ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি: প্রতিক্রিয়া না দেখাতে ইসরায়েলের প্রতি সতর্কবার্তা
যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ইসরায়েলকে সতর্ক করে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব ইয়েভেট কুপার বলেছেন, স্বীকৃতির প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিম তীরের কোনো অংশ জোরপূর্বক দখল করা যাবে না। খবর বিবিসির।
সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার আগে কুপার বিবিসিকে এসব কথা জানিয়েছেন। সম্মেলনে ফ্রান্স ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশও একই ধরনের ঘোষণা দেবে।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালও এই স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং বলেছেন, এটি 'সন্ত্রাসবাদের জন্য বড় পুরস্কার।'
কুপার বলেন, যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তটি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয়ের নিরাপত্তা, শান্তি ও ন্যায় রক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, উভয় পক্ষের চরমপন্থীরা দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করতে চাইছে, যা পুনরুজ্জীবিত করার নৈতিক দায়িত্ব যুক্তরাজ্যের।
কুপার জানাননি কখন পূর্ব জেরুজালেমে যুক্তরাজ্যের কনসুলেট জেনারেল পূর্ণ দূতাবাসে রূপান্তর হবে। তবে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়া পর্যন্ত এটি চলবে।
আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) এক ভিডিও বার্তায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে আমরা শান্তির আশা ও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর অর্থ হলো—নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইসরায়েল এবং একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। কিন্তু বর্তমানে আমাদের কাছে কোনো কিছুই নেই।'
তিনি বলেন, 'ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার মুহূর্ত এসে গেছে। আজ, শান্তির আশা ও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান পুনরুজ্জীবিত করার জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি, যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।'
রোববার হামাস যুক্তরাজ্যের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটিকে 'আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের জমি ও পবিত্র স্থান অর্জনের অধিকার নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ' হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে তারা বলেছে, এটি এমন 'বাস্তব পদক্ষেপের' সঙ্গে যুক্ত হতে হবে যা যুদ্ধের 'তাৎক্ষণিক সমাপ্তি' নিশ্চিত করবে।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ জেনোসাইড স্কলারস (আইএজিএস) প্রায় তিন পাতার একটি প্রস্তাবনায় ২২ মাস ধরে চলা যুদ্ধে ইসরায়েলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রায় দুই বছরের যুদ্ধে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৬৫,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের সমর্থিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও গাজা শহরে দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দিয়েছেন।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গণহত্যা সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি 'হামাসের মিথ্যা' এবং দুর্বল গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা 'আইনি পেশার জন্য লজ্জার' বিষয়।
নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ হচ্ছে না; যেখানে ক্ষুধা দেখা দিয়েছে, তার দায় দিয়েছেন সাহায্য সংস্থা ও হামাসের ওপর।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি 'ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং ভালো প্রতিবেশী হিসেবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের পাশে থাকার পথ প্রশস্ত করবে।'
বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ দেশ ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিকভাবে চুক্তিভিত্তিক কোনো সীমা, রাজধানী বা সেনাবাহিনী নেই, তাই এই স্বীকৃতি মূলত প্রতীকী।
দুই-রাষ্ট্র সমাধান মানে হলো পশ্চিম তীর ও গাজা অঞ্চলে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করা, যেখানে পূর্ব জেরুজালেম হবে রাজধানী। এটি মূলত ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের আগে যেভাবে অঞ্চলগুলো ছিল, তার ভিত্তিতে পরিকল্পিত।
ইসরায়েলের সামরিক দখলের কারণে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি তার জমি বা জনগণের নিয়ন্ত্রণে নেই। গাজায় ইসরায়েলও দখলকারী হিসেবে রয়েছে, এবং ২০০৭ সাল থেকে হামাস একমাত্র শাসক।
যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি সম্প্রসারণকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
