বিশ্বের প্রথম দুই আসনের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-২০এস আনল চীন

চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (পিএলএএএফ) প্রথমবারের মতো তাদের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-২০-এর দুই আসনের একটি সংস্করণকে বিমান বহরে যুক্ত করেছে। 'জে-২০এস' নামে পরিচিত পঞ্চম প্রজন্মের এই নতুন যুদ্ধবিমানটিতে একজন পাইলটের পাশাপাশি একজন 'ওয়েপন সিস্টেমস অফিসার' রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।
দুই আসনের জে-২০এস প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০২১ সালের অক্টোবরে। দীর্ঘদিন ধরে গুঞ্জনের পরে এটির আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্তি চীনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
জে-২০ যুদ্ধবিমানের পাল্লা যুক্তরাষ্ট্রের এফ-২২ ও এফ-৩৫ এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায়, দীর্ঘমেয়াদি মিশনে ভাগাভাগি করে দায়িত্ব পালনের সুবিধা দিতেই দুই আসনের সংস্করণ আনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও জে-২০ যুদ্ধবিমান স্বয়ংক্রিয়তা ও উন্নত ইনফরমেশন ডিসপ্লে সুবিধাসম্পন্ন অত্যন্ত আধুনিক, তবে দীর্ঘ সময়ের অপারেশনে পাইলটের ক্লান্তি রোধে দ্বিতীয় ক্রু সদস্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
হেবেই প্রদেশের কাংঝোউ ফ্লাইট ট্রেনিং বেসে অবস্থানরত পিএলএএএফ-এর ১৭২তম এয়ার ব্রিগেডের অধীনে জে-২০এস প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে। এই ব্রিগেডটি প্রশিক্ষণ ও কমব্যাট রিজার্ভ—উভয় ভূমিকাই পালন করে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিগেডটি প্রথম জে-২০ হাতে পায়। ধারণা করা হচ্ছে, এক আসনের জে-২০ এর তুলনায় জে-২০এস ভিন্ন ধরনের যুদ্ধকৌশল প্রয়োজন, এ বিবেচনাতেই এটি ১৭২তম ব্রিগেডে মোতায়েন করা হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এই বিমানগুলো বর্তমানে উন্নয়নশীল 'ডার্ক সোর্ড' এর মতো মনুষ্যবিহীন 'উইংম্যান' যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া, কিছু পরিবর্তন সাপেক্ষে ইলেকট্রনিক অ্যাটাক এবং আকাশভিত্তিক কমান্ড পোস্ট হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হতে পারে। জে-২০এস শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ বিমানের ভূমিকা নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ ফ্রন্টলাইন যুদ্ধবিমান হিসেবে একক ইউনিটে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
'চায়না'স স্টিলথ ফাইটার: দ্য জে-২০ 'মাইটি ড্রাগন' অ্যান্ড দ্য গ্রোয়িং চ্যালেঞ্জ টু ওয়েস্টার্ন এয়ার ডমিন্যান্স' বইয়ের লেখক আব্রাহাম আব্রামস বলেন, 'জে-২০ ইউনিটের একটি বড় অংশই ভবিষ্যতে দুই আসনের বিমানে রূপ নিতে পারে। যেমন ২০১০-এর শেষ দিকে চীনা ফ্ল্যাঙ্কার যুদ্ধবিমানগুলো এক আসন থেকে দুই আসনে পরিবর্তিত হয়। জে-২০এস-এর উন্মোচনের আগের অফিসিয়াল আর্টওয়ার্কে একসঙ্গে উড়তে দেখা গেছে কেবল দুই আসনের জে-২০, কোনো এক আসনের মডেল নয়—যা ইঙ্গিত দেয় যে, জে-১৬ এর মতো এগুলোর আলাদা ইউনিট তৈরি হতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'দুই আসনের এই প্ল্যাটফর্মকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে স্ট্রাইক ও ইলেকট্রনিক অ্যাটাকের মতো একাধিক নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হতে পারে। যেমন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরবর্তীতে রাশিয়ায় সু-২৭ এর দুই আসনের সংস্করণ থেকে ইন্টারসেপ্টর ও এইডব্লিউঅ্যান্ডসি বিমান তৈরি করা হয়েছিল।'
যদিও জে-২০এস এর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো অনেক কিছু অনিশ্চিত, তবে অনুমান করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে জে-২০ যুদ্ধবিমানের একটি বড় অংশই দুই আসনের সংস্করণ হবে।
বিশ্বের যেকোনো বিমানবাহিনীর তুলনায় পিএলএএএফ সবচেয়ে বড় পরিসরে জে-২০ সংগ্রহ করছে। ফলে জে-২০এস-ও অন্যান্য দুই আসনের যুদ্ধবিমানের তুলনায় অনেক বেশি হারে উৎপাদিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।