তি তার নজরে আসে। বিজ্ঞপ্তিতে শিল্পকর্ম সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার বিষয়ক একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। ১২৬ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে আটজনকে বাছাই করা হয়, যাদের একজন ছিলেন রিয়াজ।

'আ প্রিজারভেশন প্ল্যান ফর দ্য ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি অব বাংলাদেশ' শীর্ষক এই প্রকল্পে অর্থ সহায়তা দেয় নরওয়ের উন্নয়ন সংস্থা নোরাড। কারিগরি ও পরামর্শ সহায়তা দেয় নরওয়েজিয়ান সংস্থা নিকু, আর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

দুটি কর্মশালার পর আটজনের মধ্যে চারজনকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। রিয়াজ সুযোগ পান যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসলের নর্দাম্ব্রিয়া ইউনিভার্সিটিতে।

নিউক্যাসেলে পড়াশোনা শুরুর আগেই রিয়াজকে লড়তে হয় দুটি বড় চ্যালেঞ্জের সঙ্গে—একটি ঠান্ডা, আরেকটি ভাষা।

সেখানে স্থানীয়রা যে ইংরেজিতে কথা বলেন, তা 'জর্ডি' নামে পরিচিত, যা প্রচলিত ইংরেজির একটি উপভাষা। এই ভাষা বুঝতে এবং মানিয়ে নিতে তাকে সময় দিতে হয়।

জীববিজ্ঞানও ছিল পাঠ্যসূচিতে

শিল্পকর্ম সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের পাঠ্যধারা অনেক বিস্তৃত। স্থাপনা থেকে শুরু করে আসবাবপত্র পর্যন্ত—সবই এর আওতায় পড়ে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে স্বতন্ত্র মাস্টার্স কোর্স।

বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করে কোনো শিল্পকর্মকে অধিকতর ক্ষয় থেকে রক্ষা করা এবং তার আয়ুষ্কাল বাড়ানোই কনজারভেশনের মূল লক্ষ্য।

রিয়াজের বিষয় ছিল 'কনজারভেশন অব ফাইন আর্টস' বা 'ইজেল পেইন্টিং'। তার সহপাঠী ছিলেন পাঁচজন—কেউ আইরিশ, কেউ স্কটিশ, আবার কেউ ওয়েলশ। অনেকেই এখন নামকরা কনজারভেটর বা রেস্টোরার হিসেবে পরিচিত।

শিল্পী এসএম সুলতানের গ্রামীণ জীবন সিরিজের একটি ছবি (সংরক্ষণের আগে)।

রিয়াজ স্কুলজীবনে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন না। কিন্তু এই শিক্ষাক্রমে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান ছিল বাধ্যতামূলক। ফলে তাকে নতুন করে এসব বিষয়ে লড়াই করতে হয়। তবু হাল ছাড়েননি তিনি। তার স্বপ্ন—দেশে ফিরে শিল্পকলা একাডেমির সংগ্রহে থাকা শিল্পকর্মগুলো সংরক্ষণের কাজে অবদান রাখবেন।

রিয়াজের পাঠ্যসূচিতে আরও ছিল—শিল্প উপকরণের প্রায়োগিক ব্যবহার, ফটোগ্রাফি স্টাডি, আর্ট হিস্ট্রি ইত্যাদি।

শিল্পকর্ম সংরক্ষণের আগে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হয় ব্যবহৃত রঙ, উপকরণ এবং নির্মাণকাল। এর মাধ্যমে উপকরণগুলোর ব্যবহার-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। আর এই বিশ্লেষণেই কনজারভেটর নির্ধারণ করেন সংশ্লিষ্ট শিল্পকর্মে কী ধরনের ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।

টিউটর অ্যান বেকন

প্রত্যেক শিল্পীর নিজস্ব রং থাকে, যা তিনি বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি করেন। অনেক সময় এক রঙের ওপর আরেক রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়। ফলে পুনরুদ্ধারের আগে নির্দিষ্ট রং চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি।

