Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
July 06, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, JULY 06, 2025
পাকিস্তানের পারমাণবিক যাত্রার নায়ক একিউ খান: কীভাবে থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক

মিডল ইস্ট আই
27 June, 2025, 10:45 pm
Last modified: 27 June, 2025, 10:49 pm

Related News

  • পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শন কিংবা সমৃদ্ধকরণ বন্ধে ইরান রাজি হয়নি: ট্রাম্প
  • ইরানের পরমাণু কর্মসূচি অন্তত ১ থেকে ২ বছর পিছিয়ে গেছে: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর
  • হরমুজ প্রণালীতে মাইন বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল ইরান: মার্কিন সূত্রের দাবি
  • সার্কের বিকল্প জোট গড়ার দিকে নজর পাকিস্তান ও চীনের 
  • ইরানের ‘মিসিং ইউরেনিয়াম’ নিয়ে চলছে ‘ইঁদুর বিড়াল’ লুকোচুরি!

পাকিস্তানের পারমাণবিক যাত্রার নায়ক একিউ খান: কীভাবে থামাতে ব্যর্থ হয়েছিল ইসরায়েল

প্রকল্পটি প্রথমদিকে ছিল অত্যন্ত গোপনীয়। ভুয়া কোম্পানির নামে আমদানি করা হতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, দেখানো হতো এসব একটি নতুন টেক্সটাইল কারখানার জন্য আনা হয়েছে
মিডল ইস্ট আই
27 June, 2025, 10:45 pm
Last modified: 27 June, 2025, 10:49 pm
পাকিস্তানি পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদের খান (মাঝখানে) ৯ জানুয়ারি ২০১০ সালে রাওয়ালপিন্ডি হাইকোর্টে এক অনুষ্ঠানে প্রার্থনা করছেন, ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে তিনি এক কিংবদন্তি। আবার পশ্চিমা বিশ্বের চোখে তিনি এক ভিন্ন প্রতিমূর্তি। 

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ)-র সাবেক পরিচালক জর্জ টেনেট একবার বলেছিলেন, 'ওসামা বিন লাদেনের মতোই বিপজ্জনক' তিনি। অন্যদিকে, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান শাবতাই শাভিত আফসোস করে বলেন, 'তাকে মেরে ফেলতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।'

তিনি হচ্ছেন আব্দুল কাদের খান, যিনি 'একিউ খান' নামে সর্বাধিক পরিচিত, পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির জনক ও দেশটির 'জাতীয় বীর'।

১৯৩৬ সালে জন্ম নেওয়া এই পরমাণু বিজ্ঞানী ২০২১ সালে ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। পাকিস্তানকে পরমাণু শক্তিধর বানানোর পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান তারই।

শুধু নিজ দেশেই নয়, গোপনে গড়ে তোলা এক বিস্তৃত আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকেও সহায়তা করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে উত্তর কোরিয়া শেষপর্যন্ত সামরিক পরমাণু ক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

নিজেও পরমাণু শক্তিধর দেশ হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার না করলেও ইসরায়েল বহু বছর ধরেই পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা রোধের চেষ্টা চালিয়েছিল। 

এমনকি ১৯৮০-এর দশকে ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করে ইসরায়েল । তবে শেষ মুহূর্তে ভারত সরকার সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।

একিউ খান বিশ্বাস করতেন—পারমাণবিক বোমা বানিয়ে তিনি নিজের দেশকে বিদেশি হুমকি থেকে রক্ষা করেছেন, বিশেষ করে প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারতের বিরুদ্ধে।

আজও পাকিস্তানের বহু মানুষ সে বিশ্বাসে একমত।

'ইসলামি বোমা কেন নয়?'

১৯৭৪ সালের ১৮ মে।  ভারতের রাজস্থানে 'স্মাইলিং বুদ্ধ' কোডনামে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ভারত। প্রতিবেশী দেশের এই ঘটনা দেখে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো ঘোষণা দেন, পাকিস্তানও পারমাণবিক বোমা তৈরি করবে।

তিনি বলেছিলেন, 'আমরা ঘাস খাব, পাতাও খাব, দরকার হলে না খেয়েও থাকব—তবু নিজেদের একটা পরমাণু বোমা তৈরি করব।'

তার যুক্তি ছিল, 'বিশ্বে খ্রিস্টান বোমা, ইহুদি বোমা, হিন্দু বোমাও থাকতে পারলে, ইসলামি বোমা কেন থাকবে না?' 

