পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শন কিংবা সমৃদ্ধকরণ বন্ধে ইরান রাজি হয়নি: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচির ওপর আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি বা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমও বন্ধ করতে রাজি হয়নি।
শুক্রবার 'এয়ার ফোর্স ওয়ান'-এ সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি 'স্থায়ীভাবে পিছিয়ে' দেওয়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন, ইরান অন্য কোনো স্থানে এটা আবার শুরু করতে পারে।
ট্রাম্প জানান, সোমবার তিনি হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এ বৈঠকের আলোচ্যসূচির গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা।
স্বাধীনতা দিবস উদযাপন শেষে নিউ জার্সিতে যাওয়ার পথে ট্রাম্প বলেন, 'আমার ধারণা তাদের (ইরান) সম্ভবত অন্য কোনো জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। আর যদি শুরু করে, সেটা একটা সমস্যা হবে।'
ট্রাম্প জানান, তিনি তেহরানকে পুনরায় পরমাণু কর্মসূচি শুরু করতে দেবেন না। ইরানের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলার জেরে গভীর সংকট সৃষ্টি হওয়ায় সংস্থাটি তাদের পরিদর্শকদের ইরান থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দাবি করছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্দেশে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছিল। তবে তেহরান শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা বলছে, তাদের এ কর্মসূচি শুধু বেসামরিক উদেশে পরিচালিত।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি—কেউই এখন পর্যন্ত প্রমাণ পাননি যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে।
তিন সপ্তাহ আগে ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে প্রথমবারের মতো তেহরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে সামরিক হামলা চালায় ইসরায়েল। পরে ২২ জুন ওই সব স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ইসরায়েলের পাশে অবস্থান নেয়।
সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই আইএইএর পরিদর্শকরা ইরানের স্থাপনাগুলোতে প্রবেশ করতে পারেননি। যদিও সংস্থার মহাপরিচালক গ্রোসি বলেছেন, ইরানে নজরদারি ও যাচাই কাজ ফের শুরু করাই তার প্রধান অগ্রাধিকার।
গ্রোসি ইরানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিদর্শন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
আইএইএর প্রতি অবিশ্বাস
মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলার পর, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ করার চুক্তিতে (এনপিটি) এখনও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে দাবি করে ইরান, কিন্তু আইএইএর ওপর গভীর অবিশ্বাস প্রকাশ করেছে।
সংঘাত শুরুর পর থেকে ইরানি কর্মকর্তারা কড়া ভাষায় আইএইএর সমালোচনা করছেন—শুধু হামলার নিন্দা না করা নিয়েই নয়, ১২ জুন সংস্থার একটি প্রস্তাব নিয়েও তাদের ক্ষোভ, যেখানে তেহরানের বিরুদ্ধে পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হয়। এর পরের দিনই ইসরায়েল ইরানের স্থাপনায় হামলা চালায়।
বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান পরমাণু পর্যবেক্ষক এই সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দেন। এর আগেই পার্লামেন্টে এমন একটি বিল পাস হয় এবং দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিল সেটির অনুমোদন দেয়।
গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফ বলেন, 'ইরানের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা' জানিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবর অনুযায়ী, বিলটিতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ না নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ হচ্ছে, ততক্ষণ আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত থাকবে, যার মধ্যে রয়েছে পরমাণু স্থাপনা ও বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা।
আইএইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে ইরান এখনো সহযোগিতা স্থগিতের বিষয়ে জানায়নি। তবে সংস্থার পরিদর্শকরা কবে ইরানে ফিরতে পারবেন, তা অনিশ্চিত।
সোমবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি গ্রোসির পরিদর্শনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, 'পরিদর্শনের অজুহাতে বোমাবিদ্ধস্ত স্থানগুলো পরিদর্শনের বিষয়টি অর্থহীন, এমনকি বিদ্বেষমূলক উদ্দেশ্যপ্রসূতও হতে পারে।'
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরানের তিনটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস অথবা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে দেশটির ৯ টন ইউরেনিয়ামের কী হয়েছে, বিশেষ করে ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ৪০০ কেজির বেশি ইউরেনিয়ামের কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই। যদিও ৬০ শতাংশ মাত্রা অস্ত্র উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি হলেও, তা সরাসরি অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য নয়।