নিউক্যাসেলে রিয়াজের ক্লাস টিউটর ছিলেন অ্যান বেকন। তাকে অনুরোধ করা হয়েছিল যেন রিয়াজকে তত্ত্বীয় শিক্ষার পাশাপাশি যথাসম্ভব কারিগরি জ্ঞানেও দক্ষ করে তোলা হয়। বেকনও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন। ছুটির সময় রিয়াজকে বিভিন্ন স্থানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ করে দিতেন তিনি।

বনিজুল হকের একটি চিত্রকর্ম (সংরক্ষণের আগে)।

এরই ফল হিসেবে রিয়াজ ইন্টার্নশিপের সুযোগ পান লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে, বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে নটরডেম দেস চ্যাম্পস, কিন চার্চ ও ফ্লোরা গির্জায় এবং নরওয়েতেও।

ভাইকিংদের গির্জায়

রিয়াজ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন ইউরোপের তরুণ কনজারভেটরদের একটি সম্মেলনে অংশ নিয়ে। যুক্তরাজ্যের কোর্টল্ড ইনস্টিটিউটে প্রতিবছর সারা ইউরোপের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়—নির্দিষ্ট বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার জন্য। রিয়াজ সেখানে বাংলাদেশের শিল্প উপকরণ এবং শিল্পকলার ইতিহাস তুলে ধরেন।

এছাড়া তিনি স্বল্পমেয়াদে স্কটল্যান্ড ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি, ব্রিটিশ মিউজিয়াম, গ্লাসগো মিউজিয়ামসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন এবং তাদের কনজারভেশন ল্যাবরেটরিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

রিয়াজ ও তার সহপাঠীরা ক্লাসে বিভিন্ন বিখ্যাত শিল্পীর শিল্পকর্ম সংরক্ষণের জন্য ট্রিটমেন্ট প্রপোজাল বিশ্লেষণের দায়িত্ব পেতেন। এক পর্যায়ে উনিশ শতকের প্রখ্যাত ব্রিটিশ শিল্পী উইলিয়াম জে এম ডব্লিউ টার্নারের একটি চিত্রকর্ম পুনরুদ্ধারের প্রস্তাব তৈরি করতে বলা হয়।

রিয়াজ তার মতামত উপস্থাপন করলে টিউটর বেকন সন্তোষ প্রকাশ করেন। তার মতামত ছিল প্রায় নিখুঁত। তখনও রিয়াজ শিক্ষানবীশ, অথচ তিনি টি আর মাইলস এবং আর ওয়াটসনের তিনটি চিত্রকর্ম পুনরুদ্ধার করে ফেলেছিলেন।

গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে রিয়াজ যান নরওয়ের একটি দ্বীপে। সেখানে নরওয়েজিয়ান প্রশিক্ষক জর্গান সোলস্টেট ও টেরিফোর্ডের তত্ত্বাবধানে একটি প্রাচীন গির্জার পলিক্রোম ভাস্কর্য পুনরুদ্ধারে কাজ করেন রিয়াজ ও তার বাংলাদেশি সহপাঠী সুমন।

গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৩২২ সালে। শোনা যায়, সে সময় আয়ারল্যান্ডের রানী কোনো এক কারণে এই দ্বীপে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ভাইকিংরা তাকে নিরাপত্তা দিলে কৃতজ্ঞতাবশত রানী এই গির্জাটি নির্মাণ করে দেন।

বনিজুল হকের একটি চিত্রকর্ম (সংরক্ষণের পরে)।

একবার বেলজিয়ামের একটি স্কুলে কাজ করতে যান রিয়াজ। ভূমিকম্পে স্কুলটির একটি দেওয়াল ধসে পড়ে, যা আগে একটি গির্জা ছিল। দেওয়ালে থাকা ক্যানভাস-ফ্রেস্কো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রিয়াজ সফলভাবে সেটি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন।

