ভারতের সাথে সংঘর্ষে চীন ‘লাইভ ইনপুট’ দিয়ে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে: ভারতের উপ-সেনাপ্রধান

পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে চীন 'লাইভ ইনপুট' বা তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত—তাদের মতে যা পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে সরাসরি সহায়তা করার শামিল। ভারতের সেনাবাহিনীর উপ-সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল সিং শুক্রবার নয়াদিল্লিতে একটি প্রতিরক্ষা শিল্প সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে তিনি ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় দ্রুত উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।
গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান চারদিনব্যাপী এক তীব্র সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয় এপ্রিল মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার পর, যার জন্য নয়াদিল্লি ইসলামাবাদকে দায়ী করে। তবে পাকিস্তান সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল সিং জানান, সংঘাতের সময় ভারত দুইটি শত্রুর মোকাবিলা করেছে—পাকিস্তান ছিল সামনের সারিতে, আর পেছন থেকে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে চীন। তার ভাষ্যে, 'ডিজিএমও (ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন্স) পর্যায়ের আলোচনার সময় পাকিস্তান বলেছিল, তারা জানে ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেক্টর (অর্থাৎ আক্রমণ বা প্রতিরক্ষার জন্য প্রস্তুত রাখা বাহিনী বা অবস্থান) প্রস্তুত রয়েছে। এই তথ্য তারা চীন থেকে সরাসরি লাইভ ইনপুট হিসেবে পাচ্ছিল।'
তিনি কীভাবে এ তথ্য ভারত জানে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণসংযোগ বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
২০২০ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর ভারত-চীন সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটে। চার বছর ধরে চলা সামরিক উত্তেজনার পর গত অক্টোবরে উভয় দেশ পেছনে সরে যাওয়ার চুক্তিতে পৌঁছায়, যা কিছুটা হলেও উত্তেজনা কমিয়েছে। তবে ওই সংঘাতকালীন সময়ে চীন সরাসরি কোনো সহায়তা দেয়নি বলে এর আগে ভারত জানিয়েছিল।
তবে স্যাটেলাইট চিত্র বা রিয়েল-টাইম গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা প্রধান বলেছিলেন, এমন তথ্য বাণিজ্যিকভাবেও পাওয়া যায় এবং তা চীনসহ বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব।
অন্যদিকে, পাকিস্তানি কর্মকর্তারা চীনের সক্রিয় সহায়তার অভিযোগ নাকচ করলেও চীন যুদ্ধকালীন সময়ে রাডার বা স্যাটেলাইট সহায়তা দিয়েছে কি না, সে বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।
বেইজিং ২০১৩ সাল থেকে পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্যাপক বিনিয়োগ ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুদ্ধবিরতির পর পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের 'জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষায়' চীনের পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন।
সিং আরও জানান, সংঘাত চলাকালীন সময়ে তুরস্কও পাকিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিয়েছে—বিশেষ করে বায়রাকতার ড্রোন এবং অন্যান্য যুদ্ধ ড্রোন সরবরাহ ও প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে।
তুরস্ক ও পাকিস্তানের সম্পর্কও বেশ ঘনিষ্ঠ, এবং সংঘাতের সময় দেশটি প্রকাশ্যে ইসলামাবাদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছিল, যার ফলে ভারতজুড়ে তুর্কি পণ্য ও ভ্রমণ বর্জনের ডাক ওঠে।
তবে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি বলে জানায় রয়টার্স।