ব্রিটিশ শাসনের সময় উপমহাদেশে জন্ম নেওয়া আব্দুল কাদের খান ১৯৬০ সালে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর জার্মানির বার্লিনে পড়াশোনা শেষে যান নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামে।

১৯৭৪ সালে তিনি আমস্টারডামে ইউরেনকো নামের একটি বড় পরমাণু জ্বালানী কোম্পানির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। ইউরোপের পারমাণবিক চুল্লির জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরবরাহ করত ইউরেনকো।

সেখানে কাজ করার সুবাদে কাদের খানের হাতে আসে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তির নকশা ও গবেষণাগারের গোপন তথ্য—যা প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামকে বোমা তৈরির জ্বালানিতে রূপান্তর করতে ব্যবহৃত হয়।

তারপর ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে হুট করেই তিনি নেদারল্যান্ডস ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে আসেন। বলেন, 'এমন এক প্রস্তাব পেয়েছেন, যা ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।'

পরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সেন্ট্রিফিউজের নকশা চুরি করে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়েছিলেন। 

সেই বছরের জুলাইয়ে তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গোপন গবেষণাগার স্থাপন করেন, যেখানে পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু হয়।

প্রকল্পটি প্রথমদিকে ছিল অত্যন্ত গোপনীয়। ভুয়া কোম্পানির নামে আমদানি করা হতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, দেখানো হতো এসব একটি নতুন টেক্সটাইল কারখানার জন্য আনা হয়েছে।

যদিও এই প্রকল্পে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সরাসরি সহযোগিতা করেছিল, বেসামরিক সরকারের অধিকাংশের কাছে বিষয়টি প্রায় অজানাই ছিল। এই গোপনীয়তার একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো, যিনি নিজেই এ উদ্যোগের সূচনা করেছিলেন।

ফ্রান্সের জর্জেস ফাইভ হোটেলে এক অনুষ্ঠানে জুলফিকার আলি ভুট্টো (ডানে) ও তার স্ত্রী বেগম নুসরাত ইসফাহানি ভুট্টো (বামে) ৬ জুলাই ১৯৭৩, ছবি: এএফপি

তবে জুলফিকার আলি ভুট্টোর কন্যা বেনজির ভুট্টো যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন ইরানের সঙ্গে পরমাণু প্রযুক্তি ভাগাভাগির বিষয়ে তাকে কিছুই জানায়নি সেনাপ্রধানরা ।

১৯৮৯ সালে তেহরানে এক আনুষ্ঠানিক সফরের সময় হঠাৎ করেই এই তথ্যের মুখোমুখি হন তিনি। ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানি তাকে জিজ্ঞেস করেন, 'বিশেষ প্রতিরক্ষা বিষয়ক' একটি চুক্তি নবায়ন করা হবে কি না।

চমকে উঠেছিলেন বেনজির। 'আপনি ঠিক কী বিষয়ে কথা বলছেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব?'—প্রশ্ন করেন তিনি।

রাফসানজানি উত্তর দেন, 'পরমাণু প্রযুক্তি, প্রধানমন্ত্রী, পরমাণু প্রযুক্তি।' হতবাক হয়ে যান বেনজির ভুট্টো।

হত্যাচেষ্টা ও হুমকি

১৯৭৯ সালের জুনে পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির গোপন কার্যক্রম ফাঁস করে দেয় 'এইট ডেইজ' নামের একটি ম্যাগাজিন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলে এ ঘটনাটি। ইসরায়েল তখন ডাচ সরকারের কাছে অভিযোগ জানায়, যার পর নেদারল্যান্ডস তদন্ত শুরু করে।

১৯৮৩ সালে নেদারল্যান্ডসের একটি আদালত আব্দুল কাদের খানকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। যদিও পরবর্তীতে প্রযুক্তিগত কারণে সেই সাজা বাতিল হয়ে যায়, তবুও তার পারমাণবিক কাজ থেমে থাকেনি।

১৯৮৬ সালের মধ্যেই তিনি নিশ্চিত ছিলেন—পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। তখন তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, পাকিস্তান চাইলে এখনই পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারে।

একিউ খানের প্রেরণার একটি বড় অংশ ছিল তার আদর্শবাদী চিন্তাধারা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, 'আমেরিকান আর ব্রিটিশদের এই নৈতিক অভিভাবকত্ব আমি প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই। এই 'বাস্টার্ড'-রা কি ঈশ্বরপ্রদত্ত অভিভাবক, যে সারা বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করবে?'

পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি থামাতে একাধিক হত্যাচেষ্টা চালানো হয়, যার পেছনে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সক্রিয় ভূমিকা থাকার ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এমনকি ইউরোপের যেসব কোম্পানি একিউ খানের সঙ্গে ব্যবসায়িকভাবে জড়িত ছিল, সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। 

পশ্চিম জার্মানির এক নির্বাহীর বাসায় পাঠানো হয় চিঠি-বোমা। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তার পোষা কুকুর মারা যায়।

আরেকটি বোমা হামলা চালানো হয় সুইজারল্যান্ডের 'কোরা ইঞ্জিনিয়ারিং' কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর, যিনি পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পে সহযোগী ছিলেন।

ইতিহাসবিদ অ্যাড্রিয়ান লেভি, ক্যাথরিন স্কট-ক্লার্ক ও অ্যাড্রিয়ান হ্যানি—তাদের গবেষণায় দাবি করেন, ইসরায়েল মোসাদের মাধ্যমে হুমকি ও গুপ্তহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়।

সুইস কোম্পানির মালিক সিগফ্রিড শার্টলার জানান, তাকে ও তার সেলসম্যানদের বারবার ফোন করত মোসাদের সদস্যরা। তার দাবি, 'ডেভিড' নামের এক ব্যক্তি—যিনি জার্মানিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের কর্মকর্তা হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন—তাকে সরাসরি বলেন—'এই ব্যবসা' বন্ধ করতে হবে।

পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির সাবেক কর্মকর্তা ফেরোজ খানের ভাষ্যে, 'ইসরায়েল কোনো মুসলিম দেশকে পরমাণু বোমার অধিকারী হতে দিতে চায়নি।'

১৯৮০-এর দশকে পাকিস্তানের কাহুটা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল ইসরায়েল। প্রস্তাব ছিল, ভারত ও ইসরায়েল যৌথভাবে ওই স্থাপনা ধ্বংস করবে।

ইসরায়েলি এফ-১৫ ও এফ-১৬ যুদ্ধবিমান গুজরাটের জামনগর ঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে কাহুটা আক্রমণ করবে—এমন পরিকল্পনাও করা হয়। শুরুতে তাতে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলে পরিকল্পনা বাতিল করেন তিনি।

১৯৮৭ সালে সেনাপ্রধান জেনারেল সুন্দরজি পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। পাঁচ লাখ সেনা, শতাধিক ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান সীমান্তে মোতায়েন করা হয় 'মহড়া'র নামে।

তবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি শুরুতে পুরো পরিকল্পনা জানতেন না। পরে তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনের কূটনৈতিক উদ্যোগ নেন এবং এতে যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়।

ইসলামাবাদে নিজের বাসভবনে এক বৈঠকের পর ইমরান খান (বাঁয়ে) একিউ খানকে নিয়ে হাঁটছেন,৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, ছবি: এএফপি

এদিকে, ভারত ও ইসরায়েলের বিরোধিতার পরও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন গোপনে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়। চীন পাকিস্তানকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম, ট্রিটিয়াম এবং বিজ্ঞানী সরবরাহ করে।

অন্যদিকে, আমেরিকার সহায়তা ছিল স্নায়ু যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের কৌশলগত গুরুত্বের কারণে।

১৯৭৯ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি ফাঁস হওয়ায় তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধ করে দেন। তবে কয়েক মাসের মধ্যে আফগানিস্তানে সোভিয়েত হামলার কারণে তিনি সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। ১৯৮০-এর দশকে আমেরিকা গোপনে পাকিস্তানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণও দেয়। 

তবে স্নায়ু যুদ্ধ শেষ হতে না হতেই সবকিছু বদলে যায়।

১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে পারমাণবিক কর্মসূচির প্রতিবাদে আমেরিকা পাকিস্তানে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান তখন ঘোষণা করে পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাজ বন্ধ করবে।

তবে পরবর্তীতে একিউ খান স্বীকার করেন, গোপনে উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক শক্তি পাকিস্তান