শিল্পকলার ফাইল নড়লো না

শিল্পকর্ম সংরক্ষণের মোটামুটি তিনটি ধাপ রয়েছে—প্রিভেন্টিভ কনজারভেশন, কনজারভেশন এবং রেস্টোরেশন। এর মধ্যে রেস্টোরেশন হচ্ছে চূড়ান্ত পর্যায়ের ধাপ, যেখানে কারিগরি ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার যথাযথ ব্যবহার করা হয়।

কোনো শিল্পকর্ম রেস্টোরারের কাছে এলে প্রথমে তা ডকুমেন্টেশন করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোর ছবি তুলে তৈরি করা হয় 'কন্ডিশন রিপোর্ট'। এরপর তৈরি হয় ওয়ার্ক প্ল্যান—কোন উপকরণ ব্যবহার করা হবে, কতটা সময় লাগবে, কেমন কেমিক্যাল প্রয়োজন হবে—এসবের বিস্তারিত তালিকা।

এই বিবরণীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় বাজেট। ক্লায়েন্ট সম্মতি দিলে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর হয়।

শিল্পী এসএম সুলতানের গ্রামীণ জীবন সিরিজের একটি ছবি (সংরক্ষণের আগে)।

নিউক্যাসেলে দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষে রিয়াজ ও তার সহপাঠীরা দেশে ফেরেন। পরিকল্পনা ছিল, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সবাইকে শিল্পকলা একাডেমিতে নিযুক্ত করা হবে। এ আশাতেই তারা দেশে ফেরেন—যাতে শিখে আসা জ্ঞান দেশের কাজে লাগাতে পারেন।

কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। সংশ্লিষ্ট ফাইল এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে গিয়ে আটকে গেল। একজন মহাপরিচালক যান, আরেকজন আসেন—তবুও কোনো অগ্রগতি হয় না।

বেলজিয়ামে কাজ করার সময় এক সহকর্মী এলিজাবেথ রিয়াজকে বলেছিলেন, "যদি দেশে তুমি নিয়োগ না পাও, তবে ফিরে এসো, আমরা একসঙ্গে কাজ করব।"

কিন্তু রিয়াজ দেশেই থাকতে চেয়েছেন এবং থেকে গেছেনও। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন বিভিন্নভাবে।

রিয়াজের প্রথম সংরক্ষণের কাজটি দেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান। তার সংগ্রহে থাকা শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার একটি এবং শিল্পী শাহাবুদ্দীন আহমেদের চারটি চিত্রকর্ম দিয়েই শুরু হয় রিয়াজের পেশাগত প্রয়োগ।

এই কাজই ছিল তার প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগের প্রথম ধাপ—যাতে তিনি সফলও হয়েছিলেন। কাজটি সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিল তিন সপ্তাহ।

সুলতানের চট

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের কয়েকটি চিত্রকর্ম পুনরুদ্ধারের জন্য রিয়াজকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। একাডেমির একজন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে একটি দল নড়াইলের সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা পরিদর্শন করেন এবং একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেন।

সেখানে সুলতানের চটের ওপর আঁকা মোট ১১টি চিত্রকর্ম রয়েছে। এর মধ্যে 'সভ্যতার ক্রমবিকাশ', 'জমি কর্ষণ', 'গ্রাম্য কাইজ্যা', 'ধান মাড়াই'—উল্লেখযোগ্য।

শিল্পী এসএম সুলতানের গ্রামীণ জীবন সিরিজের একটি ছবি (সংরক্ষণের পরে)।

সুলতান ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহার করতেন চট এবং স্থানীয় উপকরণ দিয়ে রং তৈরি করতেন। তার চিত্রকর্মগুলোর আকারও ছিল বিশাল। যেমন—'সভ্যতার ক্রমবিকাশ' চিত্রকর্মটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬.৫ ফুট এবং প্রস্থ প্রায় ৫.৫ ফুট।

শিল্পকর্মটি ছিল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও রিয়াজ ও তার সহযোগীরা এটি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে পুনরুদ্ধার করেন।

