নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের জন্য পুলিশের নিরাপত্তা প্রটোকল
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে জোর তৎপরতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, আসন্ন নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল তৈরি করা হয়েছে। এই প্রটোকলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাসস্থান, কার্যালয়, চলাচল, জনসভা এবং সাইবার স্পেসে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে। এছাড়া গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারীর নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
হাদির ওপর হামলায় জড়িতরা শনাক্ত, সীমান্তে রেড অ্যালার্ট
বিবৃতিতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কেও তথ্য দেওয়া হয়। পুলিশ ইতোমধ্যে হামলাকারী ও তাদের সহযোগীদের শনাক্ত করেছে এবং হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের হাতের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) পরীক্ষা করা হচ্ছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, হামলার প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তি 'আইটি ব্যবসায়ী' পরিচয়ে গত কয়েক বছরে একাধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। তার ট্রাভেল হিস্ট্রি বা চলাচলের খতিয়ান থেকে সর্বশেষ গত ২১ জুলাই সিঙ্গাপুর ভ্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন; এমন আরও কয়েকজনকে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
সন্দেহভাজনরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে, সেজন্য শুক্রবার রাতেই দেশের সব ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে তাদের ছবি ও তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে একাধিকবার সন্দেহভাজনদের অবস্থান শনাক্ত করা হলেও তারা বারবার স্থান পরিবর্তন করায় এখনো তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিবিড় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব ও হাসিনাকে ফেরানোর তাগিদ
এদিকে, রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেছে।
ভারতীয় হাইকমিশনারকে জানানো হয়েছে, ভারতে অবস্থান করে পলাতক শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে এবং আসন্ন নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে ক্রমাগত উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি তার দলের সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর নির্দেশনা দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। ভারত সরকারকে অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনা এবং তার সঙ্গে পলাতক সহযোগীদের এসব 'ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী' কর্মকাণ্ড বন্ধ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে শরীফ ওসমান হাদির হত্যাচেষ্টাকারীরা যাতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজনরা ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যেন অবিলম্বে তাদের আটক করে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে—সে বিষয়েও ভারতীয় হাইকমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
