কে এই শরিফ ওসমান হাদি
ইনকিলাব মঞ্চ'-এর মুখপাত্র এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর ২০২৫) জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা একদল দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলিটি হাদির বাম কানের কাছে বিদ্ধ হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্তমানে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই যুবনেতার ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই ঘটনাকে 'অগ্রহণযোগ্য' আখ্যা দিয়ে দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কে এই শরিফ ওসমান হাদি?
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আপোষহীন বক্তব্য এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকার কারণে শরিফ ওসমান হাদি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। বিশেষ করে আন্দোলনের সময় উত্তপ্ত রামপুরা এলাকায় অবস্থান করে রাজপথে তিনি সোচ্চার ছিলেন। অভ্যুত্থানের সবচেয়ে সংকটময় ও উত্তাল দিনগুলোতে নিজের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে তিনি রাজপথে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন, যা প্রতিরোধের প্রতি তার অবিচল অঙ্গীকারের প্রমাণ বহন করে। সে সময় তিনি খুব কাছ থেকে বহু সহিংসতার সাক্ষী হয়েছিলেন।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাদি নিজ জেলা ঝালকাঠিতে ফিরে যান। সেখানে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং স্থানীয় হিন্দু মন্দিরগুলোর সুরক্ষায় মহল্লায় মহল্লায় পাহারা দল গঠন করেন।
পেশাগত ও শিক্ষাজীবন
পেশাগত জীবনে শরিফ ওসমান হাদি দীর্ঘদিন ধরে সাইফুরস কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করছেন। তার দিকনির্দেশনায় অসংখ্য শিক্ষার্থী বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত রয়েছেন।
হাদির পৈতৃক নিবাস ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায়। একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও ইমামের সন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠা হাদি মনে করেন, সত্য বলার সাহস তিনি তার বাবার কাছ থেকেই উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। স্কুল জীবনেই লেখালেখির জন্য তিনি একাধিক জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।
নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। মাদ্রাসার ছাত্র হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে নানা সামাজিক বঞ্চনা ও গৎবাঁধা ধারণার শিকার হতে হয়েছিল। ছাত্রলীগের নিপীড়ন সহ্য করার পাশাপাশি তাকে বারবার 'শিবির' বা 'হেফাজত' তকমাও সইতে হয়েছে বলে জানা যায়।
রাজনৈতিক দর্শন ও ইনকিলাব মঞ্চ
২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতেই হাদি 'ইনকিলাব মঞ্চ' প্রতিষ্ঠা করেন। একটি শোষণমুক্ত সমাজ গড়া এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে আরও জোরদার করাই তার সংগঠনের মূল লক্ষ্য।
কাজের ধরন নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা থাকলেও, হাদি একজন আলোচিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী মনে করেন এমন যেকোনো কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে প্রতিহত করার প্রত্যয় তিনি বারবার ব্যক্ত করেছেন।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল এই তরুণ নেতার। এর আগেই তিনি এই বর্বরোচিত হামলার শিকার হলেন।