এস এম সুলতানের আরেক অনবদ্য সৃষ্টি—'প্রথম বৃক্ষরোপণ'—পুনরুদ্ধারের কাজেও নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন রিয়াজ।

শুধু সুলতান নন, রিয়াজ যুক্ত ছিলেন আরও বহু গুণী শিল্পীর চিত্রকর্ম পুনরুদ্ধারে। তাদের মধ্যে রয়েছেন—শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, গোপাল ঘোষ, হানু মাইয়া, এম এফ হোসেন, শফিকুল আমিন, পটুয়া কামরুল হাসান, সফিউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ কিবরিয়া, রশীদ চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, আব্দুর রাজ্জাক, আমিনুল ইসলাম, বনিজুল হক প্রমুখ।

রিয়াজ শিল্পীদের কাজ পর্যবেক্ষণ করে সময়ভেদে ব্যবহৃত রঙ, প্রয়োগ কৌশল এবং স্তরবিন্যাসের ভিন্নতা সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি লক্ষ্য করেছেন সময়ভেদে টেকনিকের পার্থক্যও।

দেশে ফেরার পর থেকে রিয়াজ প্রায় ৫০০-র বেশি শিল্পকর্মের পুনরুদ্ধার কাজে যুক্ত ছিলেন, যার অধিকাংশই বিভিন্ন সংগ্রাহকের ব্যক্তিগত কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহ।

এই কাজে তার সহযোগী হিসেবে যুক্ত রয়েছেন হিমু, টিপু এবং নার্গিস পলি। তাদের মধ্যে নার্গিস পলি 'রিটাচিং'-এ বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন। হিমু আলোকচিত্র ধারণ ও ডকুমেন্টেশনের কাজ করেন, আর টিপু উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহসহ কারিগরি সহায়তা দেন।

পূর্বে একই কাজে রিয়াজের সঙ্গে কাজ করেছেন চিত্রশিল্পী মোহাম্মদ মুজাহিদ মুসা, অপু রাজবংশী ও সজল সরকার।

সংরক্ষণ পরবর্তীতে শিল্পী এসএম সুলতানের ধান মাড়াই।

'আমাদেরও দেখানোর মতো কিছু আছে'

রিয়াজ ও তার সহযোগীদের সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হয় এস এম সুলতানের 'সভ্যতার ক্রমবিকাশ' চিত্রকর্মটি পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে। নড়াইলের সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা ভবনটি এত বড় মাপের চিত্রকর্ম প্রদর্শনের জন্য উপযুক্ত নয়।

শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন সভায় এস এম সুলতানের শিল্পকর্ম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব সভায় রিয়াজ বারবার বলেছেন—"এই সংগ্রহশালা ভবনটিকে শিল্পকর্মের উপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন।"

রিয়াজ আক্ষেপ করে বলেন, "দেশে বহু সম্পদশালী ব্যক্তি রয়েছেন, তবু আজও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি কনজারভেশন ল্যাব স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।"

তিনি আরও জানান, কয়েকজন সম্ভাব্য পৃষ্ঠপোষককে তিনি এই উদ্যোগে যুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। কেউ কেউ আগ্রহ দেখালেও বাস্তবতা ও প্রতিকূলতার কারণে উদ্যোগটি আলোর মুখ দেখেনি।

রিয়াজের মতে, "আমাদেরও আন্তর্জাতিক মানের অনেক শিল্পকর্ম আছে। কিন্তু উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও আন্তরিকতা নেই।"

তিনি বলেন, "এখনো পর্যন্ত জাতীয় চিত্রশালায় এমন কোনো স্থায়ী গ্যালারি হয়নি, যেটি দেখে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীরা আমাদের শিল্পচর্চার ইতিহাস এবং আধুনিক শিল্পধারার গুণগত মান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন।"

