তফসিল ঘোষণার পরদিন এমন ঘটনা মাথায় বাজ পড়ার মতো: ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে সিইসি
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
রোববার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকের শুরুতে তিনি বলেন, 'ঘটনাটি আমার কাছে মনে হয়েছে আমার মাথার ওপর বাজ পড়েছে। আমি আগের দিন তফসিল ঘোষণা করলাম, আর পরের দিনই এমন ঘটনা ঘটল। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।'
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পরপরই এ ধরনের সহিংস ঘটনা নির্বাচনকালীন পরিবেশ নিয়ে জনমনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। নির্বাচন কমিশন বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকেরা জানতে চান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানো হয়েছে। এতে কি প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে ভীতি তৈরি হচ্ছে?
জবাবে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, 'যারা এই কাজ করতে চাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যই ছিল একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করা। এই ভয়কে মোকাবিলা করতেই নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছে এবং 'এটা সাকসেসফুল হতে দেওয়া হবে না।'
নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনার প্রভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর যেকোনো ঘটনা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি অস্বাভাবিক নয়। স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নির্বাচনী পরিবেশে প্রভাব ফেলে—এ বিষয়টি কমিশন আমলে নিচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'আমরা ডেফিনিটলি সন্তুষ্ট বলেই সময়মতো তফসিল ঘোষণা করেছি।'
নির্বাচন কমিশনের অবস্থান স্পষ্ট করে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই। নির্বাচন সময়মতোই হবে। নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টির যেকোনো চেষ্টার বিষয়ে কমিশন ও সরকার উভয়ই অবহিত এবং সতর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি।
আজকের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেওয়া কার্যক্রম নিয়ে কমিশন সন্তুষ্ট হলেও আরও কিছু ক্ষেত্রে জোরদারের প্রয়োজন রয়েছে বলে মত দেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ডিটারেন্স তৈরির জন্য অতিরিক্ত চেকপয়েন্ট বসানো, বাইরে ঘুরে বেড়ানো সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা।
তিনি জানান, 'ডেভিল হান্ট ফেইজ-২' সমন্বিতভাবে চলবে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার এবং সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীর গোয়েন্দা তথ্য সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সীমান্ত অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সাম্প্রতিক প্রবণতার দিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে বলে জানান ইসি সদস্য। এসব ঘটনার সঙ্গে বৃহত্তর কোনো নাশকতার সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ঘটে যাওয়া চোরাগুপ্ত হামলাগুলোর স্বরূপ নিরূপণ করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিহত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক
ওসমান হাদি গত শুক্রবার দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা এখনও অপরিবর্তিত ও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে দলটি।
আজ সকাল ১০টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চ জানায়, ওসমান হাদি এখনও বিপদমুক্ত নন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা শেষ হবে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, 'ওসমান হাদি আগের মতোই কোমায় রয়েছেন। এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। তবে তার শরীর অভ্যন্তরীণভাবে সাড়া দিচ্ছে।'
তিনি আরও জানান, শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