১৯৯৮ সালের ১১ মে ভারত পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পর, পাকিস্তান ওই মাসেই বেলুচিস্তানের চাগাই মরুভূমিতে সফল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়।

এ পরীক্ষার মাধ্যমে পাকিস্তান বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। যদিও ভারত ও পাকিস্তান—দু'দেশকেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে যুক্তরাষ্ট্র ।

দেশে তখন জাতীয় বীরের মর্যাদা পান একিউ খান। প্রধানমন্ত্রীর সমান নিরাপত্তা, সেনা কমান্ডোর পাহারা, তার নামে রাস্তাঘাট, স্কুল, এমনকি ক্রিকেট দলও গড়ে ওঠে।

টেলিভিশনে এসে নিজেই বলেছিলেন, 'অ্যাটম বোমা কে বানিয়েছে? আমি বানিয়েছি। ক্ষেপণাস্ত্র কে বানিয়েছে? আমি বানিয়েছি তোমাদের জন্য।'

তবে একইসঙ্গে একিউ খান চালাচ্ছিলেন আরেকটি সাহসী ও বিতর্কিত অভিযান। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি গড়ে তোলেন একটি গোপন আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নেটওয়ার্ক।

এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পারমাণবিক প্রযুক্তি ও নকশা পাঠানো হয় ইরান, উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়ায়।

পাকিস্তানের চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ যন্ত্রাংশ আমদানি করতেন খান। অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ গোপনে বিক্রি করে দিতেন বিদেশি ক্রেতাদের কাছে।

১৯৮০-এর দশকে ইরানের সরকার—যদিও সে সময় আয়াতুল্লাহ খোমেনি পারমাণবিক বোমার বিরুদ্ধে ছিলেন—সেনাশাসক জিয়াউল হকের কাছে সহায়তা চায়।

১৯৮৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে, যদিও বেশিরভাগই ছিল পুরোনো ধরনের। উন্নত প্রযুক্তি নিজের দেশেই রাখেন খান।

এ সময় মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক সফরের সময় মোসাদ একিউ খানের গতিবিধি নজরে রাখলেও, কী করছিলেন তিনি—তা বুঝতে ব্যর্থ হয়।

পরে মোসাদের সাবেক প্রধান শাবতাই শাভিত বলেন, একিউ খানের আসল পরিকল্পনা যদি আগে বুঝতেন, তবে 'ইতিহাসের গতিপথ বদলাতে' তাকে হত্যার কথাও বিবেচনা করতেন।

গাদ্দাফির ফাঁসেই ধরা পড়ে খানের পারমাণবিক নেটওয়ার্ক

২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে গিয়ে নিজেই একিউ খানের গোপন পারমাণবিক প্রযুক্তি পাচার চক্র ফাঁস করে দেন লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি।

তিনি সিআইএ ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬–কে জানান, খান তার সরকারের জন্য পরমাণু স্থাপনা গড়ে তুলছেন—তার মধ্যে কিছু স্থাপনা ছিল 'মুরগির খামার' ছদ্মবেশে।

পরবর্তীতে সুয়েজ খালে লিবিয়াগামী একটি চালানে সিআইএ পারমাণবিক যন্ত্রাংশ জব্দ করে। ইসলামাবাদের এক ড্রাইক্লিনারের ব্যাগেও অস্ত্রের নকশা পাওয়া যায়।

ঘটনা সামনে আসতেই মার্কিন প্রশাসন চমকে ওঠে। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, 'এমন রূপান্তর ইতিহাসে দেখা যায়নি। প্রথমে তিনি অস্ত্র তৈরি করলেন, পরে পুরো সেট—যন্ত্রপাতি থেকে বোমার নকশা—বিক্রি করতে থাকলেন বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শাসকদের কাছে।'

২০০৪ সালে টেলিভিশনে এসে একিউ খান স্বীকার করেন, তিনি ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক প্রযুক্তি সরবরাহ করেছেন। তবে তার দাবি, তিনি পুরোপুরি এককভাবে এই কাজ করেছেন—সরকারের কেউ জড়িত ছিল না।

এরপরই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ তাকে ক্ষমা করে দেন এবং ঘোষণা দেন, 'তিনি আমার বীর।'

তবে যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই খানকে ইসলামাবাদে গৃহবন্দি করে রাখা হয় ২০০৯ সাল পর্যন্ত।

পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে খান বলেন, 'আমি প্রথম পাকিস্তানকে বাঁচাই পরমাণু শক্তি এনে, দ্বিতীয়বার বাঁচাই সব দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে।'

‘ইসলামাবাদে ফয়সাল মসজিদের বাইরে সৈন্যরা একিউ খানের পতাকা মোড়ানো কফিন বহন করছেন,১০ অক্টোবর ২০২১, ছবি: এএফপি

২০০৬ সালে প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন একিউ খান।

জীবনের শেষভাগে ইসলামাবাদে একটি কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। অবসর কাটাতেন বানরদের খাবার খাইয়ে ও সমাজসেবায়।

অনেকেই বলতেন, একিউ খান সবসময় বিশ্বাস করতেন—তিনি যা করেছেন, তা দেশের জন্য এবং তা-ই ছিল সঠিক। তার লক্ষ্য ছিল পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে মুসলিম ও অনুন্নত দেশগুলোর কাছে পারমাণবিক প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়া।

এক ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেন, 'তিনি বিশ্বাস করতেন, কোনো মুসলিম দেশকে প্রযুক্তি দেওয়া অপরাধ নয়।'

২০২১ সালে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, 'তিনি জাতির গর্ব, একটি জাতীয় প্রতীক।'

মৃত্যুর কিছু আগে, ২০১৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে একিউ খান বলেছিলেন, 'পাকিস্তান একটি নিরাপদ পারমাণবিক শক্তি। কেউ এই দেশকে চোখ রাঙাতে পারবে না।'

আজও পাকিস্তানে অনেকেই তাকে সেই চোখেই দেখেন।

 

Related Topics

টপ নিউজ

ইসরায়েল / পাকিস্তান / পারমাণবিক কর্মসূচি / আবদুল কাদের খান / একিউ খান

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • রীনা আর আমার বিয়ে বরবাদ করে দিয়েছিলেন পাকিস্তানি ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদ: আমির খান
  • চট্টগ্রাম কাস্টমসের অধীনে বিলাসবহুল গাড়ি যেভাবে বিকল স্ক্র্যাপে পরিণত হচ্ছে
  • ২০ বছর ধরে কালু মিয়ার কালাভুনায় মজে আছে সিনেপাড়া
  • সনদ বাধ্যতামূলক হওয়ায় সৌদিতে ক্লিনার-লোডার পেশায়ও চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে
  • ভারতের সাথে সংঘর্ষে চীন ‘লাইভ ইনপুট’ দিয়ে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে: ভারতের উপ-সেনাপ্রধান
  • ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে রাশিয়াকে হারতে দেয়া যাবে না: ইইউকে চীনের বার্তা

Related News

  • পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শন কিংবা সমৃদ্ধকরণ বন্ধে ইরান রাজি হয়নি: ট্রাম্প
  • ইরানের পরমাণু কর্মসূচি অন্তত ১ থেকে ২ বছর পিছিয়ে গেছে: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর
  • হরমুজ প্রণালীতে মাইন বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল ইরান: মার্কিন সূত্রের দাবি
  • সার্কের বিকল্প জোট গড়ার দিকে নজর পাকিস্তান ও চীনের 
  • ইরানের ‘মিসিং ইউরেনিয়াম’ নিয়ে চলছে ‘ইঁদুর বিড়াল’ লুকোচুরি!

Most Read

1
বিনোদন

রীনা আর আমার বিয়ে বরবাদ করে দিয়েছিলেন পাকিস্তানি ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদ: আমির খান

2
বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম কাস্টমসের অধীনে বিলাসবহুল গাড়ি যেভাবে বিকল স্ক্র্যাপে পরিণত হচ্ছে

3
ফিচার

২০ বছর ধরে কালু মিয়ার কালাভুনায় মজে আছে সিনেপাড়া

4
বাংলাদেশ

সনদ বাধ্যতামূলক হওয়ায় সৌদিতে ক্লিনার-লোডার পেশায়ও চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে

5
আন্তর্জাতিক

ভারতের সাথে সংঘর্ষে চীন ‘লাইভ ইনপুট’ দিয়ে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে: ভারতের উপ-সেনাপ্রধান

6
আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে রাশিয়াকে হারতে দেয়া যাবে না: ইইউকে চীনের বার্তা

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net