শিল্পী এসএম সুলতানের প্রথম বৃক্ষরোপণ চিত্রকর্মের সামনে দাঁড়িয়ে সংরক্ষক হাসানুর রহমান রিয়াজ।

নেই সচেতনতা

দেশে শিল্পসংগ্রাহকের সংখ্যা বাড়লেও সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা এখনও অনেক কম। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় পাকা স্থাপনাও শত বছর পরে ক্ষতির মুখে পড়ে—তাহলে ইজেল পেইন্টিংয়ের মতো সংবেদনশীল শিল্পকর্মের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।

সম্প্রতি বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, আমেরিকান দূতাবাসের সহায়তায় একটি চিত্রকর্ম সংরক্ষণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সেখানে একজন আমেরিকান কনজারভেটরের তত্ত্বাবধানে দেশের কয়েকজন শিক্ষানবীশ সংরক্ষক কাজ করছেন। প্রকল্পটি অনেকটা আশার আলো দেখাচ্ছে।

জাতীয় জাদুঘরেও কিছু সংরক্ষক রয়েছেন। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যেসব শিল্পকর্ম বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে, তার তুলনায় এ সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল।

রিয়াজ মনে করেন, "এই বিষয়ে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে বহু মূল্যবান শিল্পকর্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন আমাদের কেবল হতাশা ছাড়া কিছুই থাকবে না।"


ছবি: হাসানুর রহমান রিয়াজ        

Related Topics

টপ নিউজ

শিল্পকর্ম / চিত্রকর্ম / শিল্পী / শিল্পকলা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ২ কোটি ডলারের জাপানি বিনিয়োগ চুক্তিতে লাইফলাইন পাচ্ছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল
  • পুরান ঢাকাকে যুক্ত করতে এই প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থায়নে আসছে বিশ্বব্যাংক
  • ‘দয়া করে আমাকে রিমান্ডে দিয়েন না’: আদালতকে মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া 
  • ঢাকা বিমানবন্দরের ‘নো ফ্লাই জোনে’ অনুমোদনবিহীন ৫২৫ উঁচু ভবন, ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাজউকের: সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান
  • ২ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১,৫০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে ইসলামী ব্যাংক
  • কবরেও একা যেতে হবে, দুর্নীতি করলে জেলখানায়ও একা যেতে হবে: কলিমউল্লাহকে বিচারক

Related News

  • গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও অবহেলিত, শিল্পকর্ম সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় শিল্পকলা একাডেমি
  • আবারও খেয়ে ফেলা হলো ৬ মিলিয়ন ডলারের সেই কলা!
  • ফুলঝুরি সিস্টার্স: সরোদ হাতে দুই বোনের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন
  • জীবদ্দশায় মাত্র একটি ছবি বিক্রি করতে পেরেছিলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গখ!
  • ১২৫ বছরে কারও চোখে পড়েনি ভ্যান গখের চিত্রকর্মে লুকানো এই বৈজ্ঞানিক রহস্য

Most Read

1
অর্থনীতি

২ কোটি ডলারের জাপানি বিনিয়োগ চুক্তিতে লাইফলাইন পাচ্ছে বেক্সিমকো টেক্সটাইল

2
বাংলাদেশ

পুরান ঢাকাকে যুক্ত করতে এই প্রথম মেট্রোরেল প্রকল্পে অর্থায়নে আসছে বিশ্বব্যাংক

3
বাংলাদেশ

‘দয়া করে আমাকে রিমান্ডে দিয়েন না’: আদালতকে মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া 

4
বাংলাদেশ

ঢাকা বিমানবন্দরের ‘নো ফ্লাই জোনে’ অনুমোদনবিহীন ৫২৫ উঁচু ভবন, ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব রাজউকের: সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান

5
অর্থনীতি

২ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১,৫০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে ইসলামী ব্যাংক

6
বাংলাদেশ

কবরেও একা যেতে হবে, দুর্নীতি করলে জেলখানায়ও একা যেতে হবে: কলিমউল্লাহকে বিচারক

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab