নদী দখল ও দূষণকারী কারখানা পেল 'গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড'

গাজীপুরের শ্রীপুরে নদী দখল ও দূষণের দায়ে অভিযুক্ত একটি শিল্প কারখানাকে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করার পর এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন পরিবেশ দূষণের দায়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া অ্যাওয়ার্ড প্রত্যাহার ও এর সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন কার্যক্রম ও টেকসই শিল্প ব্যবস্থাপনার জন্য দেওয়া হয় 'গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড'। পরিবেশ দূষণ না করাসহ বিভিন্ন ভালো কাজের পুরস্কার হিসাবে গাজীপুরের শ্রীপুরের এক্স সিরামিকস লিমিটেড কারখানা এ সম্মাননা লাভ করে।
গত ২৪ জুন রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এক্স সিরামিকস লিমিটেড কারখানাকে 'গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫' তুলে দেয়া হয়। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
সম্মাননা পাওয়া এক্স সিরামিক কারখানাটি গাজীপুরের সদর ও শ্রীপুর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ লবলং নদী দখল ও দূষণের কারণে আলোচিত। নদীটি একসময় 'লবলং সাগর' নামে পরিচিত ছিল। দখল ও দূষণের শিকার হয়ে ব্যাপক পরিচিত লবলং সাগর এখনকার লবলং খাল।
লবলং দখল ও দূষণের কারণে আলোচিত শ্রীপুরের এক্স সিরামিকস লিমিটেড কারখানা এ সম্মাননা পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের শ্রীপুর, গাজীপুর ও ঢাকার নেতারা। পরিবেশবাদীদের প্রশ্ন, দূষণকারী এমন কারখানা কীভাবে এই সম্মাননা পায়।
নদী দখলকারী এক্স সিরামিকস লি. কে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড দেওয়ায় গত ৬ জুলাই ঢাকা থেকে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ১৫টি সংগঠন যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতি দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, গ্রীন ভয়েস, নদীপক্ষ, উন্নয়ন ধারার ট্রাস্ট, এএসডিএস, তিস্তা নদীর রক্ষা কমিটি, বাতাবন সংঘ, সিডিপি, সেইফটি ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন, সিডাব্লিউএফ, ডাব্লিউবিবি, পরিবেশ বার্তা।
বিবৃতিতে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে নদী দখল ও দূষণকারী এক্স সিরামিকস লিমিটেডকে দেওয়া গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ডটি প্রত্যাহারসহ নদীর দখলকৃত জায়গা ফেরত নেওয়া ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইন প্রয়োগ করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। একই সাথে, গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রক্রিয়া সঠিক ও স্বচ্ছ করার দাবি জানায় সংগঠনগুলো।
পরিবেশ কর্মী ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ সীমান্তঘেঁষা ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার ক্ষীরু নদীর সংযোগস্থল থেকে লবলং নদীর উৎপত্তি। এরপর আঁকাবাঁকা দীর্ঘ ২৯ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে গাজীপুরের মির্জাপুরের কাছে তুরাগ নদে সেটি মিশেছে।
জনশ্রুতি আছে, একসময় এ লবলং সাগর দিয়ে চলত পালতোলা নৌকা, শোনা যেত মাঝির আকুল করা গান। শ্রীপুর ও গাজীপুর সদরের প্রাণের স্পন্দন 'লবলং'। লেখক আবু জাফর সামসুদ্দিন ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান বইয়ে এর বিশালত্ব তুলে ধরেছেন। লেখকের লেখায় লবলং নদীর ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়।
কালের বিবর্তনে খরস্রোতা সেই 'লবলং' নদী এখন পরিণত হয়েছে খালে। এই নদীটির সীমানা নির্ধারিত না থাকা ও শত বছরেও খননের উদ্যোগ না নেওয়ায় দখল ও দূষণের শিকার হয়ে স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় পরিবেশ ও জনজীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দেশের সবচেয়ে দূষিত নদী হলো লবলং নদী। দূষণে নদের পানি কুচকুচে কালো হয়েছে। বহু বছর ধরে দেখা মেলে না স্বচ্ছ পানির। ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত পানি কৃষিকাজে ব্যবহারও করা যাচ্ছে না। এতে এখন মাছ তো দূরের কথা, কোনো জলজ প্রাণীও বেঁচে নেই।
লবলং নদীকে খালে রূপান্তরের জন্য মূলত এর আশপাশের শিল্প কারখানার দখল-দূষণের আগ্রাসন দায়ী। তাদের আগ্রাসনে লবলং এখন চরম অস্তিত্বসংকটে, দখল-দূষণ আর অনিয়ন্ত্রিত অত্যাচার-অবহেলায় হারিয়ে ফেলেছে তার গতিধারা।
লবলং দখল করে, পাড় ভরাট করে নদীর ওপর কিংবা এর গতিপথ পরিবর্তন করে গড়ে উঠেছে বেশকিছু কল-কারখানা। অন্যদিকে, উপজেলার প্রায় সব খালই লবলংয়ের সঙ্গে যুক্ত। ফলে পরিস্থিতি হয়েছে আরো ভয়াবহ, লবলংসহ আশপাশের সব খালই পৌঁছেছে দখল-দূষণের চরম মাত্রায়।
গাজীপুর জেলা নদী রক্ষা কমিটি কর্তৃক প্রণীত তালিকা অনুযায়ী, দখল-দূষণের আগ্রাসনের সাথে যুক্ত কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে: স্যালভো কেমিক্যাল লিমিটেড, ক্রাউন উলেন ওয়ার, ক্রাউন গ্রুপ, মেঘনা নিট কম্পোজিট, আমান কটন, হ্যামস ওয়াশিং প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ডার্ড কম্পোজিট, ডিগনিটি টেক্সটাইল লি:, ইশরাক স্পিনিং মিল ও এক্স সিরামিক্স। এক্স সিরামিকস নামের কারখানার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বিভিন্ন এলাকায় লবলং নদীর পুরো অংশই গিলে ফেলেছে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও, দূষিত পানি নিষ্কাশনের লাইন খালের তলদেশ দিয়ে যুক্ত করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
নদীপারের লোকজন জানান, দূষণের শিকার নদীর পানির দুর্গন্ধ ছড়ায় কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত। নদীর পানি দিয়ে কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া যায় না। এই পানি কৃষিজমিতে দিলে ফসল নষ্ট হয়। গবাদিপশু গোসল করালে চর্মরোগ দেখা দেয়। গরু-মহিষের শরীরে ফোসকা পড়ে।
লবলংপারের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, 'লবলং তো এখন গল্প। এখন তো নালা হয়ে গেছে। বাপ-দাদারা বলতেন, লবলং-এ জাহাজ চলাচল করত। আমরা তো এখন নৌকাও চলতে দেখি না। এর পানি যেন বিষের নহর। কালো কুচকুচে।'
সরেজমিনে জানা যায়, ২০০৯ সালে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বারতোপা ও বেড়াইদের চালা গ্রামে 'লবলং' নদীর দুইপাশে ৭৫ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হয় এক্স সিরামিকস কারখানা। তারপর থেকে শুরু হয় এক্স সিরামিকসের আগ্রাসন। এখানে লবলং খালটিকে দুই দিক থেকেই চেপে ধরেছে এক্স সিরামিকস কারখানাটি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লবলং গিলে খেতে শুরু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। 'লবলং' কে ভরাট করে নালায় পরিণত করা হয়। একস্থানে বালুর বস্তা দিয়ে আবার কালভার্ট বানিয়ে খালের দুই পার যুক্ত করা হয়েছে। আবার খালের গতিপথও পরিবর্তন করা হয়েছে। কঠিন বর্জ্য, তরল বর্জ্য–সবই ফেলা হচ্ছে এই লবলং-এর বুকে। এভাবেই নদীটি দূষণ ও দখল করেছে তারা।
এছাড়াও, ফসলি জমি ভরাট করার অভিযোগও রয়েছে কারখানাটির বিরুদ্ধে। দিনে দিনে এলাকার ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এলাকার অসহায় মানুষ একে নিয়তি বলেই মেনে নিয়েছে। এক্স সিরামিকস কারখানা কর্তৃপক্ষের এমন ভূমিকায় শঙ্কিত পরিবেশ সংগঠনের কর্মীরা।
উচ্চ আদালতেরে নির্দেশে তদন্ত করে এক্স সিরামিকস কারখানার বিরুদ্ধে লবলং দখল ও দূষণের প্রমাণও পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আদালত এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়। এরপরও কারখানাটি শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে জিতেছে 'গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫'।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, 'নদীখেকো একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ রক্ষার পুরস্কার স্বরুপ গ্রিন এ্যাওয়ার্ড দিয়ে পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সাথে তামাশা করা হয়েছে। এতে করে পরিবেশবাদীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। অবিলম্বে এ পুরস্কার প্রত্যাহার এবং পুরস্কার প্রদান কমিটির সাথে যুক্ত সকলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।'
রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, 'আসলে দোষ কাকে দেবেন? আশ্চর্য ও হতবাক হয়েছি। যে কারখানা আমাদের প্রাণের নদী লবনদহ (লবলং) কে গিলে ফেলেছে, তাকে দেওয়া হয়েছে সবুজ সম্মাননা!'
তিনি বলেন, 'সরকারের পরিবেশবান্ধব শিল্প উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ এই সিরামিক কারখানা ২০২৫ সালের গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিবেশ সচেতন প্রযুক্তি, টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়া ও সবুজ শিল্প ব্যবস্থাপনার জন্য এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। আমরা শ্রম মন্ত্রণালয়ের এই অ্যাওয়ার্ড কমিটির বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এ সম্মাননা প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।''
বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, 'আমাদের শ্রীপুরের প্রাণ লবলং নদী ধ্বংসকারী এক্স সিরামিকস গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে! আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।'

তিনি আরও বলেন, 'যে ফ্যাক্টরির জন্য হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমি চাষের অনুপযোগী করেছে, যাদের জন্য আমাদের পরিবেশ জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে, যাদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা আছে, সেই ফ্যাক্টরি কীভাবে পেল গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড!'
পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা মুহাম্মদ মনির হোসেন জানান, 'বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) নদ দখল ও দূষণ থেকে রক্ষায় হাইকোর্ট একটি রিট দায়ের করলে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই লবলং নদী দখল ও দূষণ থেকে রক্ষায় রুল জারি করে হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মোহাম্মদ মাহবুবুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।'
রিটের বিবাদীরা ছিলেন লবলং দখল ও দূষণকারী উল্লিখিত শিল্প-কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ; সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, পানি সম্পদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবগণ; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান; পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকগণ; গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার; গাজীপুরের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক; শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা; শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান; শ্রীপুর সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার এবং শ্রীপুর পৌর মেয়র।
আদেশে লবলং দখল ও দূষণ থেকে রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন সংবিধান বিরোধী, বেআইনি, আইনবহির্ভূত ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া; এ নদীকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ধারা-৫ অনুযায়ী প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা ও সেই মোতাবেক ব্যবস্থাপনার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
একই সঙ্গে সিএস জরিপ বা মূল প্রবাহ অনুযায়ী নদীটির সীমানা নির্ধারণপূর্বক সীমানা পিলার স্থাপনের, নদী সীমানায় বিদ্যমান দখলদারদের উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নদকে রক্ষার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয় আদেশে।
রুল জারির পাশাপাশি আদালত আইন অনুযায়ী তদন্তপূর্বক লবলং নদীতে বিদ্যমান দখলদার এবং এ নদীকে দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ প্রদান করেন। একই সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরকে লবলং নদী সংলগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি কার্যকর আছে কি-না তা পরিবেশ আইনের ধারা ৪(১), ৪ (২) (ঙ) অনুযায়ী সার্বক্ষণিক তদারক ও পর্যবেক্ষণের এবং নদীটির পানির গুণগত মান নিয়মিত পরীক্ষা করার নির্দেশ প্রদান করেন আদালত।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর পরিবেশ উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বেলার তৎকালীন প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর শ্রীপুরের লবলং নদী রক্ষায় নদীটির সীমানা নির্ধারণ, সকল অবৈধ দখল উচ্ছেদ, খনন ও তীর রক্ষায় আদালতের নির্দেশনা মেনে নদী রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাজমুল আহসান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী রাফিউস সাজ্জাদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা একাধিকার নদীটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। তারা আশা করছেন, খুব শীঘ্রই প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপ-পরিচালক মো: আরেফিন বাদল বলেন, 'গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এটি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পরপরই পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধিদল এক্স সিরামিকস কারখানা পরিদর্শন করে। সেখানে নদী দখল-দূষণের বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত রিপোর্ট পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।'
তিনি আরো জানান, এক্স সিরামিকস কারখানার ছাড়পত্রের আবেদন রয়েছে। সেটি স্থগিত রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন বলেন, 'শ্রীপুরের এক্স সিরামিক কারখানা লবনদহ নদী দখল ও দূষণ করেছে-এটি সবাই জানি। কিন্তু ঐ কারখানাকে গ্রিন ফ্যাক্টরি আ্যাওয়ার্ড দেওয়ার কোন তথ্য আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে কোন তথ্য চাওয়া হয়নি।'
কল কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর, গাজীপুরের উপ-মহা পরিদর্শক মেহের আলী বলেন, 'পুরস্কারের আবেদন পাওয়ার পর একটি কমিটি চেক লিস্ট অনুযায়ী দেওয়া তথ্যগুলো সঠিক কি-না যাচাই করেছে। সে আলোকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। পরে এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে ঐ কারখানার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আসার পর তা নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। পরিবেশবাদীরা খুব শীঘ্রই নতুন ফল পাবেন।'
এ বিষয়ে এক্স সিরামিকস কারখানার মূল প্রতিষ্ঠান এক্স ইনডেক্স কোম্পানির হেড অব পিপলস ম্যানেজমেন্ট আনোয়ারুজ্জামান বলেন, 'আমরা কোন নদী দখল বা দূষণ করিনি। শ্রীপুরের এসি ল্যান্ড সার্ভে করেছে, ডিজিটাল সার্ভে হয়েছে, সেখানেও এটা উল্লেখ করা হয়েছে।'